![বাড়ছে ক্যান্সারের প্রকোপ]( https://comillarkagoj.com:443/2024/02/06/CK_1707160571.jpg)
সারা বিশ্বেই ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের
সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যান্সারবিষয়ক আন্তর্জাতিক
গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইএআরসি) তথ্য মতে, ২০২২ সালে বিশ্বে নতুন করে দুই
কোটি মানুষের ক্যান্সার শনাক্ত হয়েছে। এ বছর মৃত্যু হয়েছে ৯৭ লাখ মানুষের।
বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীদের সঠিক হিসাব না থাকলেও বিশেষজ্ঞদের মতে, এই
সংখ্যা ২০ লাখের কম নয়।
প্রতিবছর নতুন করে শনাক্ত হয় দুই লাখের বেশি।
আইএআরসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশে মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ১৬ হাজার
৫৯৮ ক্যান্সার রোগীর। জাতীয়ভাবে স্ক্রিনিং বা রোগী শনাক্তের কর্মসূচি নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিকভাবে শনাক্ত করা গেলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আরো
অনেক বেশি হতো।
ক্যান্সার হয়েছে কি না, তা জানার আগেই অনেক দরিদ্র
মানুষের মৃত্যু হয়। অনেকে অসুস্থতার কথা জানতে পারলেও অর্থাভাবে চিকিৎসা
করাতে পারে না। আবার অনেকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে মাঝপথে
চিকিৎসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশে চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধাও অত্যন্ত
সীমিত। এ কারণেও নি¤œ আয়ের মানুষ চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্যের শিকার
হয়।
দেশে ক্যান্সার চিকিৎসার এমন দুরবস্থার মধ্যে বাংলাদেশেও পালিত
হয়েছে বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। এবার ক্যান্সার দিবসের প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশের
মতো দেশগুলোর বাস্তব অবস্থার প্রতিফলন ঘটেছে। বলা হয়েছে, ‘বৈষম্য দূর করি,
ক্যান্সার চিকিৎসা নিশ্চিত করি’। দিবস উপলক্ষে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত
প্রতিবেদনেও ক্যান্সার চিকিৎসার দুরবস্থা ও বৈষম্যের চিত্র উঠে এসেছে।
ক্যান্সার
চিকিৎসা এখনো মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের কোনো রোগীর
পক্ষে এখানে থেকে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নেওয়া কঠিন হয়ে যায়। সরকারি
হাসপাতালগুলোতে প্রচ- ভিড়। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ আকাশছোঁয়া।
পিইটি সিটি স্ক্যান নামের একটি পরীক্ষায় বেসরকারি হাসপাতালে ৬৫ থেকে ৭০
হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। সরকারি হাসপাতালে খরচ অর্ধেকের মতো হলেও
সিরিয়াল পেতে কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হয়। কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি,
অস্ত্রোপচার—সবই অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল
বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো.
নাজিম উদ্দিন মোল্লা জানান, রেডিওথেরাপি যন্ত্রটি ক্যান্সার চিকিৎসায়
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, প্রতি ১০
লাখ মানুষের জন্য একটি মেশিন দরকার। সে হিসাবে থাকা দরকার ১৭০টি যন্ত্র।
সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে আছে মাত্র ২০টি মেশিন। এরও অর্ধেকের বেশি নষ্ট
থাকে। বিএসএমএমইউতে একটি মেশিন আছে। সেটিও সব সময় সচল থাকে না। বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসকেরও অভাব রয়েছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস)
এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন রোগীর চিকিৎসায়
গড়ে পাঁচ লাখ ৪৭ হাজার ৮৪০ টাকা পকেট থেকে খরচ করতে হয়। রোগীর অবস্থাভেদে
এই খরচ জনপ্রতি সর্বনি¤œ ৮১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়।
দরিদ্র রোগীদের পক্ষে এই ব্যয় নির্বাহ করা প্রায় অসম্ভব। অন্যদিকে সরকারি
হাসপাতালে কিছু ওষুধ বিনা মূল্যে দেওয়া হলেও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে তার
জন্যও রোগীদের অর্থ দিতে হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, জরুরি ভিত্তিতে জাতীয়
ক্যান্সার তহবিল গঠন করে দরিদ্র রোগীদের সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে চিকিৎসা
প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতি মোকাবেলায় সারা দেশে
ক্যান্সার চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা ছড়িয়ে দিতে হবে। শেষ সময়ে যন্ত্রণাদায়ক
মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে চিকিৎসার পাশাপাশি প্যালিয়েটিভ কেয়ারের
সুযোগ-সুবিধাও বাড়াতে হবে।