শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
১২ শ্রাবণ ১৪৩১
জীবনবোধ ও জীবনদর্শন
জুলফিকার নিউটন
প্রকাশ: বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ১২:০০ এএম |

 জীবনবোধ ও জীবনদর্শন

৯৫
ভেনিসের সওদাগর লেখা হয় সম্ভবত ১৫৯৬ সালে; তখনও শেক্সপিয়র নাট্যকার হিসেবে অথবা সামাজিক জীবনে পুরো প্রতিষ্ঠা অর্জন করেননি। ১৫৯৯ সাল থেকে ১৬০৯ সাল-এই সময়ের মধ্যে আমরা তাঁকে দেখতে পাই তাঁর সামর্থ্যরে তুঙ্গে। কল্পনার প্রাচুর্যে, অনুভবের তীক্ষèতায়, চিন্তনের ব্যাপিতায়, নির্ভুল শব্দ-প্রয়োগের নৈপুণ্যে তিনি এই দশ-এগারো বছরে সমকালের সব নাট্যকার এবং কবিকে ছাড়িয়ে গেছেন। বিচিত্রবর্ণ, বহুরূপী, বাক্সিদ্ধ তাঁর কমেডির কৌতুক; অন্যদিকে মানুষের আর্তি-নৈরাশ্যের গভীরতম অন্ধকারে দুঃসাহসিক তাঁর বিচরণ। সহানুভূতির সর্বজ্ঞতায়, বন্ধনমুক্ত উদ্ভাবনায়, নির্ভীক পরীক্ষানিরীক্ষায় এই যুগে তাঁর কৃতি তাঁর নিজের সাহিত্যজীবনেও পূর্বপরহীন এবং এই সময়েই সম্ভবত ১৬০৪ সালে আরেক ভিনদেশী চরিত্র তার নাটকে প্রত্যাবর্তন করে প্রবল সমারহ, নায়কের ভূমিকায় মহা নাট্যকারের অলজ্জ সমর্থনে।
ইংরেজ শেক্সপিয়র-বিশেষজ্ঞরা ওথেলোর গাঢ়কৃষ্ণ গাত্রবর্ণকে কিঞ্চিৎ ফিকে করবার জন্য যতই ব্যস্ত হয়ে থাকুন-না কেন শেক্সপিয়রের এই নাটকের বিভিন্ন দৃশ্যের বর্ণনা থেকে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই যে আমাদের নায়ক ‘আদত নিগ্রো’ (াবৎরঃধনষব হবমৎড়), তার চামড়া ভুসকালো (ংড়ড়ঃু), তার ঠোঁটজোড়া খুব পুর (ঃযরপশ ষরঢ়ং), তার শাদা অচ্ছোদপটলের ঘূর্ণ্যমান গোল চোখ দেখে অন্যরা শঙ্কিত হয়ে ওঠে। কিন্তু তার দেহে রাজবংশের শোণিত প্রবহমান এবং সমরবিদ্যায সে সুপ-িত। এ নাটকেরও সূচনা ভেনিসে-নাটকের নাম ভেনিসের মুর ওথেলো-কিন্তু এ ভেনিস বিপদগ্রস্ত। তুর্কি নৌবাহিনী সাইপ্রাস আক্রমণ করার জন্য এগিয়ে আসছে; এই আগ্রাসন থেকে সাইপ্রাস এবং ভেনিসকে রক্ষা করার জন্য কর্তৃপক্ষ নির্ভর করছে বীর সেনাপতি ওথেলোর উপরে। গোড়া থেকেই বোঝা যায় মুরের প্রতি ভেনিসবাসীদের প্রতিন্যাসে স্ববিরোধ ও অনিশ্চয়তা বিদ্যমান। মুর যে ভিনদেশী, গাত্রবর্ণে এবং মনের গঠনে সে যে ভেনিসবাসীদের কাছে অনাত্মীয় এবং রহস্যময় একথাও যেমন বিঘোষিত, তেমনি তার মতো নির্ভরযোগ্য সমরবিশারদ ব্যক্তিকে তাচ্ছিল্য করাও যে অসম্ভব সেটিও সাধঅরণস্বীকৃত। মুরদের নিগ্রো বলে ভূল করলেও মধ্যযুগে মুরদের গৌরবময় ইতিহাসের কথা ইউরোপ তখনও একেবারে ভুলে যায়নি। শেক্সপিয়রের রচনায় মুর সম্পর্কে দু’ রকমের ছবিই দেখতে পাই। একদিকে টাইটাস অ্যান্ড্রোনিকাস্ নাটকের আরন (“তার আত্মা তার মুখের মতোই কালো”, ৩.১.২০৫); অন্যদিকে ভেনিসের সওদাগরের মরক্কো (“পিশাচের মতো যদি তার গায়ের রং, সাধুসন্তের মতো তার চরিত্র”, ১. ২.১২৩-২৪)। ওথেলোর ক্ষেত্রে নাট্যকারের দ্বিতীয় মনোভাবই আরও স্পষ্ট, আরও হৃদয়গ্রাহীভাবে রূপায়িত। আমাদের নায়ক অবশ্যই কয়লা-কালো এবং দেখতে ভয়ংকর; অন্ধকার, রহস্যাবৃত এক যাদুর দেশ থেকে সে এসেছে; তার অভিজ্ঞতার গল্প অবিশ্বাস্য তবু সম্মোহিনী; কিন্তু সব ছাড়িয়ে ছাপিয়ে প্রবর তার চারিত্রিক আভিজাত্য যার জন্য ভেনিসের সেনেট তাকে বলে “সর্বময় সুপর্যাপ্ত” (ধষষ-রহ-ধষষ ংঁভভপরবহঃ)।
ওথেলোর এই আভিজাত্য ও নায়কোচিত চারিত্র্যের উপরে নাটকটিতে বারবার জোর দেওয়া হয়েছে। যেমন ওথেলোর নিজের আচরণে তেমনি তার সম্পর্কে বিভিন্ন ভেনিসিয়ের উক্তিতে এটি প্রত্যক্ষীভূত। প্রথম অঙ্ক, দ্বিতীয় দৃশ্যে চেঁচামেচি, তলোয়ারের ঝনঝনানি এক কথায় থামিয়ে দিয়ে ওথেলো যখন বলে “কববঢ় ঁঢ় ুড়ঁৎ নৎরমযঃ ংড়িৎফং, ভড়ৎ ঃযব ফবি রিষষ ৎঁংঃ ঃযবস" তখন থেকে তার বিদায়ের শেষ উচ্চারণে আত্মসমীক্ষা পর্যন্ত ("ঃযবহ সঁংঃ ুড়ঁৎ ংঢ়বধশ/ ড়ভ ড়হব ঃযধঃ ষড়াবফ হড়ঃ রিংবষু নঁঃ ঃড়ড় বিষষ") তার অস্তিত্বিক মহত্ত্ব ও সততা প্রশ্নাতীত। এমনকি তার আত্মিক বিপর্যয়ের কুবিন্দুতে যখন সে নেমে এসেছে-জেরা করছে এমিলিয়াকে, ডেসডিমোনাকে গালাগাল দিচ্ছে “ভেনিসের ঝুনো বেশ্যা” (কানিং হোর অব্ ভেনিস) বলে (৪.২)-তখনও আমরা নিশ্চিত যে ইয়োগোর দেওয়া বিষ তাকে উন্মাদ করতে পারে, কিন্তু তার আত্যন্তিক সাধুতাকে কলুষিত করতে পারে না। ডিউকের কাছে সে “বীর ওথেলো”, ক্যাসিও তার “হৃদয়ের উদারতায় মুগ্ধ”, লোডোভিকোর বিচারে তার নৈতিক উৎকর্ষ এমনই সুদৃঢ় যে কোনও দুর্ঘটনাই তাতে আঁচড় কাটতে অক্ষম। আর ডেসডিমোনার কাছে সে তো দেবতাপ্রতিম যার মুখে সে দেখেছে তার আত্মার আলোকশিখা। যে চারিত্রিক মহত্ত্ব নিয়ে ট্র্যাজিক নায়কেরা আবির্ভূত হয় এই কৃষ্ণকায় কাফরীর মধ্যে নাট্যকার তা প্রভূত পরিমাণে সঞ্চারিত করেছেন।
কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে শেক্সপিয়র সচেতন ছিলেন যে ব্যক্তিগত উৎকর্ষ যত খাঁটিই হোক-না কেন, জাতিগত, সংস্কৃতিগত ও কুলগত ব্যবধানকে তার দ্বারা অতিক্রম করা দুঃসাধ্য, হয়তো-বা অসাধ্য। ওথেলোর মনে সন্দেহের বিষ যে এত সহজেই সক্রিয় হতে পারল তার কারণ যদিও ভেনিসের নিরাপত্তার জন্য ওথেলো অপরিহার্য এবং সে কারণে সরকারিভাবে সে সম্মানিত, তবু সে ভেনিসীয় সমাজের একজন নয়, এবং একথা সে নিজেও জানে। শেক্সপিয়র-সমালোচকেরা এদিকে কিন্তু নজর দেননি। যে দু’বার ওথেলোকে তার আচরণের জন্য শাস্তি দেবার প্রশ্ন ওঠে সেই দু’বারই ওথেলো উল্লেখ করে ভেনিসকে সে যে কতখানি সেবার করেছে তার কথা।
My services, which I have done the signiory
Shall outtongue his complaints (I, ii)
I have done the state some service and t;hey Know't (V, ii)
সে ভিন্নদেশি মানুষ বলেই কর্তৃপক্ষকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া দরকার ভেনিস তার কাছে কতটা ঋণী। তুর্কী আগ্রাসনের মুখোমুখি হয়ে ভেনিসের উপরমহল ওথেলো-ডেসডিমোনার বিয়ে ব্যাপারটা মেনে নিতে পারে, কিন্তু সেই উদারতার আড়ালে আছে আর এক ভেনিস যে-ভেনিস ওথেলোকে কখনও নিজের জন বলে স্বীকৃতি দেয়নি। ব্র্যাবানশিও, রডরিগো, ইয়াগো, এমিলিয়ার এই ভেনিসের চোখে ডেসডিমোনার প্রেম নিতান্ত অস্বাভাবিক, “প্রকৃতির সমস্ত নিয়মের বিরুদ্ধে ”, মন্ত্র-তন্ত্র কিংবা ডাকিনী বিদ্যা কিংবা গোপন কোনও শিকড়বাকড় প্রয়োগের দ্বারাই শুধু ডেসডিমোনার এমনতর মতিভ্রম ঘটানো সম্ভব। রডরিগো সহজেই বিশ্বাস করে যে মুরের প্রতি ডেসডিমোনার অনুরাগ টিকবে না, কিছুদিনের মধ্যেই সে উপপতি যোগাড় করে নেবে। এমিলিয়া কৌতুক করে তার স্বামিনীকে অবৈধ প্রেমের পরামর্শ দেয়, রাগ করে বলে: I wish you had never seen him (4.3)|
আর ডেসডিমোনা স্বয়ং? শেক্সপিয়রের নাটকে ভিতরকার সব বাধা অতিক্রম করবার শক্তি রাখে একমাত্র প্রবল, কুলপ্লাবী, অপ্রতিরোধ্য। কিন্তু যাকে ডেসডিমোনা ভালবাসা জুলিয়েটের ভালবাসার মতোই প্রবল, কূলপ্লাবী, অপ্রতিরোধ্য। কিন্তু যাকে ডেসডিমোনা ভালবেসেছে তাকে সে কতটুকুই বা চেনে? ওথেলোর মুখে তার আশ্চর্য জীবনের প্রায় রূপকথার মতো বিচিত্র নানা অভিজ্ঞতার বিবরণ শুনে সে মুগ্ধ-তা থেকেই সে নিজের মনে ওথেলোর একটা রূপ গড়ে নিয়েছে। কিন্তু ওথেলোর চরিত্র তার কাছে এমনই অচেনা যে ওথেলো যখন সন্দেহে, ঈর্ষার আতুর তখনও সে পরম নিশ্চয়তার সঙ্গে এমিলিয়াকে বলে ওথেলোর পক্ষে ঈর্ষা করা অসম্ভব-কারণ যে দেশে ওথেলোর জন্ম সেখানকার সূর্য তার দেহ-মন থেকে ঈর্ষাজাতীয় ‘‘রস’’ (‘হিউমারস’) শুষে নিয়েছে:
The sun where he was horn
Drew all such humours from him. (III, iv)
যদিও ওথেলো তার কাছে প্রায় দেবতার সামিল তা হলেও সে আসলে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে ভেনিসের মানুষদের সঙ্গে। এটি শেক্সপিয়র স্পষ্ট করে দেখিয়েছেন দ্বিতীয় অঙ্ক, প্রথম দৃশ্যে যেখানে সাইপ্রাসের সমুদ্রতীরে মনটানো, ক্যাসিও, ইয়াগো, এমিলিয়া, রডরিগো ইত্যাদির সঙ্গে ডেসডিমোনা অপেক্ষা করছে ওথেলোর জন্যে। এই দৃশ্যে ইয়াগোর সঙ্গে ডেসডিমোনার রঙ্গরসিকতা নিয়ে শেক্সপিয়র-ব্যাখ্যাতাদের মধ্যে অনেকেই বেশ বিব্রত।
ওথেলোর রহস্যময় অতীত ডেসডিমোনাকে মুগ্ধ করেছিল। কিন্তু তার গূঢ়,দূরপ্রসারী অর্থ সে কিছুই বোঝেনি। ফলে ওথেলো যখন তার মায়ের কাছ থেকে পাওয়া মন্ত্রপূত রুমালের গুহ্য অনুষঙ্গ অবরুদ্ধ ক্ষোভে বিবৃত করল-যাদুতে বোনা সেই রুমাল মমিভূত মৃত কুমারীদের বুকের রক্তে রাঙানো-তখন বেচারী ভেনিসনন্দিনী শিউরে উঠে বলল: Then would to God, I had never seen it|  অপরিচিত, আদিম, ভয়ঙ্কর কোনও জগতের গল্প শুনে ভাল লাগা এক জিনিস; কিন্তু