শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
১২ শ্রাবণ ১৪৩১
ঝগড়া-বিবাদে মধ্যস্থতাকারীর সওয়াব
হাবীবুল্লাহ আল মাহমুদ
প্রকাশ: শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৩, ১২:০১ এএম |



সমাজে অসংখ্য মানুষের বসবাস। সবার মন-মানসিকতা ও ইচ্ছা-অভিরুচি এক নয়। এই বৈচিত্র্যই পৃথিবীর প্রাণ ও সৌন্দর্য। তবে অনেক সময় এতে দেখা দেয় বৈপরীত্য ও সংঘাত। সমাজে সৃষ্টি হয় অশান্তি। বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের জন্য প্রয়োজন হয় মধ্যস্থতাকারীর। ইসলামে মধ্যস্থতাকারীর অনেক পুণ্য ও পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ প্রদত্ত মানুষের জন্য নির্দেশ হলো পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং অশান্তি দূর করা। আল্লাহ বলেন, ‘পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার পর তাতে অশান্তি বিস্তার করো না’ (সুরা আরাফ : ৫৬)। দুনিয়ার এই জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রধান মাধ্যম হলো ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করা এবং শয়তানের আনুগত্যকে পরিহার করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! ইসলামে সম্পূর্ণরূপে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না।’ (সুরা বাকারা : ২০৮)
সাধারণত দুনিয়ার জীবনে যেসব কারণে অধিক অশান্তি  সৃষ্টি হয় এর অন্যতম হলো ঝগড়া-বিবাদ। এতে সামাজিক জীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় সামাজিক সম্প্রীতি ও স্থিতি। তাই সামাজিক স্থিতি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার স্বার্থে সবার জন্য কর্তব্য হলো পরস্পরে মিলেমিশে বসবাস করা। একে অপরের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করা। ভাই-ভাই হয়ে বসবাস করা। কারণ নানাভাবে শয়তান মানুষের ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করে। মানুষকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার তার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো পরস্পরে ঝগড়া-বিবাদ লাগিয়ে দেওয়া। এতে সে চরম তৃপ্তিবোধ করে। যেমন রাসুল (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘ইবলিস সমুদ্রের পানির ওপর তার সিংহাসন স্থাপন করে। অতঃপর মানুষের মধ্যে ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করার জন্য সেখান থেকে তার বাহিনী চারদিকে প্রেরণ করে। এদের মধ্যে সে শয়তানই তার কাছে সর্বাধিক সম্মানিত যে শয়তান মানুষকে সবচেয়ে বেশি ফিতনায় নিপতিত করতে পারে।’ (মুসলিম : ২৮১৩)
মানুষ যেহেতু পাপ ও পুণ্যের ভেতর জীবন অতিবাহিত করে, তাই কখনো কখনো পরস্পরে বিবাদ সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব নয়। দুই অন্তরঙ্গ বন্ধুর মধ্যেও বিবাদ সৃষ্টি হতে পারে। কখনো কখনো তা স্বামী-স্ত্রীর মধুর সম্পর্কের মাঝেও হয়ে যেতে পারে। হতে পারে মা-বাবা আর সন্তানের নাড়ির নিঃস্বার্থ বন্ধনেও। কিন্তু তা সমাধান না করে বিবাদরত অবস্থায় চলতে থাকাটা ক্ষতি। এই ক্ষতি সমাজের উন্নতি ও অগ্রগতির। তাই কখনো ঝগড়া-বিবাদ হলে উভয়ের জন্য কর্তব্য, অতি দ্রুত এর সমাধান করে নেওয়া। আপস-নিষ্পত্তি করে আবার মিলেমিশে চলতে শুরু করা। বান্দার আপস-নিষ্পত্তির এই কাজকে আল্লাহ বড়ই পছন্দ করেন। বান্দার উত্তম এই গুণ নিয়ে তিনি গর্ব করেন। তার জন্য পুরস্কারের ঘোষণা করেন। পক্ষান্তরে তা মীমাংসাহীনভাবে চলতে থাকাটা আল্লাহ অপছন্দ করেন। যেমন রাসুল (সা.) বর্ণনা করেন, ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করে না এমন সবাইকে মাফ করে দেওয়া হয়। তবে ওই দুই ব্যক্তি ছাড়া যারা পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করে, তাদের সম্পর্কে বলা হয়, ‘পরস্পর মিলে যাওয়া পর্যন্ত এদের অবকাশ দাও।’ (মুসলিম : ২৫৬৫)
