আধুনিক রাষ্ট্রের নাগরিকের পাঁচ মৌলিক
অধিকারের একটি খাদ্যের অধিকার। নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা এর মধ্যেই পড়ে।
কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে এই অধিকার বিভিন্নভাবে ক্ষুণœ হচ্ছে। উৎপাদন,
সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের বিভিন্ন ধাপে খাদ্যদ্রব্যে নানা ধরনের রাসায়নিক
ব্যবহার করা হয়।
যথাযথ পরিমাণে ব্যবহার করা হয় না বলে তা ক্ষতিকারক।
খাদ্যদ্রব্যে উৎপাদন পর্যায়ে কীটনাশক বা বালাইনাশক, সংরক্ষণ পর্যায়ে
পচনরোধক এবং প্রক্রিয়াকরণের পর্যায়ে পুষ্টিবর্ধক ও স্থায়িত্ববর্ধক হিসেবে
এসব রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। দিন দিন এসবের ব্যবহার বাড়ছে। তৈরি হচ্ছে
স্বাস্থ্যঝুঁকি।
বাদ যাচ্ছে না ফলমূলও। বিশেষ করে হাসপাতালের পাশে গড়ে ওঠা ফলমূলের দোকানের পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পত্রিকান্তরে
প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, হাসপাতালের আশপাশ থেকে সংগৃহীত ফল থেকে যে ২৭
ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ হচ্ছে, তার ৪৮ শতাংশ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী।
ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা শেষে দেখা গেছে, মোট ২৭টি নমুনার সব কটিতেই রোগ তৈরি
করার মতো জীবাণু পাওয়া গেছে।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে আফ্রিকান জার্নাল অব
মাইক্রোবায়োলজি রিসার্চে প্রকাশিত গবেষণায় এই ভয়ংকর তথ্য এসেছে।
গবেষণাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর
পর্যন্ত ঢাকা মেডিক্যালের আশপাশের বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হওয়া ফল সংগ্রহ
করা হয়। এসব ফল পানিতে ধুয়ে সেই পানি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য দেওয়া হয়।
এভাবে মোট ৩৫ বার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এমনিতেই হাসপাতালে প্রচুর
রোগজীবাণু থাকে।
এখানে চিকিৎসক-নার্স, ওয়ার্ড বয়, রোগী, রোগীর স্বজনসহ
প্রত্যেকে বিভিন্নভাবে জীবাণু ছড়াচ্ছে। একজন রোগীর জীবাণু দ্বারা আরেকজন
সংক্রমিত হচ্ছে। বাইরে থেকে আসা রোগীর স্বজনদের হাতের স্পর্শ কিংবা
শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমেও অন্য জীবাণুর সংক্রমণ হচ্ছে। আবার রোগী দেখতে
আসা অনেকেই হাসপাতালের বাইরে থেকে ফলমূল কিনে থাকে। সেই ফলমূলেও যদি রোগের
জীবাণু থাকে, বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণু, তাহলে?
হাসপাতালে
ভর্তির ৭২ ঘণ্টা পর রোগীদের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, তারা এক ধরনের
জীবাণু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর অন্য জীবাণু দ্বারা নতুন করে
সংক্রমিত হচ্ছে। এতে একদিকে রোগীদের সুস্থ হতে বেশি সময় লাগছে, অন্যদিকে
চিকিৎসা খরচ ও মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাচ্ছে। কাজেই আমাদের সতর্ক হতে
হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।