‘প্রত্যেক
ব্যক্তির বিনামূল্যে সব ধরনের চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া তার সংবিধান প্রদত্ত
মৌলিক অধিকার এবং এ অধিকার তার বেঁচে থাকার অধিকারের অন্তর্ভুক্ত’। ১৯৯১
সালে এবং ২০০৯ সালে ভেজাল প্যারাসিটামল সেবনে মারা যাওয়া ১০৪ শিশু নিয়ে করা
রিটের চূড়ান্ত রায়ে এ মৌলিক অধিকারের কথা উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক–আল–জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০২২ সালের ২ জুন এ রায় দেন।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) এ রায়ের ৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
রায়ের ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধে একটি স্বাধীন জাতীয় ভেজাল ওষুধ প্রতিরোধ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে ভেজাল প্যারাসিটামল সেবনে মারা যাওয়া ১০৪ শিশুর প্রত্যেক পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঔষধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ ওই ক্ষতিপূরণের টাকা সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তি, ওষুধ কোম্পানি থেকে আদায় করতে পারবেন।
ভেজাল
প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনে ১৯৯১ সালে সালে শিশু মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে
গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে ওষুধে ভেজাল রোধে ও দোষী ব্যক্তিদের
নামের আইনি ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে ২০১০ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড
পিস ফর বাংলাদেশের (এইআরপিবি) পক্ষে একটি রিট করা হয়। এর প্রাথমিক শুনানি
নিয়ে ওই বছরের ৩ নভেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে
হাইকোর্টের নির্দেশনা বলা হয়, প্রত্যেক ব্যক্তির বিনামূল্যে সব ধরনের
চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া তার সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার এবং এ অধিকার তার
বেঁচে থাকার অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।
ঔষুধে ভেজাল মিশ্রণ বন্ধে প্রয়োজনীয়
সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(সি) মোতাবেক আইনি
ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়।
‘১৯৯১ সালে ৭৬ জন এবং ২০০৯ সালে ২৮ জন শিশুর মৃত্যু ঔষধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষের কঠিন দায়’ রয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া
হাইকোর্ট দুটি পরামর্শ দেন। সেগুলো, ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ বাংলাদেশ গেজেটে
অতিরিক্ত প্রকাশিত জাতীয় ঔষধ নীতি- ২০১৬ দ্রুত বাস্তবায়ন করা এবং
যুক্তরাজ্যের আদলে আমাদের দেশের জনগণের চিকিৎসা সেবা অবকাঠামো তৈরি করা।
এছাড়া
এ রায়ের অনুলিপি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে পাঠানোর জন্য
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।