![উপকূলীয় কৃষিতে বিপর্যয়]( https://comillarkagoj.com:443/2023/11/27/CK_1701023570.jpg)
ক্রমেই বেড়ে চলেছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। বেশি করে
গলছে মেরু অঞ্চলের পুরু বরফের স্তর। আর তাতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের
উচ্চতা। অনেক দ্বীপদেশ তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
তলিয়ে যাচ্ছে বহু
দেশের উপকূলীয় নি¤œাঞ্চল। সেসব দেশের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে ওপরের দিকে।
শুধু নি¤œাঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে না, নোনা পানির আগ্রাসনের কারণে ফসল উৎপাদনও
ব্যাহত হচ্ছে। শুক্রবার খুলনায় ‘উপকূলীয় খুলনা অঞ্চলে পানি ও মাটির
লবণাক্ততা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পতিত জমি আবাদ ও ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ’
শীর্ষক কর্মশালায় এমনই কিছু উদ্বেগজনক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) আয়োজিত কর্মশালায় বলা হয়, উপকূলীয় এলাকার
আবাদি জমির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি জমি লবণাক্ততায় আক্রান্ত। বর্ষা মৌসুমে
জলাবদ্ধতা, শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ততা এবং স্বাদু বা মিঠা পানির অভাবে এসব জমি
প্রায়ই পতিত থাকছে। ফলে উপকূলের চার কোটি মানুষের ৬০ শতাংশই এখন
দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে।
উপকূলীয় অঞ্চলকে একসময় দেশের খাদ্যভা-ার মনে করা হতো।
আজ
সেই জনপদে কেবলই হাহাকার ও তার প্রতিধ্বনি শোনা যায়। বহু মানুষ পৈতৃক
ভিটামাটি ছেড়ে উদ্বাস্তুজীবন বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন,
পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে সহায়-সম্বলহীন উদ্বাস্তু মানুষের কাফেলা
কেবলই দীর্ঘ হতে থাকবে। শুধু ব্রি নয়, আগেও অনেক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন
তথ্য। মৃত্তিকাসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য বলছে, লবণাক্ততার কারণে
উপকূলীয় জেলাগুলোতে বছরে খাদ্যশস্য উৎপাদন কম হচ্ছে প্রায় ৩০ লাখ ২৭ হাজার
টন।
শুষ্ক মৌসুমে উপকূলীয় নদীগুলোতে মিঠা পানির প্রবাহ কমে যায়। তখন
নোনা পানির অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পায়। এমন ভূ-অভ্যন্তর দিয়েও নোনা পানি ক্রমে
মধ্যাঞ্চলের দিকে ধাবিত হচ্ছে। শুধু ফসল নয়, এসব অঞ্চলের মিঠা পানির
অন্যান্য উদ্ভিদ, গাছপালা, এমনকি জলজ প্রাণী পর্যন্ত হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি শ্রম ও
উৎপাদনশীলতা হারানো পাঁচটি দেশের একটি বাংলাদেশ। কপ২৭ সম্মেলনে ‘ন্যাশনাল
অ্যাডাপ্টেশন প্ল্যান অব বাংলাদেশ (২০২৩-২০৫০)’ শীর্ষক যে প্রতিবেদনটি
বাংলাদেশ উপস্থাপন করেছিল, তাতেও বলা হয়েছিল, দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলার
আবাদযোগ্য জমির প্রায় অর্ধেকই লবণাক্ততার শিকার হয়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে
লবণাক্ততায় আক্রান্ত জমির পরিমাণ। মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়ছে উপকূলীয়
মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও। কিন্তু সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের
প্রচেষ্টার অগ্রগতি কতটুকু?
দেশের জনসংখ্যা বাড়ছে। খাদ্যের চাহিদা
বাড়ছে। অন্যদিকে আবাদি জমির পরিমাণ কমছে। ফসল উৎপাদন কমছে। এই ধারা চলতে
থাকলে বাংলাদেশ ক্রমে এক ভয়াবহ ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হবে। সেই পরিস্থিতি
থেকে রক্ষা পেতে আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। নোনা পানি
সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন করতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে মিঠা পানি সংরক্ষণ ও
স্বল্পমেয়াদি আমন চাষসহ অন্যান্য উপায়ে ফসলের নিবিড়তা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে
হবে। আমরা আশা করি, উপকূলীয় কৃষি তথা জনজীবন রক্ষায় দ্রুত পর্যাপ্ত উদ্যোগ
নেওয়া হবে।