কুমিল্লাকে বাঁচাতে কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নসহ ১২ দফা দাবি জানিয়েছেন কুমিল্লা বাঁচাও মঞ্চের নেতা সাবেক সংসদ সদস্য ও হুইপ মনিরুল হক চৌধুরী। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন উপ-নির্বাচনের ৩ মেয়র প্রার্থীর উপস্থিতিতে কুমিল্লা টাউন হল অডিটোরিয়ামে কুমিল্লা বাঁচাও মঞ্চে মনিরুল হক চৌধুরী প্রণীত ধারণাপত্রের চূড়ান্ত কার্যক্রম মূল্যায়ন ও অনুমোদন বিষয় সেমিনারে এসব দাবি তুলেন তিনি।
কুমিল্লা বাঁচাও মঞ্চের সমাজ সংগঠক ও চেয়ারম্যান আব্দুল হকের সভাপতিত্ত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, সাংবাদিক-কলামিস্ট গাজীউল হাসান খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক দুলাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ইতিহাসবিদ এ্যাড. গোলাম ফারুক, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান ড. শাহ মোহাম্মদ সেলিম, রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী ফারুক, সমাজ সংগঠক ও রাজনীতিবিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুল কবির মোহন। এছাড়া কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন উপনির্বাচনের ৩ মেয়র প্রার্থী টেবিল ঘড়ি মার্কায় প্রতিদ্ধন্ধিতা করা সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, হাতি মার্কায় প্রতিদ্ধন্ধিতা করা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিম, ঘোড়া মার্কায় প্রতিদ্ধন্ধিতা করা বিএনপির বহিষ্কৃত ছাত্রনেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার বিশেষ বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে উত্থাপিত মনিরুল হক চৌধুরীর দাবিগুলো হচ্ছে- * অ চৎড়ঢ়ড়ংধষ ড়ভ অ.ঐ.ক ঝধঃবষষরঃব ঈরঃু কড়ঃনধৎর, ঈঁসরষষধ ধ ারনৎধহঃ পরঃু রিঃয রহ ধ রহবভভবপঃরাব পরঃু ড়ভ ঈঁসরষষধ. *ঈঁসরষষধ ঝড়ঁঃয ঝয়ঁধৎব, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, কুমিল্লা, অবকাঠামো সংস্কার, উন্নয়ন ও বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলকে পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ বানিজ্যিক ঐঁন ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মূল কেন্দ্রে রুপান্তরের ধারণা পত্র। *সড়ক বিভাগ কর্তৃক অনুমোদিত সড়ক "রাজগঞ্জ টু নোয়াখালী চৌমুহনী" সড়কটি পরিকল্পিত বাস্তবায়ন পূর্বক নির্বিঘœ সড়ক যোগাযোগের মাধ্যমে বৃহত্তর কুমিল্লা দক্ষিণ, বৃহত্তর নোয়াখালীর সামগ্রিক এলাকা কুমিল্লা দক্ষিণের মহানগরে প্রবেশ ও প্রস্থান ও এ অঞ্চলের জনগণের অধিকার নিশ্চিতে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির নতুন দিগন্তের ধারণা পত্র। *কুমিল্লা মহানগরের উত্তর সম্প্রসারণ পূর্বক বঞ্চিত পাঁচথুবী, আমড়াতলী তৎসংলগ্ন এলাকার নাগরিক, নগরায়ন, আর্থিক এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমের অবকাঠামোগত নির্মাণের একটি ধারণা পত্র। *ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পূর্ণাঙ্গ ৮ লেন বাস্তবায়ন। *পুরাতন ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক এর পূর্বাঞ্চলকে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ এর সমৃদ্ধ সীমান্তবর্তী একটি রূপ প্রকল্পের ধারণাপত্র। *সমৃদ্ধ কুমিল্লা গড়তে ঈঁসরষষধ ঝড়ঁঃয ংয়ঁধৎব, অঐক ঝধঃবষষরঃব ঈরঃু, কড়ঃনধৎর ঈঁসরষষধ. ঘড়ৎঃয ঊধংঃ খরহশ, ইরনরৎ ইধুধৎ, ঈঁসরষষধ. ঝড়ঁঃয খরহশ, ঞড়সংড়সনৎরফমব, ঈঁসরষষধ. ঘড়ৎঃয বধংঃ ংয়ঁধৎব ঈযড়শি নধুধৎ, ঈঁসরষষধ. একটি ধারণা পত্র ও আনুষঙ্গিক কিছু অবকাঠামো ও সামাজিক উন্নয়ন চিন্তা। *কুমিল্লা নগরবাসীর ভোগান্তির অবসান কল্পে জলাবদ্ধতা, পয়ঃ ও পানি নিষ্কাশন ও যানজট নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ। *পদুয়ার বাজার রেল ওভারপাস, পরিকল্পনা মাফিক আন্ডারপাস সহ চট্টগ্রাম-নোয়াখালী-চাঁদপুরের লিংক পূর্ণাঙ্গ ফ্লাইওভার নির্মাণ। *কুমিল্লা ইপিজেড এর বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্য ও সিটি পয়ঃ বর্জ্য থেকে কুমিল্লা দক্ষিণের ৫৫ টি গ্রামকে ব্যাপক