শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
১২ শ্রাবণ ১৪৩১
রাজমিস্ত্রীর ছেলের ঢাকা মেডিকেলে
ঢামেকের ২৫০ আসনের ১টি পেল রেজাউল
সাহাব উদ্দিন অপি।।
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১:২৩ এএম |

 রাজমিস্ত্রীর ছেলের ঢাকা মেডিকেলে




রাজমিস্ত্রী শেখ আল-আমিন। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা করে একদিন অনেক বড় হবেন। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতা সেই স্বপ্ন পূরণের পথে ছিল সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। ২০০৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার, হ্যাপি আক্তারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস শুরু করেন আল-আমিন। বিয়ের আড়াই বছরের মাথায় তাদের কোল আলো করে জন্মগ্রহণ করে একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান। নাম তার শেখ রেজাউল। ডাক্তার বাড়িতে (ভাড়া বাসা) জন্ম নেওয়া সেই ফুটফুটে পুত্র সন্তান শেখ রেজাউল এ বছর চান্স পেয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ।
বাবা-মায়ের অত্যন্ত আদর, স্নেহ, ভালোবাসা ও যতেœ বেড়ে উঠা রেজাউল মেডিকেলে চান্স পাওয়ায় আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশী সবাই খুশি। মা হ্যাপি আক্তার, শিক্ষা জীবনে ক্লাসে প্রথম হওয়ার আক্ষেপটা তিনি সন্তানদের মাধ্যমে পূরণ করতে চেয়েছিলেন এবং করেছেনও তা। পরিবারের একমাত্র পুত্র সন্তান শেখ রেজাউল পিতা-মাতার নিবিড় তত্ত্বাবধানে ২০১৫ সালে জীবনের প্রথম পঞ্চম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষাতে জিপিএ ফাইভ ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি, ২০১৮ সালে অষ্টম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ এবং সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি, ২০২১ সালে জীবনের তৃতীয় বোর্ড পরীক্ষা এসএসসি-তেও জিপিএ ফাইভ ও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি এবং ২০২৩ সালের এইছএসসি বোর্ড পরীক্ষায় আবারও জিপিএ ফাইভ ও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পায়। তার ফলাফল দেখে বাবা-মা অনেক আগেই ভেবে নিয়েছে এটা তাদের ২০০৫ সালের বর্ষায় ফোঁটা একটি উজ্জ্বল কৃষ্ণচূড়া ফুল।
উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ৫ হাজার ৩৮০টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে এ বছর ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে ১ লাখ ৪ হাজার ৩৭৪ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেন। তার মধ্যে সরকারি মেডিকেল কলেজে সুযোগপ্রাপ্ত ছেলের সংখ্যা ২ হাজার ৩১২ জন। এ বছর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে ৮৪ জন মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। তার মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ১৫৬তম হয়েছে শেখ রেজাউল। ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষায় ৯২টি প্রশ্ন দাগিয়ে ৩০০ নম্বরের মধ্যে রেজাউলের মেরিট স্কোর দাড়ায় ২৮৩.২৫।
স্কুল শিক্ষিক মার্জান বিল্লাহর অনুপ্রেরণায় মনের ভেতর মেডিকেলের বীজ বুনা শেখ রেজাউল বলেন, চান্স পাওয়ার সাথে সাথে আমি সেজদায় পরে যাই। আলহামদুলিল্লাহ আমি অনেক খুশি। আমার পরিবার আমার জন্য তাদের সবটুকু দিয়ে করছে। আমি একজন ভালো ডাক্তার হয়ে তাদের মুখ উজ্জ্বল করতে চাই। শিক্ষকসহ যাদের দোয়া, ভালোবাসা, পরামর্শ, দিক-নির্দেশনা এবং সহায়তায় আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি তাদের প্রতি আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। আমার স্বপ্ন একদিন একজন ভালো কার্ডিয়াক সার্জন হয়ে আমি এ দেশের মানুষের সেবা করবো।
তার মা হ্যাপি আক্তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, আমার ছেলে একদিন আমাকে বলছিল তুমি দুঃখের কথা সুখের কথা সব আল্লাহর কাছে চাইবা আল্লাহ সব দিবে। আমি আল্লাহর কাছে চেয়েছি তিনি আমাকে পুরুষ্কৃত করেছেন। রেজাউলের মেডিকেলে চান্স পাওয়ার খবর শুনে খুশিতে আমি কান্না করে ফেলি। সে কত পরিশ্রম করছে আমি দেখছি। নামাজ খাবার ছাড়া আর কোনো কিছুতে সে সময় নষ্ট করে নাই। আমার ছেলে ডাক্তার হওয়ার পথে যাত্রা শুরু করেছে আমি অনেক খুশি।
তার বাবা শেখ আল-আমিন অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, পড়াশোনার প্রতি কখনও আমার ছেলে অবহেলা করেনি। বাবা যে তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে এটা সে বুঝতে পারতো। ঝড়-বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সে ক্লাস করতো। বাধা দিয়েও তাকে বাড়িতে রাখা যেত না। সে সবসময় সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস রাখতো। তার নৈতিকতা ও ধৈর্যের ফল আজকের এই ফলাফল। আমি সৃষ্টিকর্তার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। আমি চাই আমার সন্তান বড় হয়ে ভালো ডাক্তার হউক এবং মানুষের সেবা করুক।
ছাত্রের এমন কৃতিত্বে আবেগাপ্লুত হয়ে রসায়ন বিভাগের প্রদর্শক মোঃ বেলায়েত হোসেন বলেন, শেখ রেজাউল নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত থাকতেন। ঝড় বৃষ্টির সময়ও তাকে কখনও অনুপস্থিত থাকতে দেখিনি। পারিবারিক আর্থিক দুরাবস্থার কথা জেনে তার পাশে থাকতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। আমার ছাত্র দেশ মাতৃকার সেবায় আত্মনিয়োগ করবে শিক্ষক হিসেবে এটাই বড় প্রাপ্তি।
ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ড. আবু জাফর খান বলেন, বাবা-মা, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী এই তিনটা চাওয়া যখন একত্র হয় তখন সাফল্যটা খুব সহজ হয়। আমাদের কলেজ থেকে এখন পর্যন্ত ৮৪ জনের তালিকা আমরা পেয়েছি। আরও চান্স পাবে ইনশাল্লাহ। প্রত্যেকে একদিন এ দেশ এবং দেশের মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করবে ইনশাআল্লাহ।
ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে স্কুলে আসা, নিয়মিত ক্লাস করা, সময়কে গুরুত্ব দেওয়া, সৃষ্টিকর্তার প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস, শিক্ষকদের সঠিক দিক-নির্দেশনায় মেডিকেলে চান্স পাওয়া রেজাউল একদিন বাবা-মায়ের অপ্রাপ্তির আক্ষেপগুলো প্রাপ্তিতে পরিপূর্ণ করবে। তার মতো মেডিকেলে সুযোগ পাওয়া প্রত্যেকটি মেধাবী সোনার সন্তান একদিন দেশ এবং দেশ-মাতৃকার জন্য অবদান রাখুক এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।













সর্বশেষ সংবাদ
শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি
অপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করুন : প্রধানমন্ত্রী
গ্রেপ্তার বাড়ছে কুমিল্লায়
চিরচেনা রূপে অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
আহতদের চিকিৎসা ও রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
শিক্ষার্থীদের আমি রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
কুমিল্লায় আট মামলায় গ্রেপ্তার দেড় শতাধিক
আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
অফিসে হামলার সময় চেয়ে চেয়ে দেখলেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আন্দালিভ রহমান পার্থ ৫ দিনের রিমান্ডে
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft