দেশে ডলারের তীব্র
সংকট চলছে। ফলে ব্যাংকগুলো নিয়মিত ঋণপত্র (আমদানি-এলসি) খুলতে পারছে না।
এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে বেশি দামে প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার কেনার সুযোগ
পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। এতে কিছুটা হলেও বাড়ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ।
রোববার
(১৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি
নভেম্বরের প্রথম ১৭ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ পথে ও ব্যাংকিং চ্যানেলে
দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১১৮ কোটি ৭৭ হাজার ডলার; বাংলাদেশি মুদ্রায় যার
পরিমাণ ১৩ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১১১ টাকা ধরে)। সে হিসেবে
দৈনিক আসছে ৬ কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। এ ধারা অব্যাহত থাকলে
মাস শেষে প্রবাসী আয় দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
তথ্য
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি মাসের ১৭ দিনে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে
এসেছে তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৪০ হাজার
ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৫১ লাখ ৭০ হাজার ডলার,
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১০৭ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং বিদেশি
ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩৬ লাখ মার্কিন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৭ কোটি ৭৬ লাখ মার্কিন
ডলার। এর আগে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাস রেমিট্যান্স প্রবাহ
ধারাবাহিকভাবে কমেছিল। ডলার সংকটের কারণে গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী আয়ে
বড় হোঁচট খায়। ওই মাসে গত সাড়ে ৩ বছর বা ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ প্রবাসী
আয় আসে বাংলাদেশে, যা পরিমাণে ১৩৪ কোটি ডলার। এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিল
মাসে ১০৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস
জুলাইয়ে রেমিট্যান্স আসে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার এবং আগস্টে
১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর
গত মার্চের পর থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায়
শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু তাতে সংকট আরও প্রকট
হয়। পরে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের
দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের
সংগঠন-অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন
এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এর ওপর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
নির্দেশনায় তারা সভা করে ডলারের রেট নির্ধারণ করে আসছে।
সবশেষ
ব্যাংকগুলোর ঘোষণা অনুযায়ী, প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কেনার ক্ষেত্রে ডলারের
ঘোষিত দাম ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আজকে
আন্তঃব্যাংকে ডলার লেনদেন হচ্ছে ১১১ টাকা। তবে কোনো ব্যাংকের প্রয়োজনে
চাইলে ব্যাংকের নিজস্ব প্রণোদনাসহ সর্বোচ্চ দাম হবে ১১৬ টাকা। তবে
আমদানিকারকদের কাছে ব্যাংকগুলোকে ১১১ টাকায় বিক্রি করতে হবে; এর বেশি নেওয়া
যাবে না।
কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে নগদ এক ডলার কিনতে গ্রাহকদের
গুনতে হচ্ছে ১২৫ টাকা। চিকিৎসা, শিক্ষা বা ভ্রমণের জন্য যারা বিদেশে
যাচ্ছেন তাদের নগদ প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ১২৫ টাকা পর্যন্ত।