ক্ষতিসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করণ। *অবিলম্বে কুমিল্লা নামে বিভাগ বাস্তবায়ন, মেট্রোপলিটন নগরী গঠনপূর্বক মেট্রোপলিটন পুলিশ, বিচারিক আদালত, নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও ওয়াসা গঠন। অবশ্য ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মহোদয়ের সাথে কুমিল্লা বাঁচাও মঞ্চের প্রতিনিধি দল দেখা করাতে মন্ত্রী মহোদয় জানান কুমিল্লা ওয়াসা গঠন অনুমোদন হয়েছে এবং ইপিজেডে রাসায়নিক বর্জ্য প্রতিকারে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। *ঢাকা-কুমিল্লা-লাকসাম সরাসরি রেল কর্ড (হাই স্পিড) লাইন নির্মাণ বাস্তবায়ন।
সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ঘোড়া মার্কার মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, রাষ্ট্র ও জাতিকে কুমিল্লা যতটুকু দিয়েছে তার তুলনায় কুমিল্লা পেয়েছে যৎসামান্য। যেখানে কুমিল্লা নিজের নাম ধারণ করে বিভাগ হতে পারছে না। এর মাধ্যমে বুঝা যায় কুমিল্লা কতটা বঞ্চিত। সারা দেশ আগামীকাল যা ভাববে কুমিল্লা তা ভাবে আজ। রেমিটেন্স থেকে শুরু করে শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতিতে উন্নয়নের যে তত্ত্ব এবং তথ্যের জায়গা সবখানে রাষ্ট্রীয় নিপীরণের স্বীকার আমাদের এই কুমিল্লা। পাশাপাশি ছোট্ট ছিমছাম শহরটা জনপ্রতিনিধিদের অপরিকল্পিত উন্নয়নের নামে অনুন্নয়নের থাবায় অনেকটা তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। উন্নয়নের নামে হয়েছে দুর্নীতি আর লুটপাট, অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং ওয়ার্ড ভিত্তিক উন্নয়নের বৈষম্য। কুমিল্লাকে নিয়ে যিনি ভাবেন তিনি হলেন প্রিয় নেতা মনিরুল হক চৌধুরী। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, সদর দক্ষিণ উপজেলা, সদর দক্ষিণ থানা, সদর দক্ষিণ পৌরসভা গঠন হয় তার নেতৃত্বে। সদর দক্ষিণ পৌরসভা গঠনের মাধ্যমে প্রশস্ত হয় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ঘোষণা। রাজনৈতিক একজন কর্মী হিসেবে আমি মনিরুল হক চৌধুরীর একজন ফলোয়ার। আমি আপনাদের সাথে কুমিল্লাবাসীর সাথে থাকতে চাই। আমি বিশ্বাস করি এই ধারণাপত্রের মাধ্যমে আমরা এগিয়ে যেতে পারে
হাতি মার্কার মেয়র প্রার্থী নুর-উর-রহমান মাহমুদ তানিম বলেন, দলীয় বিরোধিতা আমাদের মধ্যে এত বাজেভাবে ঢুকে গেছে পারিবারিক দাওয়াতেও এই বিষয়গুলো চলে আসে। মনিরুল হক চৌধুরী প্রণীত এই ১২ দফায় তিনি যে কথাগুলো লিখেছেন এগুলো কুমিল্লার মানুষের আঞ্চলিক দাবি-দাওয়া হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এগুলো কুমিল্লার মানুষের হৃদয়ের কথা। যেগুলো আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। কেন পারিনি সেটা নিয়ে আমরা কাঁদা ছুড়াছুড়ি করতে পারবো। যটো আমরা কুমিল্লার মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেছি। একজনের দোষ অন্যের উপর চাপিয়ে আমরা নিজেরা মোটামুটি নিজেদেরকে মুক্ত মনে করি। এমন করলে উন্নয়ন কখনো সম্ভব হবে না।
টেবিল ঘড়ি মার্কার মেয়র প্রার্থী ও দুইবারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, মনিরুল হক চৌধুরী তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি কুমিল্লাকে নিয়ে ভাবেন। কুমিল্লায় বহু নেতাকে দেখছি কাউকে দেখিনি ওনার মত কুমিল্লার জন্য এভাবে জান দিয়ে কাজ করতে। আমাকে ২০১২ সালে একটি নতুন সিটি কর্পোরেশনে বসাইয়া দেওয়া হইছে আমি আড়াই বছর যাবৎ একটা মাস্টার প্লান তৈরি করে কাজ শুরু করি। সবাই একত্রিত হয়ে কাজ করলে শুধু ম্যাগাসিটি নয় সবই সম্ভব। সারা বাংলাদেশের মেয়রের ক্ষমতা সম্পর্কে আমি জানি আর আমাদের কুমিল্লার মেয়রের ক্ষমতাও আমি জানি। সব শুধু মেয়র দেখবো এটা ঠিক না।
মনিরুল হক চৌধুরী প্রণীত এ ধারণাপত্রের ১২ দফা কার্যক্রমকে কুমিল্লার স্বপ্নের কার্যক্রম বলে অভিহিত করেছেন উপ-নির্বাচনের ৩ মেয়র প্রার্থী সহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা। বক্তব্য শেষে মেয়র প্রার্থীরা নিজেদের জন্য ভোট চাওয়ার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বিদায় নেন।