কুবি
সংবাদদাতা: গত ১৪ মার্চ এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের
পাঁচ অনুষদের ডিন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই ডিন নিয়োগ নিয়ে দেখা দিয়েছে
বিতর্ক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির দাবি উদ্ভূত পরিস্থিতি বিশেষ
সিন্ডিকেট সভার এজেন্ডা পরিবর্তন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অমান্য করে ডিন
নিয়োগ করা হয়েছে।
এছাড়া সিন্ডিকেট সভায় এজেন্ডা বহির্ভূত ও বেআইনিভাবে
ডিন নিয়োগ দেয়া হয়েছে দাবি করে গত ১৯ মার্চ ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের
অধ্যাপক ড. শেখ মকছেদুর রহমান নামের একজন এক সিন্ডিকেট সদস্য পদত্যাগও
করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা শিক্ষা অনুষদে ডিন হিসেবে দায়িত্ব দেয়া
হয়েছে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ আহসান উল্যাহ। কিন্তু ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং
বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো: এমদাদুল হকের দাবি বিভাগীয় ক্রম অনুযায়ী
ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ থেকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে তাকে ডিন করা
যুক্তিযুক্ত। কিন্তু প্রশাসন সেই নিয়ম মানেনি। প্রশাসন তাকে শিক্ষা ছুটি
শেষে যোগদান করতে না দিয়ে পদবঞ্চিত করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ছুটি
নীতিমালার ৩.৪ এ বল আছে, যদি কোন শিক্ষক তার ডিগ্রি অসম্পূর্ণ রেখে
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসে তাহলে একই ডিগ্রির জন্য পরবর্তীতে কোন
শিক্ষা ছুটি পাবে না উক্ত শিক্ষক।
চলতি বছরের ৩ মার্চ ফিন্যান্স এন্ড
ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো: এমদাদুল হক কর্মস্থলে যোগদান প্রসঙ্গে
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দেন। এরপর রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে
কোন কিছু জানানো হয়নি। এর আগে ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর পিএইচডি প্রোগ্রামের
জন্য ছুটি নেন সহযোগী অধ্যাপক এমদাদ।
এ ব্যাপারে ফিন্যান্স এন্ড
ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. এমদাদুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষা ছুটির নীতিমালা অনুযায়ী আমি গত ৩ মার্চ ২০২৪ শিক্ষা ছুটি শেষে
বিভাগে যোগদান করার জন্য আবেদন করি। কিন্তু আইন বহিভূতভাবে আমার যোগদান
পত্র কার্যকর না করে জরুরী সিন্ডিকেট ডেকে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডীন
মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। যদিও জরুরী সিন্ডিকেটের এজেন্ডা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের
উদ্ভুত পরিস্থিতি কিন্তু নজীরবিহীনভাবে এজেন্ডা পরিবর্তন করে তড়িঘড়ি করে
বিজনেস স্টাডিজ সহ অন্য অনুষদ সমূহের ডীন মনোনয়ন দেয়া হয়েছে! উল্লেখ্য যে,
আইন অনুযায়ী বিভাগের আর্বতনে এবার ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ থেকে
বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন প্রাপ্য। এ ক্ষেত্রে আমার যোগদান পত্র কার্যকর
না করে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগকে ডীন হওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে যা
অনভিপ্রেত!'
এছাড়া বিজ্ঞান অনুষদে বিভাগের ডিন নিয়োগের ক্ষেত্রে গণিত
বিভাগের পর পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ডিন আসার কথা থাকলেও ডিন নিয়োগ দেয়া
হয়েছে ফার্মেসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. প্রদীপ দেবনাথকে। এমনটাই দাবি
করছেন কুবি শিক্ষক সমিতি। এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক
(ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদুল হাসান রাজু বলেন, " বিভাগের ক্রম অনুসারে অনুষদে ডিন
নিয়োগ দেয়ার কথা। বিভাগের ক্রম অনুসারে গণিত বিভাগের পর পদার্থ বিজ্ঞান
বিভাগ থেকে বিজ্ঞান অনুষদের এবং মার্কেটিং বিভাগের পর ফিন্যান্স এন্ড
ব্যাংকিং থেকে ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের ডিন নিয়োগ হওয়ার কথা। সে ক্রম উপেক্ষা
করে ফার্মেসি এবং ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগ থেকে ডিন নিয়োগ দেয়া হয়। আমরা
এটার প্রতিবাদ জানিয়েছি।"
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক
ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, 'সকল ডিন আইন মেনেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সিন্ডিকেটে আলোচ্য সুচির কোন পরিবর্তন হয়নি। শিক্ষক সমিতি যে সাত দাবি
করেছে তার মধ্যে একটি দাবি হলো বিধি মোতাবেক বিভাগীয় প্রধান ও ডিন নিয়োগ
যেন হয়। সেই মোতাবেক আমরা সিন্ডিকেট থেকেই এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ডিন
নিয়োগের ক্ষেত্রে বিতর্কের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ' বিজ্ঞান অনুষদে আগের বার
ফার্মেসি বিভাগ বঞ্চিত হয়েছিল সহযোগী অধ্যাপক পদ মর্যাদার কেউ না থাকায়।
তাই রোটেশন অসম্পূর্ণ থাকায় ফার্মেসি বিভাগ থেকে ডিন দেয়া হয়েছে। এছাড়া
বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের ব্যাপারে আগেই সিদ্ধান্ত ছিল মার্কেটিং থেকে
ম্যানেজমেন্টে যাবে। সেই মোতাবেক হয়েছে।
ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং
বিভাগের শিক্ষক এমদাদুল হকের যোগদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ' বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষা ছুটির বিধিমালায় বলা আছে যদি কেউ ডিগ্রি ইনকমপ্লিট রেখে আসে তাহলে
তাকে আর সেই ডিগ্রির জন্য ছুটি দেয়া হবে না। বিভাগে সে যোগদান করতে পারবে।
কিন্তু সে তো ইনকমপ্লিট রেখে আসবে না। সে বিভাগে এখন যোগদান করবে তারপর
আবার অর্জিত ছুটি নিয়ে যাবে। এটা তো কোন প্রসেস হতে পারে না। উনি বিভাগে
যোগদান করলেও ডিনের দায়িত্ব পান না। সব কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান আইন
অনুযায়ী হচ্ছে।