দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলেছে। রাজনৈতিক
অস্থিরতা কমেছে। শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য খাতে উন্নয়নের ছোঁয়া ক্রমেই
স্পষ্ট হচ্ছে। এর উল্টো দিকের ছবি হচ্ছে, সমাজে খুনখারাবিসহ অপরাধপ্রবণতা
বাড়ছে।
গত রবিবার পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বগুড়া শহরের চক
ফরিদ কলোনি এলাকায় এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সিরাজগঞ্জে
পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনার
পর নিহতের বিক্ষুব্ধ স্বজনরা বেশ কয়েকটি বসতবাড়ি ভাঙচুর করেছে। হবিগঞ্জের
পাঁচপাড়িয়া এলাকায় করাঙ্গী নদী থেকে এক যুবকের হাত বাঁধা বস্তাবন্দি লাশ
উদ্ধার করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বিভিন্ন স্থান
থেকে ব্লেড মন্টু বাহিনীর ১৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার
ব্যক্তিরা তেজগাঁওয়ের এক চিহ্নিত সন্ত্রাসীর হয়ে বিভিন্ন এলাকায় মাদক
সরবরাহ করতেন। তাঁদের প্রায় প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই বিভিন্ন থানায় মামলা
রয়েছে। এর আগেও তাঁদের অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়।
গত বুধবার রাত থেকে
বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরী ও ফেনী জেলার বিভিন্ন স্থানে
অভিযান চালিয়ে ছয়টি কিশোর গ্যাংয়ের প্রধানসহ ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে
র্যাব। বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে খাগকান্দা ইউনিয়নের বাহেরচর
গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ১৭ বাড়িতে লুটপাটের ঘটনার রেশ ধরে
ফের মামলার বাদীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। এরপর পাল্টাহামলায়
একজনের মৃত্যু হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালিয়েছে।
সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে।
গত শনিবার কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার
কুতুবজোম ইউনিয়নের সোনাদিয়া পশ্চিমপাড়ায় প্যারাবন কেটে লবণের মাঠ দখলে
নিতে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে একজন নিহত এবং ১০ জন আহত হয়েছে। ওদিকে নিষিদ্ধ
ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার আল ইসলামের’ তিন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে
পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট। গ্রেপ্তারের সময় তাঁদের কাছ থেকে উগ্রবাদী
কর্মকা-ে ব্যবহৃত দুটি অ্যানড্রয়েড মোবাইল ফোন, একটি ট্যাব, একটি বাটন
মোবাইল ফোন এবং বিপুলসংখ্যক উগ্রবাদী বই জব্দ করা হয়েছে।
এক শ্রেণির
মানুষ পুলিশ-প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, মানবিক মূল্যবোধ-কোনো কিছুরই তোয়াক্কা
করছে না। মানুষের মধ্যে অস্থিরতাও বেড়ে গেছে। সামান্য কারণে খুনের ঘটনা
ঘটছে। সাধারণ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে মানুষ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে,
এটাই স্বাভাবিক। খুনখারাবির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে জনমনে
নিরাপত্তাহীনতার বোধ আরো তীব্র হবে।
সমাজের কিছু মানুষ যেন দিন দিন
অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। এমনটি চলতে থাকলে শিগগিরই যে সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট
হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পুলিশ সপ্তাহের পঞ্চম দিনে গত শনিবার
রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের
মতবিনিময়সভায় আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে উন্নয়ন
কষ্টসাধ্য।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অন্যায়কারীর শাস্তি হলে তা দেখে
অন্যরা অন্যায় কাজে নিরুৎসাহ হবে। আর সে কারণেই আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা
বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। অপরাধীদের আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে।