শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
১২ শ্রাবণ ১৪৩১
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিকে জানায় সাধুবাদ
অধ্যাপক ড. মো. মোতাহার হোসেন
প্রকাশ: রোববার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ১২:৫৬ এএম |



প্রতিনিয়তই বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। নি¤œ আয়ের দেশের গ্লানি থেকে মুক্তি পেয়ে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। কিন্তু চলমান অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথে দুর্নীতি একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গিয়েছে।
অর্থনীতির আকার যত বড় হচ্ছে, এই চ্যালেঞ্জ ততই বেশী দৃশ্যমান হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ৪৬০ বিলিয়ন ডলারের বেশি । এর যদি এক শতাংশও দুর্নীতি হয় তার প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।  দুর্নীতি একটি দেশের অর্থনীতিকে ভিতর থেকে ভঙ্গুর করে দেয়। অপর দিকে দুর্নীতি আন্তর্জাতিক মহলেও দুর্নাম বয়ে নিয়ে আসে যার সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উপর।
অনেক আর্থ-সামাজিক সমস্যার জন্য দুর্নীতি দায়ী। দুর্নীতির কারণেই সমাজের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে, ধনী-গরিবের মধ্যে ব্যবধান বাড়ে এবং সাধারণ নাগরিকদের দেশপ্রেম হ্রাস পায়। দুর্নীতি একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত, যা থেকে পৃথিবীর কোনো দেশই মুক্ত নয়। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের বাস্তবতায় বাংলাদেশও কোন ব্যতিক্রম নয়। অভাব-অনটন, নৈতিক অবক্ষয়, সুশিক্ষার অভাব, অস্বচ্ছতা, দুর্বল প্রশাসনিক কাঠামোসহ আরও অনেক কারণ দুর্নীতির জন্য দায়ী।
দুর্নীতি এক ধরনের অসততা যার বহিঃপ্রকাশ হলো  ঘুষ, স্বজনপ্রীতি, হয়রানি ও ক্ষমতার অপব্যবহার । তাই বিশাল ও জটিল এই সমস্যা মোকাবিলায় দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কোন বিকল্প নেই।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মত দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার নিলো দেশের অন্যতম জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। চলতি মেয়াদে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাস-মাদক-জঙ্গিবাদের মতো দুর্নীতির বিরুদ্ধেও আমাদের অবস্থান ‘জিরো টলারেন্স’।
নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের এই নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতিমুক্ত সুশাসনের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের অন্তর্ভুক্তি দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার দৃঢ় রাজনৈতিক সংকল্পেরই প্রতিফলন। সে অঙ্গীকার বাস্তবায়নে তিনি সচেষ্ট থাকবেন- এই বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই । দুর্নীতির বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের এই কঠোর অবস্থান সুধী সমাজসহ সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে।
দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে এমন কঠোর অবস্থানে আগে থেকেই ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত মেয়াদে তার নির্দেশনায় দেশজুড়ে চলেছে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান। ছাড় দেয়া হয়নি প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাকে। দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়েছিল কঠোর ব্যবস্থা।
করোনাকালে দুর্নীতির জন্য স্বাস্থ্য খাতের হর্তাকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং কঠোর হস্তে অনিয়ম-দুর্নীতি দমনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তিনি। দেশের কয়েকটি স্থানে ত্রাণ বিতরণ নিয়ে দলের কয়েকজন নেতা ও জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নেয়া হয়। এর মাধ্যমে সরকার ও দলের মধ্যে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার নীতির প্রতিফলন ঘটান তিনি। তিনি সকলকে এই বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছিলেন যে দুর্নীতিবাজ যতই ক্ষমতাবান হোন না কেন তাকে কোনভাবেই রেহাই দেওয়া হবে না।
শেখ হাসিনার সরকারই দুর্নীতি দমনের জন্যে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন করেছেন যা চারিত্রিক সাধুতা বা শুদ্ধতা অর্জন ও দুর্নীতি দমনের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জাতীয় একটি কৌশল-দলিল হিসেবে কাজ করছে। এই কৌশল বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক আইনকানুন ও বিধি-বিধানের সুষ্ঠু প্রয়োগ, পদ্ধতিগত সংস্কার ও উন্নয়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সবার চরিত্র নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গৃহীতব্য কার্যক্রমও চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার মধ্যে সমন্বয়, উন্নত নিয়ন্ত্রণ কাঠামো ও তদারকি ব্যবস্থা, বিভিন্ন স্তরে জাতীয় দুর্নীতি প্রতিরোধ কাঠামো, উন্নত শাসন ব্যবস্থা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক এবং কমিউনিটি পর্যায়ে বিভিন্ন পদ্ধতি গৃহীত হয়েছে। ইতোমধ্যে সব স্তরে দুর্নীতি প্রতিরোধে ফৌজদারি আইন, স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্যের অধিকার নিশ্চিতে তথ্য কমিশন, মানী লন্ডারিং আইন, সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ, সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধে পারস্পরিক আইনি সহায়তা, সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম প্রতিরোধসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও দুর্নীতি রোধে মনিটরিং, ব্যাংক হিসাব জব্দ, বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও সামাজিক অপরাধ রোধে সরকার কাজ করছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও সুশাসন খুবই জরুরী। তিনি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেমন কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, তেমনি ৭ম জাতীয় বেতন স্কেলের মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা বাড়িয়েছেন। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার জন্য গণশুনানির ব্যবস্থাও করেছেন। এই সকল উদ্যোগ মাঠ পর্যায়ে দুর্নীতি দমনে সাহায্য করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্তমান বিশ্বে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে একটি আদর্শ অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত এক দশকে যে কয়েকটি দেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকগুলোতে অনেককে পেছনে ফেলে এখন সামনের সারিতে বাংলাদেশ। এটা সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে।
বাংলাদেশের পরবর্তী লক্ষ্য ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের কাতারে যাওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে উঠা। তবে এই কঠিন লক্ষ্যে পৌঁছানোর একটি পূর্বশর্ত হচ্ছে দুর্নীতি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া।
তাই তো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যথার্থই দেশের উন্নয়ন‐অগ্রগতির মূল চ্যালেঞ্জটিকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করেছেন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। এ কারণে দেশের সুশীল সমাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতিবিরোধী দৃঢ় প্রতিশ্রুতিকে সাধুবাদ জানায় এবং প্রত্যাশা করে যে সরকারের ইতিমধ্যে গৃহীত দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপগুলি বর্তমান মেয়াদেও অব্যাহত থাকবে, এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
তবেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গীকার দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক সাফল্যে রূপান্তরিত হবে বলে সচেতন মহলের দৃঢ় বিশ্বাস।
লেখক: পরিচালক, আইকিউএসি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।












সর্বশেষ সংবাদ
শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি
অপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করুন : প্রধানমন্ত্রী
গ্রেপ্তার বাড়ছে কুমিল্লায়
চিরচেনা রূপে অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
আহতদের চিকিৎসা ও রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
শিক্ষার্থীদের আমি রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
কুমিল্লায় আট মামলায় গ্রেপ্তার দেড় শতাধিক
আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
অফিসে হামলার সময় চেয়ে চেয়ে দেখলেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আন্দালিভ রহমান পার্থ ৫ দিনের রিমান্ডে
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft