দেশ কৃষিপ্রধান হলেও দেশের কৃষকরাই
সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত। প্রাণান্ত পরিশ্রম করে তারা যে ফসল ফলায়, প্রায়ই তার
ন্যায্য মূল্য পায় না। বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক সময়ই তারা
সর্বস্বান্ত হয়। তখন তাদের খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করতে হয়।
অন্যদিকে
প্রাচীন ও প্রকৃতিনির্ভর কৃষিপদ্ধতির কারণে দেশের কৃষি উৎপাদনও কাক্সিক্ষত
পর্যায়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। তাই সরকার কৃষির উন্নয়নে ধারাবাহিক যেসব উদ্যোগ
নিয়ে চলেছে, তারই অংশ হিসেবে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের বোরো ধানের আবাদ
বাড়াতে ৬৪ জেলার ১৫ লাখ কৃষককে বিনা মূল্যে সার ও বীজ দেওয়া হচ্ছে। কৃষি
প্রণোদনার আওতায় এ খাতে সরকারের বরাদ্দ রয়েছে ১০৭ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার
টাকা। এর মাধ্যমে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি মূল্যের বাড়তি ফসল পাওয়া যাবে
বলে আশা করা হচ্ছে। এ ধরনের উদ্যোগ আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলেই মনে করেন
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
আমাদের ছোট্ট দেশ, অথচ রয়েছে বিপুল জনসংখ্যা। এই
জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে কৃষি খাতের উন্নয়ন অত্যাবশ্যকীয়। এখনো
আমাদের দেশে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন অনেক দেশের তুলনায় অনেক কম।
যান্ত্রিক
চাষাবাদের প্রসার ঘটেনি বললেই চলে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী,
বোরো ধানের উচ্চ ফলনশীল যে জাতগুলো উদ্ভাবন করা হয়েছে, সেগুলোর উৎপাদনশীলতা
অনেক বেশি। এ বছর বোরো ধানের নতুন আটটি দেশি উফশী জাতের আবাদ বাড়ানো হবে,
যেগুলো এখনো অতটা প্রচলিত নয়। জাতগুলো হচ্ছে ব্রিধান-৬৭, ব্রিধান-৭৪,
ব্রিধান-৮৯, ব্রিধান-৯২, ব্রিধান-১০০, বিনাধান-১০, বিনাধান-২৪ ও
বিনাধান-২৫। এসব জাতের বীজ সরবরাহ করবে বিএডিসি ও ডিএই প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
প্রত্যেক
উপকারভোগী কৃষককে ১০ কেজি করে মোট ২০ কেজি ডিএপি ও এমওপি সার এবং পাঁচ
কেজি করে উফশী বীজ দেওয়া হবে। পাশাপাশি কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায়
বোরোর সমলয় চাষাবাদ ব্লক প্রদর্শনী স্থাপনের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ১৭ কোটি
৪২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। সারা দেশে এ রকম ১২২টি ব্লক স্থাপন
করা হচ্ছে। প্রতিটি ব্লক হবে ৫০ একরের। উদ্যোগটি ভালো হলেও উপকারভোগী
কৃষকদের কিছু অভিযোগ আছে। এর একটি হলো হাওর এলাকায় কিছুটা আগাম চাষাবাদ হয়।
অনেকেই এরই মধ্যে তাদের বীজতলা তৈরি করে ফেলেছে। তারা মনে করে, উদ্যোগটি
আরো আগে নেওয়া প্রয়োজন ছিল।
আমরা মনে করি, উদ্যোগের সর্বোচ্চ সুফল
নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ে কৃষকদের হাতে বীজ ও সার পৌঁছে দেওয়া
হবে। পাশাপাশি কৃষি খাতকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরূপ উদ্যোগ বাড়াতে হবে।