কয়েক বছর ধরেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সবচেয়ে বড় সমস্যা। কোনোভাবেই এই সংকট থেকে মুক্তি মিলছে না। দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দীর্ঘদিন ধরে ৯ শতাংশের বেশি। গত ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৪২ শতাংশ।
গ্রাম-শহর-নির্বিশেষে খাদ্যমূল্যের স্ফীতি ছিল ৯.৫৮ শতাংশ, অর্থাৎ এক বছর আগের চেয়ে অতিরিক্ত দামে মানুষকে খাদ্য কিনতে হচ্ছে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির তুলনায় সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরো কঠিন করে তুলছে। কোনো ব্যবস্থাই বেশির ভাগ পণ্যের মূল্য কমাতে পারছে না।
সরকারি দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যে ১১টি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করে, তার শুরুতেই বলা হয়েছে দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা। এখন নতুন করে আর বলার দরকার পড়ে না যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণই সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের মানুষকে যদি নিয়ন্ত্রিত মূল্যে নিত্যপণ্য সরবরাহ করা যায়, তাহলে সমাজের অনেক সংকট দূর হয়ে যাবে। নি¤œ আয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আয় ও ব্যয়ের সামঞ্জস্য হারিয়েছে।
চালের দাম বাড়ছে। সামনে রোজা আসছে। রোজার আগেই তো নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়তির দিকে। প্রতিবছর বাজারে নতুন পেঁয়াজ ও আলুর সরবরাহ শুরু হলে দাম কমে আসে। কিন্তু এবার ভরা মৌসুমেও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছিল আলু।
ভরা মৌসুমে খুচরা পর্যায়ে শতক ছুঁয়েছে পেঁয়াজের দাম। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার কিছু উদ্যোগও নিচ্ছে। আলু আমদানি করা হচ্ছে। আমদানির খবরে সারা দেশেই আলুর দাম কমে গেছে। বাজার পর্যবেক্ষকদের ধারণা, পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলে এটিও ক্রেতার নাগালে চলে আসবে। ওদিকে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সচিবসভায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে পণ্য সরবরাহের বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে নজরদারি করতে বলেছেন। এর আগে মন্ত্রিপরিষদের সভায় পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে ভোজ্য তেল, চিনি, চাল, খেজুুর-এই চার পণ্যে শুল্ক কমানোর জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এসব পণ্যের শুল্ক কমাতে এরই মধ্যে এনবিআরকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ ও তা মেনে চলতে বাধ্য করা প্রয়োজন। বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের সামঞ্জস্য নিশ্চিত করতে সময়মতো আমদানির উদ্যোগ নেওয়া দরকার।