অনুবাদকঃ
মোঃ রেজওয়ান হোসেন
লেখক পরিচিতি
ডোরোথি পার্কার (১৮৯৩-১৯৬৭) একজন বিখ্যাত মার্কিন লেখিকা, যিনি তাঁর তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও ব্যঙ্গাত্মক রচনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। সমাজের দোষত্রুটি, প্রেম-ঘৃণা, এবং নিউ ইয়র্কের সমাজজীবন তাঁর রচনার প্রধান বিষয় ছিল । তিনি আলগোরিয়া নামক বিখ্যাত লেখকদের গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন। নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিনে তাঁর স্বতন্ত্র লেখালেখির মাধ্যমে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর কবিতা, গল্প ও নাটকগুলো প্রেম, বিচ্ছেদ, একাকীত্ব এবং সমাজের দ্বিমুখী চরিত্রগুলোকে ফুটিয়ে তোলে। পার্কারের সবচেয়ে বিখ্যাত কীর্তি হলো "ইঁংরহবংং ডব উড় অষষ উধু খড়হম" কবিতাটি। এই কবিতায় তিনি অফিসের একঘন জীবন ও কর্মীদের মধ্যেকার কৃত্রিম সম্পর্কের ছবি এঁকেছেন। তাঁর আরেকটি বিখ্যাত গল্পের সংকলন "ঞযব চড়ৎঃধনষব উড়ৎড়ঃযু চধৎশবৎ" মার্কিন সাহিত্যে একটি মাইলস্টোন হিসেবে বিবেচিত হয়। এই সংকলনে "ঔঁংঃ খরশব ণড়ঁ" এবং "ইরম ইষড়হফব" সহ কয়েকটি চমৎকার গল্প রয়েছে, যেখানে তিনি রোমান্টিক সম্পর্কের জটিলতা ও বিরক্তিকর সামাজিক মেলামেশাকে তুলে ধরেছেন।
অপেক্ষার অনুরণন
ডোরোথি পার্কার
হে ঈশ্বর! সে যেন আমাকে এখনই ফোন করে । হে ঈশ্বর, এমন কিছু করুন যেন সে আমাকে এই মুহূর্তেই ফোন করে। আমি তোমার কাছে আর কিছুই চাইবো না; কসম তোমার! আমি সত্যিই কিছু চাইবো না। আমি তো খুব বেশি কিছু চাইছি না ! তোমার অসীম ক্ষমতা অক্ষে এটা কিছুই না। শুধু এমন কিছু করো যেন সে নিজ থেকেই আমাকে ফোন করে; একটাবারের জন্য যেন তার কলটি বেজে ওঠে। রহম করো, হে ঈশ্বর, রহম করো... আমার উপর দয়া করো... দয়া করো!
আমি যদি পাগলপ্রায় হয়ে তার ফোনকলের আশায় বসে না থাকতাম, তবে সম্ভবত এতক্ষণে ফোনটি বেজেই উঠতো; আর আমার অপেক্ষার পালা শেষ হতো। মাঝে মাঝে তো এমন হয়! আমরা যা প্রত্যাশা করি তা আমাদের ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেয়। এটি যেন প্রকৃতিরই নিয়ম! অপেক্ষার মাত্রা যত অধীর, পূর্ণতার মাত্রা তত ধীর। ইশ আমি যদি এসব ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারতাম ! তাকে ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে ব্যাস্ত থাকতে পারতাম !
আচ্ছা! আমি যদি এক থেকে পাঁচশো ক্রমিকভাবে পর পর পাঁচবার গণনা করি, ততক্ষণে সম্ভবত তার কলে ফোনটি বেজে উঠবে। আমি খুব ধীরে ধীরে গণনা করবো। গুনতে গিয়ে ফাঁকি দিবো না; তাড়াহুড়োও করবো না। যদি পাঁচশো পর্যন্ত গুনতে গিয়ে তিনশ পর্যন্ত গণনার পরপরই ফোনটি বেজে ওঠে, তবুও আমি পাঁচবার পাঁচশো পর্যন্ত গণনার আগ পর্যন্ত থামবো না। শুরু করা যাক !
পাঁচ...দশ...পনেরো...বিশ...পঁচিশ...ত্রিশ...পঁয়ত্রিশ...চল্লিশ... পঁয়তাল্লিশ...পঞ্চাশ... ইয়া খোদা! আর কত! দোহাই তোমার! আমার উপর রহম করো। তার কলে ফোনটি বাজতে দাও...।
আমি এই শেষবারের ঘড়ির দিকে তাকাবো। আর দেখব না। সাতটা বেজে দশ মিনিট। উনি বলেছিলেন, পাঁচটায় টেলিফোন করবেন । "আমি তোমাকে পাঁচটায় ফোন করব, প্রিয়তম।" আমি নিশ্চিত - উনি আমাকে এভাবেই আদুরে ভঙ্গিতে "প্রিয়তম” বলে ডেকেছিলেন । একবার নয়; বরং দু-দুইবার এতো আদুরে ভঙ্গিতে ডেকেছিলেন উনি । উনি যখন ফোন রাখতে চেয়েছিলেন, কলটি রাখার আগে গুড-বাই বলেছিলেন । "গুড-বাই, প্রিয়তমা।" যিনি অফিসে অনেক বেশি ব্যাস্ত থাকেন এবং বেশি কিছু বলতে পারেন না, তবুও তিনি আমাকে দু-দুইবার "প্রিয়তম" বলে ডাকলেন ! আশ্চর্য !
আমি যদি এখন তাকে ফোন করি, তিনি বিব্রতবোধ করতে পারেন। আমি জানি, অফিস চলাকালীন সময়ে আমার তাকে ফোন করা উচিত নয় -- আমি জানি, তিনি এটা পছন্দ করবেন না। তবুও যদি সেই সময়ে তাকে ফোন করা হয়, যখন তিনি তার দাপ্তরিক কাজে এতোটাই ব্যাস্ত থাকবেন যে ঠিকভাবে প্রতিউত্তর করবেন না; এটি আপনার প্রতি তার মনে বিরক্তির উদ্বেগ সৃষ্টি করবে। সেদিন আমি শুধুমাত্র তার গলা শোনার জন্য ফোন দিয়েছিলাম যেহেতু আমার তার সাথে শেষ তিনদিনে একটা বারের জন্যও কথা হয় নি, আমি নিজের মাঝে তার শুন্যতা বোধ করছিলাম । তাকে শোনার আকাঙ্খা আমাকে কাতর করছিল। আমি শুধু তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম - সে কেমন ছিল? কেউ যে এটা জানার জন্য তাকে কল করতে পারে, তিনি এটা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। বিরক্ত করছিলাম কিনা জিজ্ঞেস করতেই, উনি বলেছিলেন "না, অবশ্যই নয়, প্রিয়তমা !” এবং তিনি আমাকে ফোন করবে বলেছিল। আগ বাড়িয়ে ফোনের জন্য তাকে বলতে হয়নি। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করিনি; সত্যিই আমি করিনি। আমি নিশ্চিত, আমি করিনি। আমি কল্পনাও করি না, তিনি বলবেন যে - তিনি আমাকে ফোন করবেন। কিন্তু তিনি বলেছিলেন। তিনি সত্যিই বলেছিলেন।
হে ঈশ্বর, ওনাকে এটা করতে দিও না। ওনার ফোন কলের আমার দরকার নাই। উনি ফোন না করুক আমায়।
"আমি তোমাকে পাঁচটায় ফোন করব, প্রিয়তম।" "গুড-বাই, প্রিয়তম।' তিনি ব্যস্ত ছিলেন, এবং তিনি তাড়াহুড়ো করেছিলেন, এবং তার চারপাশে লোকজন ছিল। এতোকিছুর মধ্যেও কিন্তু তিনি আমাকে দু'বার "প্রিয়তম" বলে ডেকেছিলেন। ওটা আমার, ওই ডাকটা নিতান্তই আমার। আমি যদি ওনাকে আর নাও দেখতে পাই, তবুও উনি আমার । কিন্তু এত কম সময়ের ডাকে আমার পোষাবে কি ! এটা যথেষ্ট নয়। কিছুই যথেষ্ট নয়, যদি আমি তাকে আর কখনো না দেখি। দয়া করে আমাকে তাকে আবার দেখতে দিন, হে খোদা । আমি তাকে আবার দেখতে চাই। আমি তাকে চাই । আমি তাকে অনেক চাই। আমি ভাল থাকব, হে ঈশ্বর। আমি তার কাছে আরও ভাল হওয়ার চেষ্টা করব । আমি করব, যদি আপনি আমাকে তাকে আবার দেখতে দেন, যদি আপনি তাকে আমাকে টেলিফোন করতে দেন...আমি শুধু তাকে নিয়েই বাঁচবো।