পরস্পরে ঝগড়া-বিবাদ হলে উভয়ে উত্তেজিত থাকাটা স্বাভাবিক। তবে তা মীমাংসায় উভয়ের একজন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হলো উভয়ের একজন সংযত হওয়া। নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা। নিজের দাবি থেকে একটু সরে আসা। রাসুল (সা.) বর্ণনা করেন, ‘সে ব্যক্তি শক্তিশালী নয়, যে কুস্তিতে লড়াই করে অপরকে ধরাশায়ী করে; বরং প্রকৃতপক্ষে সে ব্যক্তিই শক্তিশালী, যে রাগের সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারে’ (বুখারি : ৬৮০৯)। সুতরাং নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা বা সংযত করাটা প্রশংসার বিষয়। ইসলামও একে মর্যাদার চোখে দেখে এবং এর জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ন্যায়ের ওপর থাকা সত্ত্বেও বিবাদ পরিহার করে, তার জন্য জান্নাতের মাঝে একটি ঘর তৈরি করা হয়। (তিরমিজি : ১৯৯৩)
কিন্তু কখনো কখনো ঝগড়া-বিবাদ এত ভয়াবহ রূপ ধারণ করে যে, এর আপস-নিষ্পত্তি ঝগড়াকারীদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এ ক্ষেত্রে মীমাংসার জন্য সমাজের অন্য লোকদের এগিয়ে আসা উচিত। তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করবে তাদের মাঝে তা নিষ্পত্তি এবং উভয়ের মাঝে সম্পর্ককে নবায়ন করে দেওয়ার। যারা এই মহৎ কাজটি করবে, আল্লাহ তাদের সুসংবাদ প্রদান করেন। কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘মুমিনদের দুটি দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতঃপর তাদের একটি দল যদি অন্য দলের ওপর বাড়াবাড়ি করে, তবে যে দল বাড়াবাড়ি করছে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, যতক্ষণ না সে আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে আসে। সুতরাং যদি ফিরে আসে তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে মীমাংসা করে দাও এবং ইনসাফ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন। মুমিনগণ পরস্পর ভাই-ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও, আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও।’
(সুরা হুজুরাত : ৯-১০) মীমাংসাকারীদের সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের নামাজ, রোজা, সদকা ইত্যাদির চেয়েও ফজিলতপূর্ণ কাজের কথা বলব না? সাহাবিগণ বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন, পরস্পরের মধ্যে মীমাংসা করা। আর পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া বাধানো ধ্বংসের কারণ’ (আবু দাউদ : ৪৯১৯)। তাই আসুন, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা বিবাদ পরিহার করি। অন্যদের মধ্যকার বিবাদ নিরসন করি। ঝগড়া-বিবাদমুক্ত সম্প্রীতির সমাজ গড়ে তুলি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুন।













সর্বশেষ সংবাদ
শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলিনি
অপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করুন : প্রধানমন্ত্রী
গ্রেপ্তার বাড়ছে কুমিল্লায়
চিরচেনা রূপে অর্থনীতির লাইফলাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
আহতদের চিকিৎসা ও রোজগারের ব্যবস্থা করবে সরকার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
শিক্ষার্থীদের আমি রাজাকার বলিনি, বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
কুমিল্লায় আট মামলায় গ্রেপ্তার দেড় শতাধিক
আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন
গ্রেপ্তার বাড়ছে কুমিল্লায়
অফিসে হামলার সময় চেয়ে চেয়ে দেখলেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft