![বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড]( https://comillarkagoj.com:443/2024/03/04/CK_1709492858.jpg)
গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন
কোজি কটেজ নামের বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নিকা-ের ঘটনায় ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
অগ্নিকা-ে হতাহতের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রাজধানীর রমনা থানায় মামলা করেছে।
বেইলি রোডের আগুন লাগা বাণিজ্যিক ভবনটিতে জরুরি অগ্নিনির্গমন পথ না থাকায়
ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা.
সামন্ত লাল সেন বলেছেন, রাজউক ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে আরো বেশি সতর্ক হওয়া
উচিত।
এ কথা ঠিক যে সামান্য সতর্ক হলেই রাজধানীতে এ ধরনের অনেক দুর্ঘটনা
এড়ানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগর পরিকল্পনা, ভবনের ডিজাইন, নির্মাণ ও
ব্যবস্থাপনা, ভবনের ব্যবহার, ভবনের অগ্নিপ্রতিরক্ষা, ফায়ার ড্রিল, ভবন
মালিকের সচেতনতা ও দায়িত্বশীল আচরণ এবং নগর সংস্থাগুলোর নিয়মিত তদারকি
থাকলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। বেইলি রোডের অগ্নিকা-ের ঘটনার বিভিন্ন
প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর জানা গেল, এই ভবনের অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়টিতে
গাফিলতি ছিল।
এ ধরনের ঘটনা যখনই ঘটে, তখনই ভবনের নানা গুরুতর অনিয়মের কথা প্রকাশ্যে আসে।
নিরাপত্তা
ঘাটতিসহ নানা ঘাটতির কথা শোনা যায়। আগুনে মানুষ হতাহত হওয়ার পর জানা যায়
ভবনের অনুমোদনসংক্রান্ত নানা অনিয়মের কথা। একটি বাণিজ্যিক ভবন পরিচালনার
জন্য সরকারের আটটি সংস্থার অনুমোদন লাগে। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই সংস্থাগুলো কি
এত দিন ঘুমিয়ে ছিল? অবহেলাজনিত হত্যার জন্য এসব সংস্থাকে কেন দায়ী করা হবে
না?
ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিস তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
এ ছাড়া তদন্ত
করছে রাজউক, সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও।
সংস্থাগুলোর প্রাথমিক তদন্তে ভবনটির পদে পদে অনিয়মের প্রমাণ মিলছে।
অনিয়মগুলো কী? ভবনটি তৈরি করা হয়েছিল অফিস হিসেবে ব্যবহারের জন্য। কিন্তু
এর বেশির ভাগই ব্যবহার করা হয়েছে রেস্তোরাঁ হিসেবে; এর কোনো অনুমোদনও ছিল
না। ভবনটিতে অগ্নিনিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
রাজউকের মুখপাত্র
বলেছেন, ভবনটির প্রথম তলা থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যবহারের
অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে তা শুধু অফিস কক্ষ হিসেবে ব্যবহারের জন্য।
রেস্তোরাঁ, শোরুম (বিক্রয়কেন্দ্র) বা অন্য কিছু করার জন্য অনুমোদন নেওয়া
হয়নি। কিন্তু ডেভেলপার কম্পানি ভবন বুঝিয়ে দেওয়ার পর মালিকরা পুরোটা
বাণিজ্যিক হিসেবে ব্যবহার করছিলেন, যেখানে বেশির ভাগই ছিল রেস্টুরেন্ট।
একজন স্থপতি ভবনটি দেখে এসে বলেছেন, ভবনটির যে প্রবেশের পথ, যে সিঁড়ি-একই
সঙ্গে আলো-বাতাস প্রবাহের যে আইনকানুন বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড বা
ইমারত নির্মাণ বিধিমালা রয়েছে, তার কিছুই মানা হয়নি।
বিভিন্ন সংস্থা
বিভিন্ন সময় ভবন তৈরির ক্ষেত্রে লাইসেন্স দিচ্ছে শর্ত সাপেক্ষে। কিন্তু
শর্ত সাপেক্ষে যে লাইসেন্স তাঁরা নিচ্ছেন, সেটি বাস্তবায়ন করছেন কি না,
আইনের প্রয়োগটা হলো কি না, দেখা হয় না। এখানেই সবচেয়ে দুর্বলতা। আইনের
প্রয়োগ হয় না বলেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে।
আইন যাদের প্রয়োগ করার কথা, তারা দায়িত্বশীল হলে এমন অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।