কুমিল্লায়
দর্জি দোকানগুলোতে ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে পোশাকের অর্ডার। ঈদের
পাঞ্জাবি ও থ্রি-পিস সেলাইয়ে ব্যস্ততা বাড়ছে দর্জিদের। তবে ঈদ ঘিরে
অন্যান্য বছর প্রতিটা টেইলার্সে যেরকম ভিড় লেগে থাকতো; এবার সেরকম লক্ষ্য
করা যায়নি। যদিও কিছু কিছু দোকানে গত ঈদের অর্ডার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনা
দেখছেন দর্জিরা। তবে অধিকাংশ দোকানে ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে অলস সময়
অতিবাহিত করছে কারিগররা।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) কুমিল্লা খন্দকার হক
শপিংমল এবং সাত্তার খান শপিংমলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দর্জি দোকানগুলোতে
দৈনিক থ্রি-পিস ও লেহেঙ্গা ৪০ থেকে ৫০ পিস এবং পাঞ্জাবি, প্যান্ট-শার্ট ও
ব্লেজার ৫০ থেকে ৬০ পিস করে অর্ডার পাচ্ছে দর্জিরা। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে
দর্জিদের অর্ডারের পরিমাণও ততো বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে কিছুসংখ্যক দোকানে এখনও
আশানুরুপ অর্ডার না আশায় হতাশগ্রস্ত হয়ে অলস সময় অতিবাহিত করছেন কারিগররা।
আসন্ন
ঈদকে ঘিরে ঈদ বাজারের অন্যান্য পোশাকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রায় প্রত্যেকটি
পোশাক সেলাইয়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে বেশি রাখছে দর্জিরা। ক্রেতার ভিড়
সামাল দিতে প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছে দর্জিবাড়ির কারিগররা। অর্ডার আসলেই শুরু
হয় সেলাই। তবে ঈদের কারনে থ্রি-পিস এবং পাঞ্জাবি তৈরিতে ব্যস্ততা বেশি
বেড়েছে তাদের।
কুমিল্লা খন্দকার হক শপিংমল এবং সাত্তার খান শপিংমলে
পাঞ্জাবি সেলাই হচ্ছে ৫’শ থেকে ৬’শ টাকায়। শার্ট সেলাই হচ্ছে ৪’শ থেকে ৫’শ
টাকায়। প্যান্ট সেলাই হচ্ছে ৫’শ ৫০ থেকে ৬’শ টাকায়। ব্লেজার সেট ৪ হাজার
থেকে ৫ হাজার টাকায়। থ্রি-পিস সেলাই হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৫’শ টাকায়। ডাবল
থ্রি-পিস সেলাই হচ্ছে ৮’শ থেকে সাড়ে ১২’শ টাকায়। কোনো কোনো দোকানে সেলাই
হচ্ছে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকায়। লেহেঙ্গা সেলাই হচ্ছে সাড়ে ১৫'শ থেকে ৩
হাজার টাকায়।
দর্জিরা জানান, রেডিমেড জামা-কাপড়ের ভিড়ে দর্জিবাড়ির
কারিগররা হারাচ্ছে অতীতের জৌলুস। তবে নিজের পছন্দ মত পোশাক তৈরি করতে অনেকে
গজ কাপড় নিয়ে এখনও আসে এই দর্জি পাড়ায়। খন্দকার হক শপিংমলে অর্ডার
শূন্যতায় অলস সময় কাটানো দর্জিদের অভিযোগ সিন্ডিকেটের কারনে অর্ডার
হারাচ্ছে তারা। কাপড় দোকানের সেলসম্যানরা আগে থেকেই কাস্টমারদেরকে
চুক্তিবদ্ধ দর্জি দোকানে পাঠানোর ফলে ১৭ রমজানেও আশানুরুপ অর্ডার পাচ্ছে না
দোকানগুলো। অর্ডার সল্পতায় সাবলম্বী হচ্ছে সিন্ডিকেট, দর্জিরা হারাচ্ছে
অতীতের জৌলুস।
খন্দকার হক শপিংমলের দর্জি দোকানদার নুসরাত লেডিস
টেইলার্সের স্বত্ত্বাধীকারী মু. জহির হোসেন কুমিল্লার কাগজকে বলেন, আমরা
অন্যদেরকে পোশাক বানাইয়া দেই কিন্তু নিজেরাই পোশাক কিনতে পারি না।
নিত্যপন্যের দাম যেভাবে বাড়ছে মানুষ কি খাবার খাবে নাকি পোশাক সেলাই করবে। এ
সমাজের সবচেয়ে গরীব দর্জিরা। কিন্তু এই দর্জি ব্যবসায় নতুন করে হানা
দিয়েছে কাপড় সিন্ডিকেটের কর্মীরা। কাপড় দোকানের চুক্তিবদ্ধ দর্জি দোকানগুলো
অনেক অর্ডার পাচ্ছে কিন্তু আমরা যারা চুক্তিবদ্ধ না তারা আশানুরুপ অর্ডার
পাচ্ছি না বরং আমরা আছি বিপদে। কারিগররা অর্ডারের জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু
পরিমাণ মত কাজ দিতে পারছি না।
কুমিল্লা নগরীর ঠাকুরপাড়া থেকে থ্রি-পিস
সেলাই করতে আসা আফসানা আক্তার মিতু কুমিল্লার কাগজকে বলেন, সেলাইয়ের দামে
নয় মানে নজর দিচ্ছি। কিছু কিছু দোকান আছে যেগুলোতে ভালো সেলাই হয় না।
সেখানে সেলাই করলে পোশাক বেশিদিন পরা যায় না। অল্প দিনেই সেলাই ছিঁড়ে যায়।
তবে সেলাই ভালো হলে ঈদ উপলক্ষ্যে ৫০ বা ১০০ টাকা বেশি দিতে অসুবিধা নেই।
সাত্তার
খান শপিংমলের সানন্দা প্লাস বুটিক এন্ড টেইলার্সের স্বত্বাধিকারী মামুন
কুমিল্লার কাগজকে বলেন, দৈনিক ৩০ থেকে ৪০টা অর্ডার আসে। গত বছরের মত এখনও
ঐভাবে অর্ডার পাইনি। ঈদকে ঘিরে সেলাইয়ের রেট কিছুটা বেড়েছে। থ্রি-পিস সেলাই
করছি ৫’শ থেকে সাড়ে ৫’শ টাকায়। ডাবল থ্রি-পিস সেলাই করছি ৮৫০ থেকে ১৫’শ
টাকায়। লেহেঙ্গা ১৫’শ থেকে ২৫’শ টাকায়। ঈদের কেনাকাটা সবে মাত্র শুরু হয়েছে
দিন যত এগুবে অর্ডারের পরিমাণও ততো বৃদ্ধি পাবে।
ঈদকে কেন্দ্র করে
কুমিল্লা খন্দকার হক শপিংমল এবং সাত্তার খান শপিংমল শুক্রবার সহ প্রতিদিন
সকাল ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। অন্যান্য দোকানের সাথে তাল
মিলিয়ে দর্জি পাড়ায়ও বাড়তে শুরু করেছে ঈদের ব্যস্ততা।
কাটাকাটি শেষে
মেশিনে উঠবে রং বেরঙের কাপড়। তৈরি শেষে ক্রেতাদের হাতে পৌঁছাবে নতুন নতুন
ডিজাইনের পোশাক। দর্জি দোকানে ফিরে আসবে পুরনো সেই জৌলুস এমনটাই প্রত্যাশা।