বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪
৭ কার্তিক ১৪৩১
জীবনবোধ ও জীবনদর্শন
জুলফিকার নিউটন
প্রকাশ: বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৩, ১২:২৪ এএম |

 জীবনবোধ ও জীবনদর্শন
পূর্বে প্রকাশের পর
৭৯
বাঙালিত্ব ধারণাটা মূলত মধ্যবিত্তের। একসময় বাঙালিত্বের ধারণাটা এসেছিল ইংরেজের বিরদ্ধে বাঙালি শহুরে মধ্যবিত্তের সচেতনতা থেকে। বঙ্কিমচন্দ্র থেকে শুর করে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত ঐ যুগে অনেকেই খুব জোর দিয়ে বলছিলেন বাঙালির একটা নিজস্ব কিছু সামাজিক সত্তা আছে।
আমি মনে করি, বাঙালিত্ব বলে কিছু নেই। অবশ্য বাস্তবে না থাকলেও একটা ধারণা থাকতে পারে। সেই ধারণাটাও কিন্তু এক ধরনের নয়, বিভিন্ন ধরনের। আমি যেখানে ঐক্য খুঁজে পাই যা থেকে বাংলাদেশের জন্ম সেটা বাঙালিত্বের চাইতেও বাংলা ভাষা নিয়ে। পশ্চিম পাকিস্তান বাংলাদেশের ঘাড়ের ওপর উর্দু চাপাতে গিয়েছিল। সেটা বাংলাদেশের লোকরা মানেনি। কারা মানেনি? এতে তো চাষীর জীবনে কিছু হত না। কিন্তু বিশেষ করে পূর্ব বাংলার মুসলমানদের মধ্যে কলেজে, বিশ^বিদ্যালয়ে যারা শিক্ষিত, তারা বাংলা ভাষাকে এতখানি বড় বলে মনে করেছিল যে কিছুতেই উর্দুকে মানতে রাজি ছিল না।
আহমদ শরীফের বাংলা, বাঙালি, বাঙালিত্ব বইটি বহু জায়গায় পরস্পরবিরোধী। গোড়াতেই বলে নিই যে, মনীষী আহমদ শরীফ আমার বিশেষ শ্রদ্ধাভজন। তাঁর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাঁর লেখা আমি পত্রিকায় ছাপিয়েছি। তাঁর প্রতি আমার আকৃষ্ট হওয়ার কারণ আছে। প্রথমত, সব লেখার ভেতরেই তিনি সেকুলারিস্ট। তিনি ধর্মকে বাদ দিয়ে মানুষের ঐহিক যে উন্নতি তার ওপরেই জোর দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, তিনি যুক্তিবাদী। আমার সঙ্গে যে- যে সূত্রে তাঁর আত্মীয়তা সেইগুলো বলছি। তৃতীয়ত, তিনি বিশ^াস করেন আমিও ছেলেবেলা থেকে বিশ^াস করেছি অসাম্যের বিরদ্ধে নিরন্তর সংগ্রাম আমাদের অবশ্যকর্তব্য; সমাজে সাম্যের প্রতিষ্ঠা আমাদের আদর্শ। এই সাম্য কোন পথে আসবে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু সাম্য সুস্থ সমাজের একটা অবম শর্ত। যারা আজকের দিনে নীচে পড়ে আছে, তারা যতক্ষণ পর্যন্ত মর্যাদা পেয়ে ওপরে উঠতে না পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে-সমাজকে আমরা সুস্থ সমাজ বলে মেনে নিতে পারি না। এগুলোই ছিল আমাদের চিন্তার মিল।
আহমদ শরীফের স্ববিরোধগুলো কোথায় বলছি। তাঁর লেখাতে তিনি অনেক জায়গায় জোর দিয়েছেন, যাঁরা চিন্তাশীল, যাঁরা মনীষী, যাঁরা সৃজনধর্মী, সমাজের রূপান্তরে তাঁদের প্রধান ভূমিকার ওপরে। এই কথার সঙ্গে আমার চিন্তার মিল আছে। কিন্তু পরে আবার তিনিই লিখছেন সমাজের রূপান্তরে প্রধান ভূমিকা জনগণের। আমি বুঝতে পারি না কোন জনগণের কথা তিনি বলছেন? যাঁরা বিসূচিকা মহামারীতে ওলাদেবীর আশ্রয় খোঁজেন, যাঁরা বসন্ত রোগে আক্রমণের প্রতিষেধক ইনজেকশন নেবেন না, যাঁদের জীবন এবং চিন্তা যুক্তিবিমুখ অন্ধ সংস্কার এবং প্রথানুগত্যের দ্বারা চালিত, সমাজের রূপান্তরে তাদের ভূমিকার কথাই কি বলছেন? তাঁদের উদ্যোগে এবং পরিচালনায় কি সমাজের পরিবর্তন হবে? অথবা সমাজের পুনর্গঠন করতে হলে চাই কিছু লোক, যাঁরা পরম্পরা চালিত ¯্রােতের বিরদ্ধে, যাঁরা নিজেরা স্বাধীনভাবে চিন্তা করে, যাঁদের দৃষ্টি অতীতের চাইতে ভবিষ্যতের দিকে নিবদ্ধ, যাঁরা সাহসী, আদর্শবাদী এবং সমাজে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা যাঁদের জীবনের সাধনা?  তাঁদের চিন্তা হয়তো আজকের দিনের জনসাধারণ নাও গ্রহণ করতে পারে, কিন্তু তাঁদের ভূমিকাকে বাদ দিয়ে অথবা খাটো করে সামাজিক-সাংস্কৃতিক রূপান্তরের সম্ভাবনা আমি অন্তত দেখতে পাই না।
এখানেই আমার মনে হয় তিনি মনস্থির করতে পারেননি, দোনামনা আছে চিন্তার মধ্যে। এটা খুবই স্বাভাবিক আমাদের সকলের পক্ষে। আমরা সবাই জানি, আমরা যারা স্বাধীনভাবে চিন্তা করি, তারা সংখ্যায় খুব কম। এবং আমাদের পেছনে যদি জনমতের সমর্থন না থাকে, তাহলে আমাদের খাটুনি ব্যর্থ। সুতরাং জনমতকে আমরা সঙ্গে চাই। যাঁরা র‌্যাডিক্যাল রাজনৈতিক তাঁরা তাই বারেবারেই অন্ধজনমতের সঙ্গে রফা করেন। মনে আছে রশ বিপ্লবী ভাবুক আলেকজা-ার হার্টজেনের একটা চমৎকার আত্মজীবনী পড়েছিলাম। তাতে তিনি বলেছিলেন, সরকারের বিরদ্ধে লড়াই করা খুব সহজ, সেক্ষেত্রে শত্র খুব স্পষ্ট, কিন্তু সব থেকে সাহসী সে-ই যে জনগণের মতের বিরদ্ধে দাঁড়াতে পারে। সাধারণ মানুষের বিশ^স এত দৃঢ় তাকে ভাঙা কঠিন। সরকারকে ভেঙে দেওয়া যায়, বিপ্লব করে আরেকটা সরকার আনা যায় কিন্তু জনগণের ধ্যানধারণার পরিবর্তন এত সহজ নয় সেই কাজ হচ্ছে গিয়ে যাঁরা চিন্তাশীল তাঁদের, নতুন চিন্তা করে সমাজকে বদলে দেওয়া তাঁদের দায়িত্ব। অষবীধহফবৎ ঐবৎুবহ, গু চধংঃ ধহফ ঞযড়ঁমযঃ’ং (নু ঃৎধহং. ১৯৭৯)
আহমদ শরীফের বইয়ে অনেকখানি আলোচনা আছে রেনেসাঁস নিয়ে। তিনি কোনো কোনো জায়গায় বলেছেন, রেনেসাঁস বলতে বোঝায় সেই সময় যখন কোনো একটা বিশেষ স্থান এবং কালগত পরিধির মধ্যে বহু মৌলিক চিন্তাশীল লেখক শিল্পী একত্র হয়ে আত্মপ্রকাশ করেন। একথা আমিও আমার রেনেসাঁস বিষয়ে নানা প্রবন্ধে লিখেছি। কিন্তু তারপর আহমদ শরীফ বলেছেন যে, জনগণের জীবনে, সমগ্রভাবে সমাজের কাঠামোর এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে গভীর এবং ব্যাপক রূপান্তর না ঘটা পর্যন্ত শুধু একই সময়ে বহু সৃষ্টিশীল ভাবুক ও শিল্পীর আবির্ভাবকে রেনেসাঁস বলা সংগত নয়। আমি একথা মানি না। আমি বিভিন্ন প্রবন্ধে এর সমালোচনা করেছি। বাংলায় নাকি রেনেসাঁস হয়নি। কেন? না, রামমোহন থেকে রবীন্দ্রনাথ এঁরা জনজীবনে কোনো বিপ্লব ঘটাতে পারেননি। ইউরোপীয় রেনেসাঁস তৎকালীন জনগণের জীবনে কী করেছে? ইউরোপীয় রেনেসাঁস হওয়ার পরেও ইউরোপে দীর্ঘকাল ধরে বিরাট ধর্মযুদ্ধ হয়েছে, লক্ষ লোক মারা গেছে। রেনেসাঁসের দৃষ্টিভঙ্গি কি সাধারণ স্ত্রী-পুরষের ওপরে তখনই প্রভাব ফেলেছির সেখানে? রেনেসাঁসের নিজস্ব যে-সৃজন এবং উদ্ভাবনা, ইতিহাসে তার নিজস্ব যে কৃতি, সেই কৃতি নিজ মূল্যেই স্থায়ী। অনেক সময় লেগেছিল সমগ্রভাবে ইউরোপীয় সমাজসংস্কৃতিতে সেই কৃতির প্রসার লাভ করতে। রেনেসাঁসের তাৎক্ষণিক ফল যদি দেখি, তাহলে সে-ফল হল মুখ্যত শিল্পে, সাহিত্যে, দর্শনে, সমাজে কিছু মানুষের জীবনযাত্রা এবং দৃষ্টিভঙ্গির উৎকর্ষসাধনে।
বঙ্কিমচন্দ্র বাংলা গদ্যের ভাষাকে যে-রূপ দিয়ে গেলেন, আমরা তারপরে আর বিশেষ কিছু উৎকর্ষ সাধন করতে পারিনি। বাংলা গদ্যের তিনি প্রায় পরিপূর্ণ রূপ দিয়ে গেছেন। এই দেওয়াটাই তাঁদের কৃতি। বঙ্কিম সাধারণ লোকের চিন্তাকে বদলাতে পারেননি। কিংবা রবীন্দ্রনাথ বিস্তর সাধনা সত্ত্বেও তাঁর শ্রীনিকেতনে প্রাণবন্ত, বিস্তারশীল, দূরপ্রভাবী কিছু দাঁড় করাতে পারেননি। এটার দ্বারা রবীন্দ্রনাথকে আমরা বিচার করতে পারব না। এইখানে আহমদ শরীফের সঙ্গে আমার চিন্তার তফাৎ। এখানেই আহমদ শরীফের কালাতিক্রান্ত মার্কসিজম কাজ করছে। তিনি শুধু জড়বাদী বা যুক্তিবাদী বা সেকুলারিস্ট নন তিনি মার্কসিস্ট। আমার নিজের ধারণা যে আমরা যারা চিন্তার কাজ করি, তাঁদের ভেতরে একটা সংঘাত আছে। সংঘাতটা এই যে আমার চিন্তার নিজস্ব যে ন্যায়, যুক্তি, সেটা আমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নিয়ে যাওয়ার ফলে অন্তত আমার চিন্তা, আমার উদ্যম, আমার রচনা এবং স্বপ্ন আমাকে বিচ্ছিন্ন করছে আমার পরিবেশ থেকে।