নাহ! আমার প্রার্থনা তুচ্ছ নয়। আমার প্রার্থনাকে আপনার কাছে খুব কম মনে করবেন না, হে ঈশ্বর। আপনি পবিত্রতম স্থানে বসে আছেন ; শুভ্র এবং আপনার আরশেই আচ্ছাদিত পবিত্রতম স্থান; আপনার চারদিকে সমস্ত ফেরেশতা এবং তারাগুলি পাশ দিয়ে পিছলে যাচ্ছে; এবং আমি আপনার কাছে একটি ফোন কলের প্রার্থনা নিয়ে এসেছি। আহ, হাসবেন না, হে প্রভু। আপনি অনেক নিরাপদ, আপনার সিংহাসনে, আপনার নীচে নীল ঘূর্ণায়মান। মানবীয় সবকিছুরই উর্ধ্বে আপনা। আপনাকে আমার হৃদয়ের কাতরতা স্পর্শ করতে পারে না; কেউ তার হাতে আপনার হৃদয় মোচড় করতে পারে না। এই কষ্ট, হে ঈশ্বর, এটা যন্ত্রণাদায়ক; ভেতর কুঁকড়ে যাচ্ছে। আপনি কি আমাকে সাহায্য করবেন না? আপনার পুত্রের জন্য, আমাকে সাহায্য করুন। আপনি বলেছিলেন যে তাঁর নামে আপনার কাছে যা বলা হবে আপনি তা করবেন। ওহ, ঈশ্বর, আপনার একমাত্র প্রিয় পুত্র, যীশু খ্রীষ্টের নামে, হে ঈশ্বর, তিনি এখন আমাকে টেলিফোন করুক।
আমি এসব পাগলামি বন্ধ করতে হবে। এইভাবে চলতে পারে না। আচ্ছা ! ধরুন একজন যুবক বলে যে, সে একটি মেয়েকে ফোন করবে; এবং তারপরে কিছু একটা ঘটে; এবং পরে সে তা করে না। এটা এতটাও ভয়ানক শোনাচ্ছে না, তাই না? কেন, এটা সারা বিশ্বে চলছে, ঠিক এই মুহূর্তে। ওহ, সারা বিশ্বে যা হচ্ছে তাতে আমি কি চিন্তা করব? টেলিফোন বাজতে পারে না কেন? কেন পারে না, কেন পারে না? আপনি রিং করতে পারেন নি? আহ, অনুগ্রহ করে, আপনি পারেননি? তুমি অভিশপ্ত, কুৎসিত, যন্ত্রণাদায়ক সত্ত্বা। রিং করলে তোর কষ্ট হবে, তাই না? ওহ, এটা তোকে আঘাত করবে! ধিক্কার দাও, তোমার নোংরা শিকড় আমি দেয়াল থেকে টেনে বের করে দেব, তোমার কালো কালো মুখটা অল্প অল্প করে ভেঙ্গে দেব। জাহান্নামের অভিশাপ।
না... না... না...! আমাকে থামতে হবে। আমাকে অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে হবে। এই আমি কি করব? আমি কি ঘড়িটা অন্য ঘরে রাখব ? তখন আর আমি সময় দেখতে পারবো না। যদি আমাকে সময় দেখতেই হয়, তাহলে আমাকে বেডরুমে যেতে হবে। হয়তো, আমি আবার দেখার আগেই সে আমাকে ফোন করবে। আমি তার কাছে খুবই অনুরাগী হব, যদি সে আমাকে ফোন করে। যদি সে বলে যে সে আজ রাতে আমাকে দেখতে পাবে না, আমি বলব, "কেন, সব ঠিক আছে, প্রিয়। কেন, অবশ্যই সব ঠিক আছে।" আমি তার সাথে প্রথম দেখা করার সময় আমি যেমন ছিলাম তেমনই থাকব। তাহলে হয়তো সে আবার আমাকে পছন্দ করবে। আমি সর্বদা প্রেমময়ী ছিলাম, প্রণয়ের শুরু থেকেই। ভালোবাসি আপনাকে; আপনার মতো করেই আপনাকে পেতে চাই আমি।
আমার মনে হয়, তিনি এখনও আমাকে একটু হলেও পছন্দ করেন; নইলে আমাকে আজ দু-দুইবার "প্রিয়তম" বলতে পারতেন না। সব শেষ হয়ে যায়নি, যদি সে এখনও আমাকে একটু পছন্দ করে; এমনকি যদি এটি শুধুমাত্র একটি সামান্য, সামান্য বিট. আপনি দেখুন, ঈশ্বর, আপনি যদি তাকে আমাকে টেলিফোন করতে দেন তবে আমি আপনার কাছে আর কিছু চাইবো না। আমি তার কাছে প্রেমময়ী হব, আমি তার প্রতি অন্ধ হব, আমি আগের মতোই হব, এবং তারপর সে আমাকে আবার ভালবাসবে। এবং তারপরে আমাকে আপনার কাছে আর কিছু চাইতে হবে না। তুমি কি দেখছ না, ঈশ্বর? তাহলে আপনি কি তাকে আমাকে ফোন করতে দেবেন না? আপনি দয়া করে, দয়া করে, দয়া করে, ব্যবস্থা করুন না!
আমি খারাপ ছিলাম বলে তুমি কি আমাকে শাস্তি দিচ্ছ? আমি এটা করেছি বলে তুমি কি আমার উপর রাগ করেছ? ওহ, কিন্তু, ঈশ্বর, অনেক খারাপ মানুষ আছে -- তুমি শুধু আমার জন্য কঠিন হতে পারো না। এবং এটা খুব খারাপ ছিল না; এটা খারাপ হতে পারে না। আমরা কাউকে আঘাত করিনি, হে ঈশ্বর! জিনিসগুলি তখনই খারাপ হয় যখন তারা মানুষকে আঘাত করে। আমরা একক আত্মাকে আঘাত করিনি; তুমি এটা জান । তুমি জানো এটা খারাপ ছিল না, তাই না, ঈশ্বর? তাহলে তুমি কি তাকে এখন আমাকে ফোন করতে দেবে না?
যদি সে আমাকে ফোন না করে, আমি জানব যে ঈশ্বর আমার উপর রাগান্বিত। আমি পাঁচশ করে পাঁচশ গণনা করব, এবং যদি সে আমাকে ফোন না করে তবে আমি জানব যে ঈশ্বর আমাকে আর কখনও সাহায্য করবেন না। এটাই হবে চিহ্ন। পাঁচ... দশ... পনের... বিশ... পঁচিশ... ত্রিশ... পঁয়ত্রিশ... চল্লিশ... পঁয়তাল্লিশ...পঞ্চাশ...পঞ্চাশ!
আহ ! আর পারছি না। এটা খারাপ ছিল। আমি জানতাম এটা খারাপ ছিল। ঠিক আছে, ঈশ্বর, আমাকে নরকে পাঠান। আমার মনে হয়, আপনি আমাকে আপনার নরকের ভয় দেখাচ্ছেন , তাই না? আপনার মনে হয় না---- আপনার নরক আমার চেয়েও খারাপ?
অবশ্যই না । আমার কোনোভাবেই এটা করা উচিত না। ধরুন সে আমাকে ফোন করতে একটু দেরি করেছে --এটা নিয়ে হিস্টিয়ারিক হওয়ার কিছু নেই। হয়তো সে ফোন করতে যাচ্ছে না---- বরং টেলিফোন না করেই সরাসরি এখানে আসছে। সে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে যাবে যদি সে দেখে আমি কাঁদছি। পুরুষেরা কখনোই নারীদের কান্না পছন্দ করে না। এবং তারা কাঁদেও না। আমি ঈশ্বরের কাছে চাই যে, আমি যেন তাকে কাঁদাতে পারি। আমি যদি তাকে কাঁদাতে পারি এবং মেঝেতে পা দিয়ে তার হৃদয়কে ভারী এবং বড় এবং তার মধ্যে ফুসফুসে অনুভব করতে পারি। আমি যদি তাকে নরকের মতো আঘাত করতে পারি।
(পরবর্তী সংখ্যায় সমাপ্ত)
===================================কবিতা===================================
কুমিল্লা,বাংলাদেশপ্রদীপ ভট্টাচার্য
তোমার মতো কতগুলো কথা
ছড়িয়ে দিতে পারিনি
কোথায় যেন এই ব্যর্থতা !
