নিজস্ব
প্রতিবেদক: আগে থেকেই নানা উৎকণ্ঠায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো
মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে। কেন্দ্র দখল আর সমর্থকদের স্বাভাবিক
নির্বাচনি কাজে বাঁধা প্রদানের শঙ্কা জানিয়ে বারবার অভিযোগ করে আসছিলেন
চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ
সম্পাদক জাকির হোসেন। অবেশে তার সেই আশঙ্কার চিত্রই দেখা গেছে গতকাল
মঙ্গলবার মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে। ভোটের দিন সকাল থেকে
শুরু করে আধাবেলা পর্যন্ত কোন কোন কেন্দ্রে ভোট পরেনি বিশটিও। একজন দু’জন
করে ভোটার আসলেও সারাদিনই ভোটারশূণ্য দেখা গেছে বেশিরভাগ কেন্দ্র। লাইন ধরে
ভোট প্রদানের যে স্বাভাবিক চিত্র- তা মনোহরগঞ্জ উপজেলার কোন কেন্দ্রেই
তেমন চোখে পড়েনি। তারপরও ফলাফলে দেখা গেছে, উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত
হওয়া আব্দুল মান্নান চৌধুরী ঘোড়া প্রতীকে পেয়েছেন ৭৭ হাজার ১১ ভোট। তার
নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ
সম্পাদক আনারস প্রতীকের প্রার্থী জাকির হোসেন পেয়েছেন মাত্র ১১ হাজার ৬শ ১৭
ভোট। উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই নেতাকে দেখা গেছে, তিনি সারাদিনই
বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে তার ফেসবুক লাইভে এসে অভিযোগ করে বলছেন- কোথাও কোন
ভোটার নেই, কোথাও কোন আনারসের এজেন্ট নেই। ভোটার এবং এজেন্টদের কেন্দ্রে
আসতে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। অন্তত তিনবার ফেসবুক লাইভে এসে জাকির হোসেন এসব
অভিযোগ তুলে জানান, একটি প্রভাবশালী চক্র চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগের একজন
ত্যাগী নেতাকে ফেল করাতে উঠে পড়ে লেগেছেন। শেষমেশ তিনি সাংবাদিকদের ডেকে
মনোহরগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন বর্জন করে পুনরায় নির্বাচনের
দাবি জানান। এমনকি নির্বাচন নিয়ে হাইকোর্টে যাওয়ারও কথা জানান তিনি।
জাকির
হোসেন জানান, ভোট শুরুর পর আমি অন্তত ৩০টি কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করে আমার
কোনো এজেন্ট দেখতে পাইনি। তাদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ভোটের
আগেরদিন রাত থেকেই আমার সমর্থক ও ভোটাররা অভিযোগ জানিয়ে আসছেন, তাদেরকে
ভোট দিতে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে। আমার কয়েকজন কর্মীকে মারধর করা হয়েছে।
লক্ষণপুর এলাকার কামাল (এলজিআরডি মন্ত্রীর ‘উন্নয়ন সমন্বয়কারী কামাল হোসেন)
আমার প্রতিদ্বন্দ্বি ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী আবদুল মান্নান চৌধুরীর পক্ষে
টাকা বিতরণ করেছে। এসময় সে বিভিন্ন এলাকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের
বলেছে, যদি তোমাদের কেন্দ্রে মান্নান চৌধুরী পাশ না করে তাহলে তোমরা মামলা
খাইবা এবং পদপদবী থাকবে না। ভোটের দিনও সে প্রভাব বিস্তার করেছে। আমার
ভোটারদেরকে কেন্দ্রে আসতে বাধা দিয়েছে।
এদিকে মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ
নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজালা রাণী
চাকমা জানান, ৮০টি ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণের মাধ্যমে অবাধ,
সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কোন
কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোন ঘটনা ঘটেনি। জাল ভোট প্রদানের
সময়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জুলেখা আক্তার নামে এক মহিলাকে ৬ মাসের
কারাদ- এবং মাইন উদ্দিন (মামুন) ও মোঃ ফয়েজ নামে দুই জনকে ২ বছর করে কারাদ-
প্রদান করেছেন। এছাড়া খোরশেদ নামে এক ব্যক্তিকে ১০ হাজার টাকা এবং রাসেল
উদ্দিন ও জাফর আহমেদ নামে আরো দুইজনকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
পুনরায় ভোটের দাবি বর্তমান চেয়ারম্যানের:
এদিকে ভোটের দিন দুপুরে
স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর ‘উন্নয়ন সমন্বয়কারীর’ বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারসহ
বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান
প্রার্থী, বর্তমান চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
জাকির হোসেন নির্বাচন বর্জন করে পুনঃনির্বাচন দাবি করেছেন। এই নির্বাচনে
তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোট কেন্দ্রে এজেন্ট ঢুকতে
না দেওয়া, আগের রাতে কর্মীদের মারধর, ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের আসতে না দেওয়ার
অভিযোগ এনে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানান।
বুধবার দুপুরে মনোহরগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্স ভবনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ
সম্মেলনে তিনি এই ঘোষণা দেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ভাইস
চেয়ারম্যান প্রার্থী বিলকিছ আক্তার।
এসময় তিনি এ উপজেলায় পুনরায় ভোটগ্রহণের দাবি জানান এবং নির্বাচনের বিরুদ্ধে আদালতে রিট পিটিশন করারও ঘোষণা দেন।
জাকির
হোসেন বলেন, ঘোড়া প্রতীকের অপর চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে এলজিআরডি
মন্ত্রীর 'উন্নয়ন সমন্বয়কারী' কামাল হোসেন গত দুই সপ্তাহ ধরে আমার কর্মীদের
মারধর ও হেনস্থা করে আসছে। আজকে ভোটের দিনেও তারা বেশিরভাগ কেন্দ্রে আমার
এজেন্টকে ঢুকতে দেয় নাই। আমার ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দিয়েছে। আমি এর
তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছি। তিনি অভিযোগ
করেন এখানে প্রকৃত ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতারা বঞ্চিত হচ্ছে। এখন যারা
লুটেপুটে খাচ্ছে তারা দলের দুঃসময়ের পাশে ছিল না। আর দলের দুঃসময়ে যারা হাল
ধরেছিল, তারা এখন পদে পদে বঞ্চিত। মনোহরগঞ্জে এই আওয়ামী লীগকে আমি দাঁড়
করিয়েছি। অথচ আমার বিরুদ্ধে অবিচার করা হচ্ছে।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনজন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুই জন এবং
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুই জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বিভিন্ন নিয়ম
অভিযোগের মধ্যেই সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ
অনুষ্ঠিত হয়।