অনেকের মতে অস্ট্রিক সূত্র থেকে আমাদের দেশের গ্রামের লোকেদের নানারকম পুজোআচ্চা উৎসব-অনুষ্ঠান এসেছে। আহমদ শরীফ তার মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন বাঙালির বৈশিষ্ট্য, জীবনের প্রতি তার গভীর অনুরাগের স্বাক্ষর। আমি দেখতে পাচ্ছি, তা আসলে পলায়নের প্রকাশ। জীবনকে আয়ত্তে আনতে গেলে যে দৃঢ়তা দরকার, যে শরম দরকার, বাংলার অধিকাংশ অধিবাসীর চরিত্রে তার কিছু নেই। অথচ আহমদ শরীফ ঐসব পূজাআচ্চার অস্ট্রিক উৎপত্তি থেকে সিদ্ধান্তে এসেছেন যে জীবনের প্রতি অনুরাগ নাকি বাঙালিত্বের বিশিষ্ট লক্ষণ। আমার মনে হয়, এক্ষেত্রে এমনকি রবীন্দ্রনাথের মধ্যেও এক ধরনের স্ববিরোধ বর্তমান। একদিকে মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই এরকম বাণী বলেছেন। আহমদ শরীফের মতে ভারতবর্ষে এই বাণী প্রথম শোনা গেল। কিন্তু এটা মোটেই প্রথম নয় কেননা বেদে এরকম অনেক উক্তি আছে। সেটা নীরদ চৌধুরী ভাল দেখিয়েছেন। বেদের জগতের যে ভারতবর্ষ আর জৈন বৌদ্ধ দর্শনের যে ভারতবর্ষ দুইয়ে আমূল পার্থক্য। বেদের জগৎ হচ্ছে সৌন্দর্যবোধের জগৎ, বিশ^প্রকৃতিকে ভালবাসার জগৎ মানুষ এই জগৎটা পেয়ে আনন্দিত এই বার্তা আছে বেদে এবং কোনো কোনো উপনিষদে। বুদ্ধ এবং পরবর্তীযুগের ভাবুকরা কল্পনা করলেন, জগৎ একটা শোকের জায়গা, দুঃখের জায়গা। তাঁরা কোনো আনন্দই খুঁজে পাচ্ছে না জগতের মধ্যে। জগৎকে তাঁরা মায়া বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। তাঁদের মনে নির্বোধ মানুষের জন্য গভীর করণা আছে। কিন্তু ¯্রষ্টা এবং ভোক্তা মানুষ সম্পর্কে গৌরব নেই। যে আনন্দ থেকে সর্বানি জায়তে তা তাঁদের কাম্য নয়; তাঁদের, বিশেষ করে বৌদ্ধদের কাম্য নির্বাণ। আর গোঁড়া হিন্দুদের কাম্য পুনর্জন্ম থেকে মুক্তি। কারণ জীবনের বেশিটা জুড়েই দুঃখের রাজত্ব। রবীন্দ্রনাথের মধ্যে দুটোই দেখতে পাচ্ছি একদিকে ‘কিছুই তো হল না’ বলে ঈশ^রের কাছে কান্নাকাটি করা, আরেকদিকে এই জগৎ যে কত সুন্দর, তার কথা বলা। কবির এ অধিকার আছে। কবির ক্ষেত্রে এই নিয়ে আমরা কিছু বলতে পারি না। কিন্তু তাত্ত্বিকের ক্ষেত্রে বলতে পারি। তিনি কবি নন, তাঁর বক্তব্যে সংগতি, যুক্তিশীলতা, পারস্পর্য, সমন্বয় থাকা জররি। তথ্য প্রমাণাদির দাবিকে তিনি অগ্রাহ্য করতে পারেন না।
আহমদ শরীফের অনুসন্ধানের বিষয় হল, বাঙালিত্বটা কি? আমি বলছি, বাঙালি আছে, কিন্তু বাঙালিত্ব নেই। অর্থাৎ প্লেটোর ঘোড়ার মতো অতীন্দ্রিয় অ্যাবস্ট্রাক্ট কিছু নেই। যা আছে তা হল নানা রঙের ঘোড়া। কোনোটা সাদা, কোনোটা কালো, কোনোটা আরবি, কোনোটা অস্ট্রেলিয়ান, কোনোটা বুনো, কোনোটা পোষমানা। একটা বিশেষ ভৌগোলিক অঞ্চলের যারা পুরষানুক্রমে অধিবাসী এবং বাংলা যাদের পুরষানুক্রমে মাতৃভাষা, তাদেরই তো বাঙালি বলা হয়। কিন্তু ইতিহাস থেকে আমরা জানি, আদিপর্বে এই অঞ্চল ভিন্ন ভিন্ন খ-ে বিভক্ত ছিল; তাদের মধ্যে শুধু একটির নাম বঙ্গ। হিন্দু বা বৌদ্ধ আমলে এইসব খ- খ- স্বতন্ত্র নামধারী রাজ্যগুলোকে এককাট্টা করে কোনো একটি বিশিষ্ট নামে অভিহিত করা হয়নি। সুলতান আমলে বাংলাভাষার উদ্ভব ও বিকাশ এই অঞ্চলের রাষ্ট্রিক সংগঠনে অনেকখানি সাংস্কৃতিক ঐক্য এনে দেয়। মোগল আমলে এই অঞ্চলের নাম হয় সুবেবাংলা।
বাঙালিত্বের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আহমদ শরীফ নীহাররঞ্জন রায়কে অনেকটা নির্বিচারে অনুসরণ করেছেন। নীহার রঞ্জন রায়কে ব্যক্তি এবং ঐতিহাসিক হিসেবে আমি বিশেষ শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তিনি বাঙালির আদিপর্ব বলে যে সময়টার কথা বলেছেন, তখন বাঙালি নামে কোনো জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বই ছিল না। তিনি শেষ করেছেন, সেনদের আমলে। সেন আমলে বাঙালি কোথায়? মোগল আমলে যে সুবেবাংলা আকার পায় তার কিছু কিছু অংশ প্রথমে পাল এবং পরে সেন রাজাদের দখল আসে। বাঙালি বলে কোনো সমূহের ধারণা তখনো আমল পায়নি।
বাঙালি বলতে আমরা যা বুঝি, সেই বাঙালির উদ্ভব পরে হয়েছে। তার উদ্ভব হয়েছে বাংলা ভাষার বিকাশ এবং ব্যাপকভাবে ঐ অঞ্চলে তার ব্যবহারের সূত্রে। সম্ভবত চৌদ্দ-পনেরো শতকে এটার সূচনা হয়েছে। বাঙালিরা যাঁরা সাহিত্যের ইতিহাস লেখেন তাঁরা সেই চর্যাপদ থেকে শুর করেন। আমার মনে হয়, বাংলা ভাষা নিজস্ব রূপ নিতে শুর করে সুলতানী আমলে। চৈতন্যের আন্দোলন, বৈষ্ণব পদাবলী, রামায়ণ-মহাভারতের বাংলা রূপান্তর, মঙ্গলকাব্য, কবিতায় লেখা লৌকিক নানা প্রেমের উপাখ্যান, পীরসাহিত্য, পূর্ববঙ্গগীতিকা এসবের ভিতর দিয়ে ঐ ভাষা বিকশিত হয়। মুসলমান সুলতানদের এবং তাদের কর্মচারীদের পৃষ্ঠপোষকতায় সেই সময় থেকেই বাংলা ভাষা ক্রমে এই সমস্ত অঞ্চলে সকলের না হলেও যাঁরা কিছুটা লেখাপড়া জানে, তাদের ভাষা হয়ে দাঁড়াল।