সেই জগৎ যখন তার হিম, লোলুপ, অন্ধকার হাত বাড়িয়ে পরিচিত জগৎকে গ্রাস করতে চায় তখন একেবারেই ভিন্ন ব্যাপার। জীবনের শেষ মুহূর্তে ওথেলোকে শাস্তির হাত থেকে বাঁচাবার জন্য ডেসডিমোনা মিথ্যে কথা বলে। তার আনুগত্যের এর চাইতে বড় আর কী প্রমাণ থাকতে পারে। তবু মনে হয় মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে তার প্রাণের কথা প্রকাশ পেয়েছিল তার সামান্য কিছুক্ষণ আগে উচ্চারিত প্রার্থনায়: প্রভু, আমাকে নির্বাসিত করো, আমাকে মেরো না।
O, banish me, my lord, but kill met not. (V, 2)
ডেসডিমোনাকে হত্যা করার পর ওথেলো যে নিজের ভুল বোঝামাত্র আত্মহত্যা করবে, এ বিষয়ে আগাগোড়াই আমরা নিঃসংশয়। কিন্তু ডেসডিমোনা বেঁচে থাকলে এবং ভুল বোঝাবুঝির ফলে ওথেলো আত্মঘাতী হলে এই ভেনিসনন্দিনী যে জুলিয়েটের মতো আত্মহত্যা করবেই এ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া কঠিন।
এই অনিশ্চয়তাকেই কাজে লাগিয়ে ইয়াগো ওথেলোর মনে সন্দেহের বিষ ঢুকিয়ে দেয়। ভেনিস থেকে চলে আসবার সময ব্র্যাবানশিও ওথেলোকে সতর্ক করে দিয়েছিল: এ মেয়ে বাপকে ঠকিয়েছে, তোমাকেও ঠকাতে পারে।
Look to her, Moor, have a quick eye to see:
She has deceived her father, may do thee.
ওথেলো সঙ্গে সঙ্গে জোর গলায় কথাটা উড়িয়ে দেয়। কিন্তু ডেসডিমোনা সম্পর্কে সে কি আদৌ নিশ্চিত হতে পেরেছিল? ডেসডিমোনার আনুগত্য শেষ পর্যন্ত চিড় খায়নি, কিন্তু নাটকের তৃতীয় অঙ্ক তৃতীয় দৃশ্যেই আমরা দেখি ওথেলো কত দ্রুত ডেসডিমোনার উপরে তার আস্থা হারিয়ে ফেলে। ইয়োগোর কথায় তার বিশ্বাস করতে বাধে না যে কোট্শিপ্ পর্বে ক্যাসিও যখন তারই দূত হয়ে ডেসডিমোনার কাছে যাতায়াত করত তখন থেকেই ক্যাসিও ডেসডিমোনার প্রণয়ী; যে ভেনিসে সব মেয়েই স্বামীদের চোখের আড়ালে পরপুরুষের সঙ্গে গুপ্তলীলা করে থাকে; যে ওথেলোর ভীষণ মুখ-চোখ দেখে ভয়ে কাঁপবার সময়েই ডেসডিমোনা তাকে সব চাইতে বেশি ভালবাসত; যে ওথেলোর প্রতি তার অনুরাগ একেবারেই প্রকৃতিবিরুদ্ধ; যে ওথেলোর মধ্যে তার ভেনিসীয় অভ্যাস ও প্রত্যাশার পরিপূরণ না পেয়ে ডেসডিমোনার বিচারবুদ্ধি গোপন পথে তৃপ্তি খুঁজেছে। সামরিক সাফল্য, রাষ্ট্রিক প্রতিষ্ঠা, স্ত্রীর ভালবাসা সত্ত্বেও ওথেলো যে নিজের স্থান সম্পর্কে কত অনিশ্চিত সেটা বোঝা যায় যখন ইয়াগোর কুৎসিত ইঙ্গিতে সে বিমূঢ়ভাবে প্রশ্ন করে: তুমি তাই বলছ? এবং তার পরে ওই দৃশ্যে তার স্বগতোক্তি:
Happly, for I am black
And have not those soft parts of conversation
The chamberers have, or for I am declin’d
Into the vale of years-yet that’s not muchÍ
She’s gone, I am abus’d; and my relief
Must be to loathe her (III, iii, 267-71)
