কাগজে-কলমে
দেশের ফুটবলে দুই বড় শক্তি বসুন্ধরা কিংস ও আবাহনী লিমিটেড। এই দুই দলের
লড়াই হওয়ার কথা রীতিমতো আগুনঝরানো। কিন্তু দিন দিন কিংস-আবাহনী লড়াইটা হয়ে
উঠছে একপেশে।
গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে ফেডারেশন কাপের
দ্বিতীয় সেমিফাইনালটাও হলো অনেকটা তেমনই। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দূরে থাক,
কিংসকে চ্যালেঞ্জই জানাতে পারেনি আবাহনী। দুই ব্রাজিলিয়ান রবসন দা সিলভা ও
দরিয়েলতন গোমেজ এবং বদলি মোহাম্মদ ইব্রাহিমের গোলে আকাশি-নীলদের ৩-০ গোলে
হারিয়ে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে উঠেছে কিংস। শিরোপার লড়াইয়ে তাঁদের
প্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান।
অথচ ম্যাচটা জমজমাট লড়াই দিয়ে শুরু করেছিল
আবাহনী। প্রথম ২০ মিনিটের খেলা দেখে মনে হচ্ছিল, গোপালগঞ্জে আজ দারুণ একটা
ম্যাচই উপভোগ করতে যাচ্ছেন দর্শকেরা। এ সময়ে দুটি গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল
আবাহনী। কিংসের সীমানায় বলের দখলও ছিল তাদের কাছেই। কিন্তু একটি
প্রতি-আক্রমণে রাকিবের পাস থেকে রবসনের গোল ম্যাচের ছবিটাই পাল্টে দেয়।
রবসন
যে গোলটি করলেন, সেটির শুরুটা ছিল অনেক পেছন থেকে। আবাহনীর অধিনায়ক রহমত
মিয়ার একটি ভুল পাস ধরে আরেক ব্রাজিলিয়ান মিগুয়েল দামাসেনো লম্বা থ্রু
বাড়ান ডান দিকে রাকিবের প্রতি। রাকিব বল নিয়ে ধরে এগিয়ে কাটব্যাক করেছিলেন
আবাহনীর বক্সে। সেখানে বলটা খুঁজে নেন রবসন। তাঁর পোস্ট-ঘেঁষা শটে গোলকিপার
শহীদুল আলমের কিছুই করার ছিল না।
আজ আবাহনী জামাল ভূঁইয়াকে শুরুর
একাদশে রেখেছিল। তিনি খুব মন্দও খেলেননি শুরুর দিকে। ১৭ মিনিটে তাঁর কর্নার
থেকেই মিলাদ শেখের হেড কিংস গোলকিপার মেহেদী হাসান ধরে ফেলেছিলেন। কিন্তু
এরপর জামালকে মাঠে আর খুব বেশি খুঁজে পাওয়া যায়নি। মধ্যমাঠে পাপন সিং
মোটামুটি পরিশ্রম করে খেলেছেন। আবাহনীর ব্রাজিলিয়ান জোনাথন ফার্নান্দেজ
একাই লড়েছেন। আরেক ব্রাজিলিয়ান ওয়াশিংটন পুরো ম্যাচজুড়ে এলোমেলো কয়েকটা দৌড়
ছাড়া তেমন কিছু করতে পারেননি। মোহাম্মদ হৃদয়ও তেমন সুবিধা করতে পারেননি।
আবাহনীর বক্স টু বক্স ফরোয়ার্ড কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্ট আজ সেভাবে বলের জোগান
পাননি। নিজে চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সফল হননি।
দ্বিতীয়ার্ধে আবাহনীর খেলা
কেমন যেন ঝুলে গেল। অথচ কিংস মাত্র ১-০ গোলেই এগিয়ে ছিল। আকাশি-নীলদের
খেলা দেখে কখনোই মনে হয়নি, কিংসকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম তারা। দ্বিতীয়
গোলটি কিংস পায় আবাহনী ডিফেন্ডারদের ভুলে। বাঁ প্রান্ত দিয়ে রবসনের একটি
আক্রমণ আবাহনীর ডিফেন্ডার প্রতিরোধ করলেও বলটা কোনো বাধা ছাড়াই চলে যায়
মাঠের ডান দিকে। সেখানে কোনো চ্যালেঞ্জ ছাড়াই রাকিব বলটা ধরে বক্সের মধ্যে
যে ক্রসটি করেন, তাতে হেড করে গোল করতে মোটেও ভুল হয়নি দরিয়েলতন গোমেজের।
রাকিবের ক্রসটা যখন বাতাসে, তখনো আবাহনীর কোনো ডিফেন্ডারকে সেভাবে লাফাতে
দেখা যায়নি।
দুই গোলে পিছিয়ে আবাহনী শুধু হারের অপেক্ষাই করেছে। যোগ করা
সময়ে মোহাম্মদ ইব্রাহিম স্কোরশিটে নাম তোলেন খুব সহজেই। কিংসের এই তৃতীয়
গোলকে অনেকটাই আজকের ম্যাচের প্রতীকী রূপ বলা যেতে পারে। বাঁ প্রান্ত থেকে
আবাহনীর পোস্টে রবসনের সরাসরি একটি শট গোলকিপার শহীদুল ঠেকালেও ফিরতি বলটি
ক্লিয়ার করতে দেখা যায়নি আবাহনীর কোনো ডিফেন্ডারকেই। অনেকটা দৌড়ে এসে বদলি
খেলোয়াড় ইব্রাহিম বলটা জালে ঠেলে দেন। আলমগীর মোল্লা ইব্রাহিমের পেছনে ঠাঁয়
দাঁড়িয়ে দেখেছেন গোলটি।
গত মৌসুমে এই গোপালগঞ্জেই মোহামেডানের কাছে
হেরে ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল কিংস। ফাইনালে
আবাহনী-মোহামেডান লড়াইটা ছিল রীতিমতো ‘ক্লাসিক’ই। ৪-৪ গোলে অমীমাংসিত ম্যাচ
মোহামেডান টাইব্রেকারে জিতে ১৪ বছর পর ঘরে তুলেছিল ফেডারেশন কাপ। এবার
ফাইনালে মোহামেডান আছে, তবে তাদের লড়াইয়ের সঙ্গী বদলে গেছে। গত বছর
সেমিফাইনালের হার নিশ্চয়ই মনে রেখেছে কিংস। ২২ মে ময়মনসিংহের রফিকউদ্দিন
ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে ফাইনালে মোহামেডানের সঙ্গে সেই হিসাব মিটিয়ে নিতে চাইবে
পাঁচবারের লিগ চ্যাম্পিয়নরা।