এইভাবে এই অঞ্চলের অধিবাসীদের একটা সার্বজনিক ভাষা প্রতিষ্ঠা পেল বটে, কিন্তু নানা রকমের ব্যবধান রয়ে গেল, এখনো দূর হয়নি। যে ভাষায় আমরা লিখি, কথা বলি আমরা বলতে বোঝাচ্ছি শিক্ষিত লোকদের আমরা যখন গ্রামাঞ্চলে যাই তখন টের পাই সেই ভাষাটা অনেকটাই অচল। আমরা বহু শব্দ ব্যবহার করি যেগুলো সেখানে কোনো অর্থ বহন করে না। বাঙালিত্ব যাই বলি, সেটা হচ্ছে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত, বিশেষ করে যারা নি¤œ মধ্যবিত্তদের মধ্যে চিন্তাশীল, তাদের একটা আকাক্সক্ষা, একটা আদর্শ। এই আদর্শে কোনো আপত্তি নেই। আপত্তি সেখানে, যখন সেটা বাস্তবে আছে বলে দাবি করা হয়। আমাদের কাছে স্পষ্ট নয় আদর্শের চেহারাটি কী হবে। এই যে আকাক্সক্ষার উদ্দিষ্ট যাকে আমরা বাঙালিত্ব বলছি, সেই বাঙালিত্বই বা কী চেহারা নেবে? আমি চাইব, আমাদের দেশ সেকুলার দেশ, টলারেন্সের দেশ হোক সেটাই বাঙালিত্ব হওয়া উচিত। কিন্তু অধিকাংশ বাংলাভাষী আছে। তারা কি যথার্থ সেকুলারিজমে বিশ^াস করে? সেকুলারিজমকে তারা জলটল মিশিয়ে খাড়া করেছে। আমার ধর্ম আমার কাছে তোমার ধর্ম তোমার কাছে, কিন্তু এটা তো সেকুলারিজম নয়। জানি না আপনাদের মনে কী আছে। আমার নিজের ধারণা, বাঙালিত্ব বলেও কিছু নেই। বাংলাদেশ বলে একটা রাষ্ট্র আছে, বাংলা বলে একটা ভাষা আছে।
বাঙালি সংস্কৃতি বলতে যদি ভাষা বলি, তাহলে মানছি। সংস্কৃতির এই একটা অঙ্গকেই শুধু বাঙালি পরিচায়ক বলে মানা যায়। কিন্তু ভাষার অতিরিক্ত সংস্কৃতির আর কী অঙ্গ আছে যা একই সঙ্গে বাঙালির সর্বজনীন লক্ষণ এবং যা আরেক দিকে অন্যদের থেকে বাঙালিকে স্বতন্ত্র করেছে?
চলবে...












সর্বশেষ সংবাদ
নতুন বইয়ের বর্ণিল নতুন বছর
নৌকায় ভোট নিতে ভাতার কার্ড আটকে রাখার অভিযোগ
শান্তির নোবেলজয়ী থেকে দণ্ডিত আসামি
শ্রমিক ঠকানোর দায়ে নোবেলজয়ী ইউনূসের ৬ মাসের সাজা
ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা অধ্যক্ষ পদে অধ্যাপক ডাঃ রুহিনী কুমার দাস এর দায়িত্ব গ্রহণ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধু নিহত
বরুড়ায় শ্রমিকদল নেতাকে ছুরিকাঘাত
অর্ধেক দামে ফ্রিজ বিক্রি করছেন ফ্রিজ প্রতীকের প্রার্থী
বাড়ির জন্য কেনা জমিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যাওয়া একই পরিবারের ৪ জনের কবর
৫৫ কেজি সোনা চুরি, ফের রিমান্ডে দুই রাজস্ব কর্মকর্তা
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২