কালো অক্ষরে ভরে গ্যাছে পথ
প্রতিদিন কুড়িয়ে শপথ নেই সূর্যের
তোমাকে পেতে কতো বেয়েছি লাল পথ।
আজ তোমাকে বেশী মনে পড়ে।
অনেক ভিজেছি বরষার প্লাবনে
ঝড়ে ঝড়ে যখন কালো যায়নি ধুঁয়ে।
এই পৃথিবী আজো আল্ পথে
আবহমান কাল আছে দাঁড়িয়ে।
দেখে নিও একদিন আমিও হবো আগ্নেয়গিরী।
জলতপস্যাখলিলুর রাহমান শুভ্র
জল নেই, জেলে আছি
সৎ, চিৎ ও আনন্দ ভাবে
ভগবান আপনি আকণ্ঠ ডুবে থাকুন
কিন্তু আমাদের সামান্য চাওয়া-
অথৈ জল, থৈথৈ জল
আমরা পাপযোনিসম্ভূত-অন্ত্যজ
আমরা কেন পাপযোনিসম্ভূত?
এমন প্রশ্ন আমাদের জন্য পতিত বিলাস
তবু এমন প্রশ্ন কেন মাথায় ঘাই মারে জানিনা
আপনি মহান সেজে বলেছেন
আপনার আশ্রয়ে আমাদের পরমগতি
আমরা জ্ঞানহীন,কর্মে চতুর মীন শিকারী
আমাদের যত ভক্তি শূদ্রগুণ
সব নিয়ে নিমগ্ন প্রণাম; জল চাই
জলই আমাদের ধর্ম
শরীর জুড়ে কানুর বাঁশি
জলই আমাদের পরমগতি
ভগবান আপনি আমাদের জল দিন
মনের মাধুরী শাহজালাল সরকার
আজ আমি মুক্ত, স্বাধীন, শৃঙ্খলবিহীণ বিহঙ্গ
সাবলীল আকাশে, অসীমের সকাশে
অবলীলায় খেলা করি মিশি অন্তরঙ্গ।
ভাবনাহীণ ঐ অন্তরে, জ্বালাই প্রেমের আগুন
ভাবের সাথে ভাবের, করি আলিঙ্গন
কে আছো মহান, এনে দাও ফাগুন।
পৌষের কুসুম রোদে, ভাবি, অজানা তনয়ারে
কে হবে আমার মনের উদার নায়িকা
হবে সে সময়ের সেরা, এক নয়নারে!
কখনও আমি অস্তাচলের ঘোড়া, গোধুলীবেলা
কখনও আবার রূপকথার সাদা পরী
গড়ি সিনেমার শিল্প, অভিনেত্রী মেলা।
হাজার তরুণীর ভীড়ে, মিশে নিজেকে হারাই
নিঃস্তব্ধতার সীমাহীন প্রান্তরে উড়ে যাই
কোমল অনুভূতির পানে দু হাত বাড়াই।
বসন্তের স্নিগ্ধতায়, ঐ পুষ্পমঞ্জরির অবগাহনে
কোকিলের সুমিষ্ট কন্ঠের অনুভবে চলি
মিশাই মনের মাধুরী, খেয়ালের বাহনে।
আমিও যেমন ছিলাম একদিন বশির আহমেদ
ঘরের দুয়ারে মৌ মৌ করে বেলি ফুলের ঘ্রাণ
ঝরা পাতার ক্রন্দনরোল স্যাঁতস্যাঁতে উঠোন জুড়ে
সান বাঁধানো ঘাটলায় বসে বসন্তের চাঁদ দেখি,
জলের ভিতরে চাঁদের প্রতিবিম্ব!
বজ্জাত মশা চুষে নেয় শরীরের রক্ত
ছিটা ছিটা মেঘের থুতু উষ্ণ শরীরে বরফ জমায়
দুই আঙ্গুলের ফাঁকে ঝুলে আছে চুরুটের স্বাদ
মায়ের বুকে নিশ্চিন্তে ঘুমায় থাকে দুধের শিশু
আমিও যেমন ছিলাম একদিন।
প্রজাতির ঠোঁটে রূপাশালি ধানের ঘ্রাণআমিনুল ইসলাম
শিশুর গালের মতো সকালের নরম রোদ,
ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়েছে বিকেলের সবুজ
উদ্যানে। নুয়ে পড়েছে সোনালী ধানের শীষ।
চারি দিকে নবজন্ম ফুলের সুভাষ,অপরিপক্ক
আমের থোকা,প্রজাপতির ঠোঁটে লেগে আছে
রূপাশালি ধানের ঘ্রাণ।
রাতের বিছানায় এলায়ে পড়ে কৃষকের ক্লান্ত
শরীর ফলন্ত ধানের মতো।চাষাদের ফলন্ত দেহ
শুষে ল'য়ে জন্মিয়াছে এই সবুজ সোনালী ফসল।
নরম রাতের শেষ প্রহরে ঝরে পরে শিশিরের জল!
পৃথিবীর যশ খ্যাতি পিছে ফেলে, কৃষক ছুটে চলে
লাঙল হাতে, প্রভাত ফেরির আগে জমি উপড়ায়ে
চলে গেছে চাষা,গোশালা গাভীর দুগ্ধ দোহনে।
মায়ের ভাষাজোবাইদা নূর খান
মানুষের মন
বলতে চায় কত কিছু!
এই যে এতো এতো ফুল ফোটা কিংবা ঝরে পড়া বকুল আর শিউলি ;
রঙ্গনের থোকায় প্রস্ফুটনের পূর্ণতা;
মাধবীলতার ঝাড়ে মধুমক্ষিকার গুনগুন;
বসন্তের দখিনা হাওয়ায় প্রনয় পিয়াসী মনের ব্যাকুলতা--
তাল পাতার হাত পাখায় সুই-সুতার নিবিড় বন্ধন;
কিশোরী মেয়ের সলজ্জ কথন-"মনে রেখো আমায়।"
মায়ের হাতের কৈ মাছের ঝোল আর ধোঁয়া ওঠা মোটা চালের ভাত--
মানুষের মন --
ভাবুক মন--
বলতে চায় কত কী--
হৃদয়ের কোমল নদীতে কত আবেগের প্রস্রবণ !
ঠোঁটের প্রতিটি কোষে কত ভাষা!
সবচেয়ে ভালো প্রকাশ যে মায়ের ভাষায়।
বৃত্তহীন হতে চাইমেহেরুন্নেছা
প্রতিদিন একটা চাঁদ উত্থিত হয়
আর আমি একটু একটু করে
নগন্যের ময়দানে নগন্য হতে থাকি।
দৃষ্টি ক্ষীণ, সমস্ত পৃথিবী ভার,
ধূলো জমে ভরাট হয়ে যায়
স্যাঁতস্যাতে মৃত্তিকার লম্বাটে কলমিদল।
বৃত্তহীন হতে চাই, পরপর নতুন ভোর
আবিস্কারের নেশায় ;
ভৌগোলিক অস্তিত্বের সাথে একাত্ম হতে চাই,
সভ্যতার টুকরো গাঁথার আশায়।
সকল বাগাড়ম্বর ছুঁড়ে ফেলে
নেশার ঘোরে ছুটতে থাকি।
এবড়োথেবড়ো গিরিখাত ধরে সবখানে,
জৈবিকতায়, সমর ছন্দে, আশ্লেষভরা উত্থানে ;
খন্ডিত হতে থাকে এক একটি ভোর।
মানুষকে চিনতে গিয়ে
অবাক পৃথিবীর অবাক উচ্ছ্বাস
সম্মুখে এসে হয় হাজির।
অবশেষে কাঙ্ক্ষিত সেই ভোর হয়ে উঠে
নতুন সূর্য মোড়ানো অদ্ভুত এক আঁধার।