![স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির কোনো বিকল্প নাই]( https://comillarkagoj.com:443/2024/02/09/CK_1707420896.jpg)
ব্যাংক খাতে সুশাসন
প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রণীত নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিকল্পনাকে
আমরা সতর্কতার সাথে স্বাগত জানাই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারক
পর্যায়ের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে
চলমান বৎসরব্যাপী প্রতিটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ, করপোরেট সুশাসন, তারল্য ও
মূলধন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে। তার ভিত্তিতে আগামী বছরের মার্চে
দুর্বল ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হবে।
প্রথম পদক্ষেপ হবে
দুর্বল ব্যাংকের বিভিন্ন সুবিধা বন্ধ করা এবং প্রত্যাশিত ফল না মিলিলে
শেষমেশ সবল ব্যাংকের সাথে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করা। আমরা আশাবাদী,
পরিকল্পনাটির যথাযথ বাস্তবায়নে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা পেতে পারে,
মূলত যার ঘাটতি দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই খাতে
বিদ্যমান দুর্দশা ডেকে আনছে বলে অর্থনীতিবিদসহ সচেতন সকল মহল একমত।
বিশেষজ্ঞগণ এ বিষয়েও একমত, দেশে চাহিদার তুলনায় ব্যাংকের সংখ্যা অত্যধিক।
যার কারণে সৃষ্ট অসুস্থ প্রতিযোগিতা অদক্ষ ব্যাংকগুলিকে বিশেষত চরম মূলধন
ঘাটতিতে ফেলেছে। উপরন্তু নিছক রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদনপ্রাপ্ত অধিকাংশ
বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের উদ্দেশ্য শেয়ারের বিপরীতে
লভ্যাংশপ্রাপ্তি অপেক্ষা পর্ষদে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বেনামে ঋণ
অনুমোদনপূর্বক অর্থ আত্মসাৎ বা বিদেশে পাচার করা। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ
বর্তমানে পর্বতসম হবার পশ্চাতে এর ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না।
সত্য,
খেলাপি ঋণে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবদান বেসরকারি ব্যাংকের তিন
গুণেরও অধিক-প্রথমোক্তদের খেলাপি ঋণ ২১ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং শেষোক্তদের ৭
দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। অতএব রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের প্রয়োজনীয় সংস্কার ব্যতীত
অন্তত খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির প্রত্যাশিত উন্নতি আশা করা যায় না। এ কারণেই
আমরা মনে করি, কেন্দ্রীয় বাংকের প্রস্তাবিত ব্যবস্থাবলির মধ্যে ব্যাংক
খাতের আইনি কাঠামোর সংস্কারও থাকতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যবস্থাপনা
কর্তৃপক্ষ নিয়োগসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক খাতের উপর মূলত নিয়ন্ত্রণ হল অর্থ
মন্ত্রণালয়ভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের। যে কারণে এ সকল প্রতিষ্ঠান হতে
রাজনৈতিক বিবেচনায় শত-সহস্র কোটি টাকা ভুয়া ঋণ বের করা অনেক সহজ।
আবার,
এ সকল ব্যাংকের দৈনন্দিন কর্মকা- তদারকিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যতটুকু আইনি
কর্তৃত্ব আছে, ইহাও রহস্যজনক কারণে অনেকাংশে অকার্যকর। এ কেন্দ্রীয়
ব্যাংকই প্রভাবশালীদের চাপের নিকট নতি স্বীকার করে পুনঃপুন সংশোধনপূর্বক
ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর এমন হাল করেছে, যার ফলস্বরূপ অধিকাংশ
বেসরকারি ব্যাংক করেপোরেট প্রতিষ্ঠানের স্থলে কার্যত ব্যক্তিগত বা
পারিবারিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে রূপ পরিগ্রহ করেছে। এখানে আমাদের
সন্দেহ-ব্যাংক খাত সংস্কারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিকল্পনা হালে আদৌ পানি
পাবে কিনা।
তবে আর্থিক ও ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার
কোনো বিকল্প নেই। বিশেষত পুঁজি সংগ্রহের প্রধান খাত শেয়ারবাজার যখন ভঙ্গুর
দশায়, তখন শিল্পায়ন ও ব্যবসায় সমৃদ্ধির প্রধান ভরসা ব্যাংক খাতকে ঘুরে
দাঁড়াতে হবে।