![তামাকজনিত কারণে মৃত্যু ঠেকাতে হবে]( https://www.comillarkagoj.com:443/2024/05/12/CK_1715454427.jpg)
ধুমপানে
বিষপান। তামাক ব্যবহারে ঘাতকব্যাধি ক্যান্সার ও হৃদরোগে প্রভাবান্বিত হয়ে
অনেক লোক মৃত্যুবরণ করেন এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ আছে বলে জানা নাই। সামাজিক
সংগঠন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর
হেলথ এন্ড ওয়েলবিং আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন প্রধান অতিথি জনাব ডাঃ আবু সালেহ
বলেন, তামাকজাত পণ্য থেকে সরকার ২২ হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স পায়। কিন্তু
ক্ষতি হয় বছরে ৩০ কোটি টাকার উপরে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন
সাংবাদিকদের জানান প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ তামাকে আসক্ত। তাদের মধ্যে
প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার লোকের মৃত্যু হয় এবং বছরে
তামাকের পরোক্ষ ক্ষতির শিকার হয় ৬১ হাজার শিশু। এছাড়া কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক
প্লেইস ও গণপরিবহণে পরোক্ষ ধুমপানের শিকার হন আরও ৩ কোটি ৮৪ লাখ মানুষ।
ধুমপান ভাল জিনিস নয় তারপরও মানুষ এটাকে ছাড়ছে না।
বাংলাদেশের
জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত সাউথ
এশিয়ান স্পিকার্স সামিটে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা
দিয়েছেন। সঙ্গে তিনি তিনটি বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছেÑ
স্বাস্থ্য উন্নয়ন সার চার্জ ব্যবহার করে একটি তহবিল গঠন করা, যা দিয়ে
দেশব্যাপী জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে, তামাকের উপর
বর্তমান শুল্ক কাঠামো সহজ করে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্কনীতি গ্রহণ করে
দেশে তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার হ্রাস করা এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন
বাস্তবায়নের সব ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া ও এসডিজি বাস্তবায়নের অধিকারের
সঙ্গে মিল রেখে আইনগুলো বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসির সঙ্গে
সামঞ্জস্যপূর্ণ করা। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন বলেন, তামাকচাষ
সরকারিভাবে নিরুৎসাহিত করে অন্য ফসলে চাষীদের উৎসাহ দিতে হবে। তামাকজাত
পণ্যের প্যাকেটে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ
করার দাবি করে আরও বলেন, বিশে^ তামাকজনিত রোগে বছরে প্রায় ৮০ লাখের বেশি
মৃত্যু হয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত।
বিদ্যমান ধুমপান ও তামাকজাতীয় দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (২০১৩
সালে সংশোধিত) যোগোপযোগী করে বৈশি^ক মানদন্ডে করার দাবী জানিয়েছে স্বাস্থ্য
সুরক্ষা ফাউন্ডেশন। বক্তারা বলেন, দেশে বিদ্যমান তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ
আইনে কিছু দুর্বলতা রয়ে গেছে। যা তামাকের ছোবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারে
না। তাই এ মৃত্যুর মিছিল কমাতে দ্রুত বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন
করে যুগোপযোগী করা দরকার।
সার্বিক আলোচনায় ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্য
ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ যুগোপযোগী করে বৈশি^ক মানদন্ডে উন্নীত করতে
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন ৬ দফা সুপারিশ করেছেন। এগুলো হচ্ছে-
১। পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ধুমপানে নির্দিষ্ট স্থান বন্ধ করা
২। বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা
৩। তামাক কোম্পানীর যেকোন সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচী নিষিদ্ধ করা
৪। তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/ কৌটায় সতর্কতার বার্তার আকার আরও বড় করা
৫। বিড়ি-সিগারেট খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন ও খোলা ধোয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা
৬। ই-সিগারেটসহ সব ইমার্জিং টোবাকো প্রডাক্টস পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।
বর্তমান
আইনে নির্দেশিত একটি এলাকায় ধুমপান করতে দেয়া হয়। সকল এলাকায় যেমন
বিশ^বিদ্যালয়, কলেজ, এয়ারপোর্ট এলাকায় ধুমপানের স্থানটি বন্ধ করে স্থানটিকে
অন্য ভালকাজ যেমন- ব্রেষ্ট ফিডিং সেন্টার বা রিফ্রেসমেন্ট রুম করা যেতে
পারে। তামাক চাষের বদলে কৃষকদের অন্য ফসল বিশেষ করে ভূট্টা চাষে আগ্রহ
সৃষ্টি করা যায়। তামাক কোম্পানীগুলো যেন তামাক চাষে কৃষকদের উৎসাহিত না
করতে পারে সে ব্যাপারে কড়া নজর রাখা প্রয়োজন। সর্বোপরি বিদ্যমান আইন
সংশোধন করে যুগোপযোগী করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও ন্যাশনাল
বোর্ড অব রেভিনিউর সক্রিয় নজরদারি একান্ত প্রয়োজন।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