শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
১২ শ্রাবণ ১৪৩১
বিজয়ের মাস
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৩, ১২:১৩ এএম |

বিজয়ের মাস
বিশেষ প্রতিনিধি ॥ স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের অনন্য ও ঐতিহাসিক দিন আজ। ১৯৭১ সালে রণাঙ্গনে পাক হানাদারদের পরাজয়ের শেষ পেরেক ঠুকে দেয় বন্ধু রাষ্ট্র ভারত। ইতিহাসের চাকাই পাল্টে যেতে শুরু করে। একাত্তরের রক্তক্ষরা এই দিন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয় ভারত। ভারতের স্বীকৃতি বাংলাদেশের মুক্তির লড়াইয়ের গন্তব্য আরও নিশ্চিত করে দেয়। রণযুদ্ধের পাশাপাশি কূটনৈতিক যুদ্ধেও পরাজিত হতে থাকে হানাদাররা। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নিতে প্রহর গুণতে থাকে বাংলার মুক্তিপাগল দামাল ছেলেরা।
এর আগে ৪ ডিসেম্বরই মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ যুগ্ম দস্তখতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার অনুরোধ করেন। ইন্দিরা গান্ধী সরকার ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ইন্দিরা গান্ধী ফিরতি চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদকে বলেন, ‘পত্র পাওয়ার পর আপনাদের সাফল্যজনক নেতৃত্বে পরিচালিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতিদান সংক্রান্ত আপনাদের অনুরোধ ভারত সরকার পুনরায় বিবেচনা করেছে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার চিঠিতে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের ঘোষণা দিয়ে লিখেন- ‘আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, বর্তমান যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার প্রেক্ষাপটে ভারত সরকার আপনাদের স্বীকৃতিদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ...পথ যতই দীর্ঘ হোক না কেন এবং ভবিষ্যতে আমাদের জনসাধারণের যতই ত্যাগ স্বীকার করতে হউক না কেন, বিজয়মালা আমরা বরণ করবই।’
স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। নিজেদের পরাজয় ঠেকাতে পাক হানাদার বাহিনী যুদ্ধের মাঠে এবং পাকিস্তান সরকার কূটনৈতিক পর্যায়ে মরণকামড় দিচ্ছিল। কিন্তু যুদ্ধের মাঠের মতো কূটনৈতিক পর্যায়েও একের পর এক পরাজয় ঘিরে ফেলে পাক জান্তাদের। অন্যদিকে সম্মুখযুদ্ধে একের পর এক জেলা জয় করে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা জয় করতে ক্রমশ এগিয়ে আসতে শুরু করে।
ভারতের স্বীকৃতি মুক্তিসেনাদের মনোবল বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। নতুন রাষ্ট্র তথা জন্মভূমি আদায়ের অভিলাষে শহর আর গ্রামের বাড়িঘর, মুক্তিসেনা ক্যাম্পগুলোতে উল্লাস বইয়ে যায়। রক্তাক্ত ও নিষ্ঠুর একটি যুদ্ধের সূচনাকারী পাক হানাদারদের বিমান- তৎপরতা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ডের কাছে স্বাধীন হয় বাংলার আকাশ।
বাংলাদেশে পাক বিমানবাহিনীর প্রায় সব বিমান এবং বিমানবন্দরই তখন বিধ্বস্ত। গোটা দিন ভারতীয় জঙ্গী বিমানগুলো অবাধে আকাশে উড়ে পাক সামরিক ঘাঁটিগুলোতে প্রচন্ড আক্রমণ চালাল। ভারতীয় বিমানবাহিনীর হিসাব মতে, ১২ ঘণ্টায় ২৩০ বার আক্রমণ চালানো হয় পাক ঘাঁটিগুলোতে। তেজগাঁও ও কুর্মিটোলা বিমান ঘাঁটিতে ৫০ টনের মতো বোমা ফেলা হয়। তীব্র বিমান আক্রমণে বড় রাস্তা দিয়ে পাক সেনাবাহিনীর যাতায়াতও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
