![বিপন্ন উপকূল]( https://www.comillarkagoj.com:443/2024/04/02/CK_1711998294.jpg)
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে
অন্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলও হুমকির সম্মুখীন। ক্রমেই
বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। সাগরের নোনা পানি ক্রমেই দেশের অভ্যন্তরে
প্রবেশ করছে। ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসে তো বটেই, অমাবস্যা-পূর্ণিমার একটু
অস্বাভাবিক জোয়ারেও তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা।
অতিরিক্ত লবণাক্ততার
কারণে ব্যাহত হয় ফসল উৎপাদন। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা, শুষ্ক মৌসুমে
লবণাক্ততা এবং স্বাদু বা মিঠা পানির অভাবে উপকূলের বেশির ভাগ জমি এখন পতিত
থাকছে। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় চার কোটি মানুষের জীবন ক্রমেই বেশি করে
হুমকিতে পড়ছে। বাড়ছে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা।
শুধু উপকূল নয়,
লবণাক্ততার বিপদ ক্রমেই ধেয়ে আসছে দেশের মধ্যাঞ্চলেও। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে
মিঠা পানির প্রবাহ কমে আসায় সাগরের নোনা পানি যেমন নদী দিয়ে ভেতরে ঢুকছে,
তেমনি ভূগর্ভে পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামতে থাকায়ও নোনা পানির অনুপ্রবেশ
বাড়ছে। এর ফলে শুধু চাষাবাদই ব্যাহত হচ্ছে না, উদ্ভিদ এবং প্রাণিজগতেও পড়ছে
তার ক্ষতিকর প্রভাব। উপকূলীয় এলাকায় মিঠা পানি নির্ভর গাছের সংখ্যা ক্রমেই
কমছে।
এমনকি কিছুটা নোনা পানি সহিষ্ণু হওয়া সত্ত্বেও নারকেল, সুপারি
গাছ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কমছে মিঠা পানি নির্ভর মাছ ও অন্যান্য জলজ
প্রাণীর সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন
বিশেষজ্ঞ ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত পুরনো আশঙ্কার কথাটি নতুনভাবে তুলে
ধরেছেন। শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, অদূর ভবিষ্যতে
খুলনা-সাতক্ষীরা সমুদ্রের অংশ হয়ে যাবে। রাজশাহী থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে
আশুগঞ্জ পর্যন্ত নোনা পানি চলে আসবে। এমনকি ঢাকা শহরের চারপাশও লবণাক্ত হয়ে
যাবে।
বাংলাদেশে ক্রমেই বেশি করে ভূমি লবণাক্ততার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত
হচ্ছে। মৃত্তিকাসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) এক জরিপে দেখা যায়,
১৯৭৩ সাল থেকে বাংলাদেশে লবণাক্ত ভূমির পরিমাণ ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। কপ২৭
সম্মেলনে ‘ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্ল্যান অব বাংলাদেশ (২০২৩-২০৫০)’ শীর্ষক
যে প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ উপস্থাপন করেছিল, তাতেও বলা হয়েছিল, দেশের উপকূলীয়
১৯ জেলার আবাদযোগ্য জমির প্রায় অর্ধেকই লবণাক্ততার শিকার হয়েছে। প্রতিনিয়ত
বাড়ছে লবণাক্ততায় আক্রান্ত জমির পরিমাণ। লবণাক্ততার মারাত্মক বিরূপ প্রভাব
পড়ছে উপকূলীয় মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও। ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং
সেন্টারের তথ্য মতে, বছরে সাত লাখ মানুষ উদ্বাস্তুজীবন বেছে নিতে বাধ্য
হচ্ছে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের
প্রচেষ্টার অগ্রগতি কতটুকু?
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় আমাদের
আরো তৎপর হতে হবে। নোনা পানি ও খরাসহিষ্ণু কৃষি গবেষণা এগিয়ে নিতে হবে।
উপকূলীয় বেড়িবাঁধ শক্তিশালী করে ফসল ও উপকূলীয় জনজীবন রক্ষা করতে হবে।