না, ভেনিসীয় সমাজে কখনওই সে নিশ্চয়তা পাবে না-প্রতিষ্ঠা ব্যর্থ, প্রেম ব্যর্থ-তার বিদেশি দশা তাকে চতুর ইয়াগোর ফাঁদের শিকার করেছে।
ওথেলো শেক্সপিয়রের মহত্তম ট্র্যাজিক নায়কদের অন্যতম। এই ভিন্দেশী কৃষ্ণকায় নিগ্রোকে মহিমান্বিত রূপে কল্পনা করে, মৃত্যুহীন ভাষায় তার চারিত্রিক আভিজাত্য এবং আর্তির অনবস্থাকে আকার দিয়ে মহাকবি প্রমাণ রেখে গেছেন সাদা চামড়া মানুষদের বর্ণসংক্রান্ত সংস্কার থেকে তিনি তাঁর চেতনাকে কতখানি মুক্ত করতে পেরেছিলেন। তাঁর জীবনদর্শনের কোনও বিবৃতি আমরা পাইনি বটে, তবু এই নাটকটি থেকে অনুমতি হয় জীবনের অন্তত এই পর্বে তাঁর শিল্পসাধনায় বৈশ্বিক মানবতন্ত্রের বোধ কেলাসিত হয়েছিল। তবু প্রশ্ন জাগে, কল্পনার ঔদার্য সত্ত্বেও তাঁর কল্পিত নায়কের অস্তিত্বের অন্তস্থলে কতদূর পর্যন্ত তার স্রষ্টা যেতে পেরেছিলেন। সংশয় প্রবলতর হয় যখন ওথেলোর পাশে শেক্সপিয়রের অন্য ট্র্যাজিক নায়কদের স্মরণ করি: হ্যামলেট, লিয়ার, ম্যাকবেথ কিংবা অ্যান্টনি অ্যান্ড ক্লিওপ্যাট্রার অ্যান্টনিকে। ওথেলো বিরাট এক ভাস্কর্যপ্রতিম, রাজকীয় তার উপস্থিতি, প্রবল তার ভাবাবেগের প্রকাশ, তবু সে যেন অনেক কম আত্মসচেতন, অনেক কম সূক্ষ্ম, জটিল বা বিচিত্র। মনে হয় শুধু ভেনিসের কাছে নয়, শুধু ডেসডিমোনার কাছে নয়, হয়তো-বা তার স্রষ্টার কাছেও ওথেলো অনাত্মীয়, বিদেশি। যে নিহিত প্রাক্তন পাতাল থেকে তার প্যাশন বিস্ফোরিত সেখানে কোনও ইউরোপীয়ের পক্ষে যতই না তাঁর মন আলোকিত, তাঁর অনুভূতি উদার হোক-প্রবেশ হয়তো-বা অসাধ্য। তার যন্ত্রণায় আমরা সকলেই বিমথিত হই, কিন্তু যখন সেই দীপালোকিত শয়নকক্ষে তুষারশুভ্র, অ্যালাবাস্টার-মসৃণ তনুর দিকে চেয়ে প্রায়োন্মাদ, বিকরাল, তমিস্র, প্রবীণ পুরুষ আর্তকণ্ঠে স্বগতোক্তি করে:

It is the cause, it is the cause, my soul;
Let me not name it to you, you chaste stars!
তখন স্বয়ং শেক্সপিয়র ই কি বুঝেছিলেন তার কল্পিত কৃষ্ণনায়ক তাঁকে এবং আমাদের কে কি বলতে চাইছে?












সর্বশেষ সংবাদ
শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি
অপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করুন : প্রধানমন্ত্রী
গ্রেপ্তার বাড়ছে কুমিল্লায়
চিরচেনা রূপে অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
আহতদের চিকিৎসা ও রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
শিক্ষার্থীদের আমি রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
কুমিল্লায় আট মামলায় গ্রেপ্তার দেড় শতাধিক
আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
অফিসে হামলার সময় চেয়ে চেয়ে দেখলেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আন্দালিভ রহমান পার্থ ৫ দিনের রিমান্ডে
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft