![মার্চে উপদ্রব বাড়ার শঙ্কা]( https://comillarkagoj.com:443/2024/02/05/CK_1707073706.jpg)
কীটতত্ত্ববিদ ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশাবাহিত রোগসহ কিছু রোগব্যাধি দ্রুত ছড়াচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এ জন্য বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনকেই বেশি দায়ী করছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, উপযুক্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আগামী দিনগুলোতে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, ডায়রিয়াসহ পানি ও কীটপতঙ্গবাহিত রোগ ক্রমেই বাড়বে।
বাস্তবেও তা-ই দেখা যাচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, রাজধানীতে গত চার মাসে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে তিন শর বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ফাঁদে ধরা পড়েছে। এর আগে গত অক্টোবর ও নভেম্বরে এ সংখ্যা ছিল দুই শর কম।
এ ধারা চলতে থাকলে আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত তা বেড়ে চরমে পৌঁছাতে পারে।
ফাঁদে যে পরিমাণ মশা ধরা পড়েছে তার ৯৯ শতাংশ কিউলেক্স। বৃষ্টিপাত না হলে এবং পানি বহমান না থাকলে কিউলেক্স মশা জন্মানোর হার বেড়ে যায়। এখন নর্দমা, ড্রেন ও ডোবার পানি পচে গেছে।
শীতের শেষে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে প্রকৃতিতে থাকা মশার ডিমগুলো একযোগে ফুটতে শুরু করবে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। বিশেষজ্ঞরা বারবারই বলেছেন, বাংলাদেশের মতো উষ্ণ-আর্দ্র আবহাওয়া যেকোনো কীটপতঙ্গের প্রজনন ও বৃদ্ধির উপযোগী। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যে ১২৬ প্রজাতির মশা চিহ্নিত হয়েছে, তার মধ্যে রোগ ছড়ায় মাত্র ২২ প্রজাতির মশা। এডিস মশা ছড়ায় ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া। ম্যালেরিয়া ছড়ায় অ্যানোফিলিস; ফাইলেরিয়া ছড়ায় কিউলেক্স।
জাপানি এনসেফালাইটিস ছড়ায় কিউলেক্স ও ম্যানসোনিয়া মশা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেছেন, তাঁদের হিসাব মতে, কিউলেক্স মশা ফেব্রুয়ারি-মার্চে বেড়ে যাবে। মশার এই উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে এর মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশন কর্মপরিকল্পনা ২০২৪ প্রণয়ন করেছে এবং বিশেষ কিছু কাজ শুরু হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য বিশেষ অভিযান চালানো হয়েছে। খাল উদ্ধার করার পাশাপাশি আবর্জনাভরা শত শত বিঘা জলাশয়ের কচুরিপানা গত জানুয়ারিতে পরিষ্কার করা হয়েছে। মশা নিধনে যেসব ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর কার্যকারিতা নতুন করে দেখা হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আদি বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত পরিষ্কার হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে খাল ও জলাশয় পরিষ্কার খুব ভালো হয়েছে। শুরু থেকে মশা নিধন কার্যক্রম থাকায় কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কিউলেক্স মশার পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। শুধু সিটি করপোরেশন নয়, নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। সহযোগিতা করতে হবে।
উষ্ণ-আর্দ্র আবহাওয়া থাকার কারণে বাংলাদেশ মশা ও মশাবাহিত রোগ বিস্তারের জন্য উত্তম জায়গা। বছরের শুরু থেকে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতালে। সবাইকে সমন্বিতভাবে মশা নিধনে উদ্যোগ নিতে হবে।