পবিত্র
রমজান মাসের আগে আগে এক শ্রেণির অতি লোভী ব্যবসায়ীর কারসাজিতে
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। রোজার সময় বেশি ব্যবহৃত হয় এমন
প্রায় প্রতিটি খাদ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে
সরকার। এই চিত্রটা প্রতিবছরের।
সেই কারসাজি রোধ করতে এবং বাজারে
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার অন্যান্য বছরের মতো এবারও কিছু
ইতিবাচক উদ্যোগ নেয়। গত জানুযারি মাসে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ভোজ্য তেল, চিনি,
খেজুর ও চালের আমদানি শুল্ক কমানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। বাজার
নিয়ন্ত্রণে রাখতে সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক পুরোপুরি
প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তেলের ক্ষেত্রে দেশে পরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের
উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর বা মূসক বা ভ্যাট পুরোপুরি তুলে
নেওয়া হয়।
এ ছাড়া বিদেশ থেকে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল
আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি পর্যায়ের ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়।
রোজার অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুর আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমানো
হয়। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত উভয় ধরনের চিনি আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক
কমানো হয়।
প্রশ্ন হচ্ছে, শুল্ক কমানোর সুফল কি ভোক্তারা পেয়েছে? বাজারে
কি তার প্রভাব পড়েছে? পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত ৮
ফেব্রুয়ারি চাল, চিনি, তেল ও খেজুরের শুল্ককর কমিয়েছে সরকার।
অথচ গত
প্রায় তিন সপ্তাহেও এর সুফল নেই বাজারে। উল্টো বেড়েছে চিনি ও খেজুরের দাম। এ
বিষয়ে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য হচ্ছে, শুল্ক কমানোর সুবিধা
আমদানিকারকরা পেলেও ভোক্তাদের কাছে সেই সুবিধা পৌঁছে না। অন্যদিকে
আমদানিকারকরা বলছেন, যে পরিমাণে শুল্ক কমানো হয়েছে, তা খুবই সামান্য।
ডলারের উচ্চমূল্যের কারণে শুল্ক কমানোর সুফল মিলছে না। ফলে বাজারে এর
প্রভাব পড়েনি।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আশাবাদ
ব্যক্ত করেন যে পবিত্র রমজান মাসে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে থাকবে এবং
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামে লাগাম টানা সম্ভব হবে। বাস্তবতা
হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ
পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাসিক মূল্য ও মজুরির তথ্য বলছে, গত ফেব্রুয়ারি ২০২৩
থেকে জানুয়ারি ২০২৪, এই এক বছরে গড় মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯.৫৮ শতাংশ
এবং গড় মজুরি বৃদ্ধির হার ৭.৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে ২
শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে কমানো
যায়নি। মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও মনে করেন
তাঁরা। বাজারে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে মূল্যস্ফীতি ঘটছে।
এই অবস্থায় উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমানোর পথ খোঁজার তাগিদ দিয়ে গেছেন ঢাকা সফর
করে যাওয়া বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশন)।
মূল্যস্ফীতি
দেশের মানুষের জীবনযাত্রায় বড় প্রভাব ফেলে। বিষয়টি রাজনৈতিকভাবেও বেশ
সংবেদনশীল। এটি অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তারও কারণ। তাই বাজারের দিকে দৃষ্টি দিতেই
হবে।