বলতে গেলে পুরো আকাশ ভারতীয়, মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দখলে চলে আসে। শুধু আকাশেই নয়, স্থলেও মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী ঢাকার দিকে এগিয়ে চলে বীরদর্পে। একে একে জেলাগুলো শত্রুমুক্ত হচ্ছে, উড়ছে রক্তস্নাত মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। চলছে জেলায় জেলায় বিজয় উল্লাস, আর নতমস্তকে হানাদারদের আত্মসমর্পণের চিত্র।
যুদ্ধের বাস্তব অবস্থা বুঝতে পারলো পাক জল্লাদ জেনারেল নিয়াজিও। চতুর্দিক থেকে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রগতির খবর পৌঁছালো ঢাকায়। সেই সঙ্গে আসতে থাকল দেশের অধিকাংশস্থানে পাকবাহিনীর বিপর্যয়ের খবর। নিয়াজি আরও জানতে পারল মিত্রবাহিনীর সবকটা কলাম মূল পাক ঘাঁটি এবং সুরক্ষিত পথগুলো এড়িয়ে এগিয়ে এসেছে। নিয়াজিসহ পাক সমর নায়করা বুঝলেন, মিত্রবাহিনী ঢাকার দিকে এগোবেই। নিয়াজি তাই অন্য পাক সমর নায়কদের সঙ্গে পরামর্শ করে সেদিনই সর্বত্র হুকুম পাঠিয়ে দিলেন- পুল ব্যাক। নিয়াজির এমন নির্দেশ পেয়েই গোটা বাংলাদেশের পাক হানাদার বাহিনী একেবারেই ভেঙ্গে পড়ল।
পাক হানাদাররা এতদিন সীমান্ত লড়াইয়ের জন্য তৈরি হয়েছে। এখন হঠাৎ এলো পিছু হঠার নির্দেশ ! কিন্তু পিছু হঠাও যে তখন সহজ নয়। কারণ ততক্ষণে বিভিন্ন এলাকার পাকিস্তানী বাহিনী খবর পেয়ে গেছে যে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দেখছে আকাশে উড়ছে ভারতীয় জঙ্গী বিমান। এদিন সূর্য ওঠার আগ থেকে পাক বাহিনীর পিছু হঠা শুরু হয়ে যায়। পাকিস্তানী নবম ডিভিশনের পলায়ন পর্বও দেখার মতো।
এমনভাবে জীবন বাঁচাতে হানাদাররা ছুটছে যেন গোটা বাহিনীটাই ঢাকার দিকে পালাবে। কিন্তু তা তারা পারল না। কারণ ততক্ষণে ভারতীয় চতুর্থ ও নবম ডিভিশন যশোর-ঢাকা মহাসড়কের দুটো অঞ্চলে ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের শানিত আক্রমণে প্রত্যেক স্থানেই ছত্রভঙ্গ অবস্থা হানাদারদের। যাতে কোথাও হানাদাররা একসঙ্গে জড়ো হতে না পারে।
এদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের একটি কারাগারে পায়চারি করছেন দীর্ঘদেহী একজন। প্রহসনের বিচার শেষ হয়েছে মাত্র দুদিন আগে। ইয়াহিয়া সব বিচারক অর্থাৎ লেফটেন্যান্ট, কর্নেল, ব্রিগেডিয়ারকে রাওয়ালপিন্ডিতে ডেকে পাঠিয়েছেন। সামরিক ফরমানে দ্রুত রায় লিখতে বলা হয়েছে। পায়চারির এক পর্যায়ে চোখে পড়ে গর্ত খোঁড়ার দৃশ্য। কবর ? কার ? উত্তর তার জানা। ওই দীর্ঘদেহী ব্যক্তিটি আর কেউ নন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই বিজয়ের এই মাসে প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ বাঙালী জাতি তাদের প্রাণের শ্রদ্ধা-ভালবাসা নিবেদন করছেন জাতির জনকের প্রতি।













সর্বশেষ সংবাদ
শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি
অপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করুন : প্রধানমন্ত্রী
গ্রেপ্তার বাড়ছে কুমিল্লায়
চিরচেনা রূপে অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
আহতদের চিকিৎসা ও রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
শিক্ষার্থীদের আমি রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
কুমিল্লায় আট মামলায় গ্রেপ্তার দেড় শতাধিক
আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
অফিসে হামলার সময় চেয়ে চেয়ে দেখলেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
আন্দালিভ রহমান পার্থ ৫ দিনের রিমান্ডে
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft