জনশক্তি রপ্তানি আমাদের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখে। বর্তমান সময়ে দক্ষতার বিকল্প নেই। দক্ষ জনশক্তির রপ্তানি বাড়াতে পারলে রেমিট্যান্সও বাড়বে, তাতে আমাদের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাতটি আরো শক্তিশালী হবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিদেশে কাজ করার উদ্দেশ্যে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা গত এক বছরে ১৩ শতাংশ বেড়েছে, যা দেশের জন্য একটি মাইলফলক।
তবে সে তুলনায় রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়েনি। পাশাপাশি ১৭৬টি দেশে কর্মী যাওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ছয়টি দেশে পর্যাপ্তসংখ্যক কর্মী গেছেন।
আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের বাস্তবতায় বাংলাদেশের শ্রমিকরা তুলনামূলকভাবে অদক্ষ। অনেক পেশায় আমাদের কর্মীরা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দক্ষতা অর্জন করতে পারেননি।
তাই ভালো ও বেশি আয়ের পেশায় বাংলাদেশিদের নিয়োগ কম। আর সে কারণেই আমাদের লক্ষ্য হওয়া দরকার দক্ষ কর্মী তৈরি করা। আমাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ১০৪টি প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে। সরকারের প্রকল্প মনিটরিংয়ের প্রতিষ্ঠান আইএমইডি বলছে, প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলো আন্তর্জাতিক চাহিদা মেটাতে পারছে না।
প্রশিক্ষকের অভাব, আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ না হওয়ায় দক্ষ কর্মী তৈরি করতে পারছে না তারা। এই প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোর আধুনিকায়ন করা দরকার। প্রশিক্ষণ নিতে আসা কর্মীদের মধ্যে দক্ষতা ছড়িয়ে দেওয়া দরকার।
বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা বিদেশের শ্রমবাজারগুলোর চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে এগোতে পারছি না। যথেষ্ট পরিমাণে দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে পারছি না।
এখনকার চাহিদা মেটানোর জন্যও কারিগরি শিক্ষা এবং প্রাথমিক পর্যায়ে কারিগরি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। যুগোপযোগী শিক্ষা কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্থানীয় সম্পদ ও স্থানীয় মানবসম্পদ ব্যবহারের এক সুযোগ তৈরি হবে। যথাযথ শিক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিদেশে শ্রমশক্তির চাহিদা পূরণ করতে পারবে। আন্তর্জাতিক চাহিদার প্রেক্ষাপটে কারিগরি শিক্ষার ধরনের মধ্যে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা পূরণ করার ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। দেশের বাইরের চাহিদার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর সুবিধাও অনেক। একজন দক্ষ শ্রমিক কয়েকজন অদক্ষ শ্রমিকের সমান রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয় দেশে পাঠাতে পারেন। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্পে অগ্রবর্তী একটি দেশ। আমাদের প্রচুর দক্ষ শ্রমিক রয়েছেন। এই ক্ষেত্রটিতে বিদেশের বাজারে আমরা নিয়মিত খোঁজখবর রেখে আরো অনেক শ্রমিক পাঠাতে পারি। এ ক্ষেত্রে প্রেরিত শ্রমিকদের দক্ষতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই শ্রমিক পাঠাতে হবে।
যেকোনো দেশে মানুষই সম্পদ। মানুষের শ্রমে-ঘামে-মেধায়-পরিকল্পনায় একটি দেশ বা জাতির অগ্রগতি নিশ্চিত হয়। দেশের অভ্যন্তরে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা যখন ক্রমেই বাড়ছে, তখন দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার বিষয়টি আরো গুরুত্ব নিয়ে সামনে আসছে। বিশ্ববাজারের চাহিদার ভিত্তিতে বাংলাদেশে বিপুল কর্মক্ষম মানুষকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। অনেক দেশ চাকরির বাজার অনুযায়ী বা ‘জব মার্কেট ওরিয়েন্টেড’ শিক্ষাব্যবস্থা সাজায়। জনশক্তিকে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে জনসংখ্যা জনসম্পদে পরিণত হবে।