আগের
ম্যাচে অল্পতে ফেরার আক্ষেপ এবার যেন পুষিয়ে নিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
খুনে ইনিংসে স্পর্শ করলেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির
রেকর্ড। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে দলকে এনে দিলেন বিশাল সংগ্রহ। এরপর
মিলিত চেষ্টায় বাকিটা সারলেন বোলাররা। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সিরিজ
নিশ্চিত করল অস্ট্রেলিয়া।
অ্যাডিলেইডে রোববার সিরিজের দ্বিতীয়
টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার জয় ৩৪ রানে। ম্যাক্সওয়েলের সৌজন্যে এদিন ২৪১
রান করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আন্তর্জাতিক
টি-টোয়েন্টিতে যা সর্বোচ্চ। জবাব দিতে নেমে ২০৭ রানে থামে ক্যারিবিয়ানরা।
প্রথম ম্যাচেও দুই দল পার করেছিল দুইশ রান। যেখানে ১১ রানে জিতেছিল মিচেল মার্শের দল।
অস্ট্রেলিয়ার
এবারের জয়ের নায়ক ম্যাক্সওয়েল করেন অপরাজিত ১২০ রান। তার ৫৫ বলের বিস্ফোরক
ইনিংসটি গড়া ৮ ছক্কা ও ১২ চারে। এমন পারফরম্যান্সের পর তিনিই ম্যাচ সেরা।
এই
ইনিংসের পথে ম্যাক্সওয়েল আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি
করা ভারতের রোহিত শার্মাকে স্পর্শ করেন। দুজনেরই সেঞ্চুরির সংখ্যা এখন
পাঁচটি।
অস্ট্রেলিয়ার সফলতম বোলার মার্কাস স্টয়নিস, ৩৬ রানে ৩ উইকেট নেন
এই মিডিয়াম পেসার। দুটি করে প্রাপ্তি দুই পেসার জশ হেইজেলউড ও স্পেন্সার
জনসনের।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই জশ ইংলিসকে হারায়
অস্ট্রেলিয়া। এরপর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দলের রানের চাকা সচল রাখেন মার্শ ও
ডেভিড ওয়ার্নার। পরপর দুই ওভারে এই দুইজনের বিদায়ে কিছুটা চাপে পড়ে
স্বাগতিকরা।
কিন্তু দলের ওপর সেই চাপ জেঁকে বসতে দেননি ষষ্ঠ ওভারে
ক্রিজে যাওয়া ম্যাক্সওয়েল। মুখোমুখি হওয়া সপ্তম বলে আকিল হোসেনকে ছক্কায়
উড়িয়ে ডানা মেলে দেন তিনি। এরপর আর তাকে থামাতে পারেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের
কেউ।
প্রতিপক্ষের বোলারদের ওপর ঝড় বইয়ে দিয়ে ২৫ বলেই ফিফটিতে পা রাখেন
ম্যাক্সওয়েল। স্টয়নিসের সঙ্গে ৪২ বল স্থায়ী ৮২ রানের জুটিতে তার অবদানই ২৭
বলে ৫৭। স্টয়নিসের বিদায়ের পর টিম ডেভিডকে নিয়ে দলের রান বাড়ান তিনি।
ঝড়ো
ব্যাটিংয়ে ৫০ বলে কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কের ঠিকানায় পৌঁছান ম্যাক্সওয়েল।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে গত তিন ইনিংসে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। শতকের
পর আরও এগিয়ে দলের রান আড়াইশর কাছে নিয়ে যান তিনি।
ম্যাক্সওয়েল ও ডেভিডের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৩৯ বলে আসে ৯৫ রান। ১৪ বলে দুটি করে ছক্কা-চারে ৩১ রান করেন ডেভিড।
বিশাল
রান তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুর ব্যাটসম্যানরা করতে পারেননি কিছুই। দলটির
প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের পাঁচজনই খেলতে পারেননি বড় ইনিংস। মূলত সেখানেই
ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে সফরকারীরা।
৬৩ রানে ৫ উইকেট হারানো দলের হয়ে একাই
লড়াই করেন রভম্যান পাওয়েল। তাকে কিছুক্ষণ সঙ্গ দেন আন্দ্রে রাসেল। তাদের ৪৭
রানের জুটি ভাঙে ১৬ বলে ৩৭ রান করা রাসেলের বিদায়ে। ৪ ছক্কা ও ৫ চারে ৩৬
বলে ৬৩ রান করেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক পাওয়েল। এছাড়া চল্লিশ স্পর্শ করতে
পারেননি দলটির আর কেউ।
১৯তম ওভারে আলজারি জোসেফ রান আউট হয়ে গেলে আরও বড়
ব্যবধানেই হারত ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু আবেদন না করায় রান আউট চেকই করেননি
আম্পায়াররা! সে সময় ব্যাটসম্যান ছিলেন বেশ দূরে। ডেভিড দাবি করেন, তিনি
আবেদন করেছিলেন। এ নিয়ে বেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠা পরিস্থিতি ঠা-া করেন অধিনায়ক
মার্শ।
শেষ দিকে জেসন হোল্ডারের ১৬ বলে ২৮ রানের অপরাজিত ইনিংসে দুইশ পার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও কমে হারের ব্যবধান।
সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি মঙ্গলবার, পার্থে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া:
২০ ওভারে ২৪১/৪ (ওয়ার্নার ২২, ইংলিস ৪, মার্শ ২৯, ম্যাক্সওয়েল ১২০*,
স্টয়নিস ১৬, ডেভিড ৩১*; আকিল ৩-০-৩২-০, হোল্ডার ৪-০-৪২-২, জোসেফ ৪-০-৩১-১,
রাসেল ৪-০-৫৯-০, শেফার্ড ৪-০-৪৮-১, পাওয়েল ১-০-১৮-০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০
ওভারে ২০৭/৯ (কিং ৫, চার্লস ২৪, পুরান ১৮, হোপ ০, পাওয়েল ৬৩, রাদারফোর্ড ০,
রাসেল ৩৭, শেফার্ড ১২, হোল্ডার ২৮*, আকিল ০, জোসেফ ২*; বেহরেনডর্ফ
৪-০-৫৫-১, হেইজেলউড ৪-১-৩১-২, জনসন ৪-০-৩৯-২, স্টয়নিস ৪-০-৩৬-৩, জ্যাম্পা
৪-০-৩৯-১)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৩৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: গ্লেন ম্যাক্সওয়েল
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ২-০তে এগিয়ে