বৃহস্পতিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৩
১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
ফাইনালে ভারত
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৩, ১২:১১ এএম |

 ফাইনালে ভারত


আরব সাগরের পাড়েই মেরিন ড্রাইভ। মুম্বাইয়ে প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। এই সড়ক ধরেই যেতে হয় ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। সেই পথই বুধবার রূপ নিল যেন সমুদ্রে। দুপুরের বেশ আগে থেকেই আকাশী-নীল জার্সি পরা হাজার হাজার দর্শকের জোয়ার। মাঠের ভেতরের আবহ সহজেই অনুমেয়! সেই উচ্ছ্বাস আরও বর্ণময় হয়ে উঠল মাঠের ক্রিকেটে। রোহিত শার্মার উড়ন্ত সূচনার পর ভিরাট কোহলির রেকর্ডময় সেঞ্চুরি, শ্রেয়াস আইয়ারে বিধ্বংসী শতরান আর মোহাম্মদ শামির রেকর্ড গড়া ৭ উইকেট। সবকিছুর ওপরে ভারতের জয়!
দীপাবলি শেষ হলেও পটকা, আতশবাজি জমিয়েই রেখেছিলেন মুম্বাইবাসীরা। ম্যাচ শেষ হতেই কানে আসতে থাকল পটকার আওয়াজ, আকাশে দেখা গেল আলোর ঝলকানি। ‘ইন্ডিয়াৃ ইন্ডিয়া’ স্লোগানে মুখরিত চারপাশ। যে মাঠে এক যুগ আগে বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছিল ভারত, সেই মাঠেই তারা পৌঁছে গেল আরেকটি শিরোপার মঞ্চে। ‘পারফেক্ট টেন’- অপ্রতিরোধ্য পথচলায় টানা ১০ জয়ে তারা পা রাখল নিজ দেশের বিশ্বকাপের ফাইনালে।
বিশ্বকাপের প্রথম সেমি-ফাইনালে নিউ জিল্যান্ডকে ৭০ রানে হারাল ভারত। টানা পাঁচ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে খেলা কিউইদের প্রথম শিরোপার স্বপ্ন অধরা রইল এবারও।
টস থেকেই শুরু হয় ভারতের জয়ের পালা। ৫০ ওভারে তারা তোলে ৪ উইকেটে ৩৯৭ রান।
কোহলির রেকর্ড, শ্রেয়াসের ছক্কার তাণ্ডবের পথ ধরে এই উচ্চতায় পৌঁছে যায় ভারত। রেকর্ড কোহলির হলেও তা আসলে ব্যক্তিগত অর্জনের সীমানা ছাড়িয়ে স্পর্শ করে ক্রিকেটের সীমানাও। ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫০ সেঞ্চুরির কীর্তি বলে কথা!
এতদিন রেকর্ডটি যার ছিল, সেই সাচিন টেন্ডুলকারের ঘরের মাঠে তার সামনেই তাকে ছাড়িয়ে গেলেন কোহলি। গ্যালারি থেকে তালির পর তালিতে অভিবাদন জানালেন টেন্ডুলকার, জবাবে মাথা নত করে তাকে কুর্নিশ জানালেন উত্তরসূরি।
ওয়াংখেড়ের উৎসব রাঙিয়ে স্বপ্নের ফাইনালে ভারত

কোহলির ১১৩ বলে ১১৭ রানের ইনিংসটি ভারতীয় ইনিংসের মেরুদণ্ড। ৮ ছক্কায় শ্রেয়াসের ৭০ বলে ১০৫ রানের ইনিংসে দলের রান পৌঁছে যায় প্রায় অনতিক্রম উচ্চতায়।

এরপর? একজন ড্যারিল মিচেলের ব্যাটে ফুটে উঠল নিউ জিল্যান্ডের হার না মানা মানসিকতা। কিন্তু শামির কাছে যে হার মানতেই হবে!

বিশ্বকাপের প্রথম দিকে তাকে বসিয়ে রেখেছিল দল। অনেক সমালোচনাও হচ্ছিল এটা নিয়ে। তার হৃদয়েও নিশ্চয়ই দহন হচ্ছিল! সুযোগটি যখন পেলেন, তার আগুনে পুড়তে থাকল একের পর এক প্রতিপক্ষ। আর এই ম্যাচে ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকে, ছাড়িয়ে গেলেন ভারতের ইতিহাসের সব বোলারকে।

৫৭ রানে ৭ উইকেট, ব্যাটিং উইকেটে অবিশ্বাস্য এক বোলিং পারফরম্যান্স। বিশ্বকাপে তো বটেই, ওয়ানডেতেই প্রথম ৭ উইকেটের স্বাদ পেলেন ভারতের কোনো বোলার।
টুর্নামেন্টে আগেও দুবার ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ২৩ উইকেট নিয়ে চলতি আসরে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি এখন তিনি, অথচ ম্যাচ খেলেছেন মোটে ৬টি!
৭ ছক্কায় ড্যারিল মিচেলের ১১৯ বলে ১৩৪ রানের ইনিংস স্রেফ লড়াইয়ের প্রতীক হয়েই রইল সতীর্থদের সেভাবে পাশে না পাওয়ায়।
ভারতের দাপটের শুরু ম্যাচের শুরু থেকেই। চার বছর আগে সেমি-ফাইনালে ম্যাট হেনরি ও ট্রেন্ট বোল্টের আগুনে স্পেল ম্যাচ থেকে অনেকটা ছিটকে দিয়েছিল ভারতকে। এবারও তাদের জন্য হুমকি হতে পারত বোল্ট ও টিম সাউদির নতুন বলের স্পেল। রোহিত শার্মা ‘টার্গেট’ করেন সেখানেই। বিশেষ করে, বোল্টকে।
বোল্টের প্রথম ওভারেই দুটি চারে তার শুরু। পরের ওভারে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এক্সট্রা কাভার দিয়ে ছক্কা। টিম সাউদির বলেও ছক্কা ও চার। বোল্টের শর্ট বলে হুক করে ছক্কা। স্পিন আনা হলো আক্রমণে। মিচেল স্যান্টনারের বলেও ছক্কা ও চার।
৮ ওভারেই রান ৮০। রোহিতের ঝড়ের পাশে শুভমান গিলের নির্মল হাওয়া মিলিয়ে দারুণ শুরু ভারতের।
ওয়াংখেড়ের উৎসব রাঙিয়ে স্বপ্নের ফাইনালে ভারত
সাউদির স্লোয়ারে উইলিয়ামসনের দুর্দান্ত ক্যাচে শেষ হয় রোহিতের ২৯ বলে ৪৭ রানের ইনিংস।
অধিনায়কের বিদায়ের পর তার আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে নেন গিল। দারুণ সব শটে ফিফটিতে পৌঁছে যান ৪১ বলে। কোহলি তখন সহকারীর ভূমিকায়। গড়ে ওঠে আরেকটি কার্যকর জুটি।
ফিফটির পরপর দুটি ছক্কা আসে গিলের ব্যাট থেকে। তবে কিউই বোলাররা থামাতে না পারলেও থামতে হয় গিলকে। পায়ে ক্র্যাম্প নিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি ৭৯ রানে।
নিউ জিল্যান্ডের স্বস্তি ফেরেনি তাতেও। এবার তাদের দুঃস্বপ্ন হয়ে আসেন শ্রেয়াস আইয়ার। কোহলি তো ততক্ষণে জমে উঠেছেন। রান আসতে থাকে বানের জলের মতো।
কোহলি ফিফটিতে পা রাখেন ৫৯ বলে। এই আসরে তার অষ্টম ফিফটি ছোঁয়া ইনিংস, বিশ্বকাপ ইতিহাসে রেকর্ড।
শ্রেয়াসের ফিফটি আসে ৩৫ বলে। ছক্কা তখন ৪টি। কোহলির রেকর্ডের পালা চলতে থাকে। এক বিশ্বকাপে টেন্ডুলকারের ৬৭৩ রানের রেকর্ড পেরিয়ে যান তিনি। আরও বড় রেকর্ডটি ধরা দেয় আরেকটু পর। টেন্ডুকারের ৪৯ সেঞ্চুরির রেকর্ড ছাড়িয়ে তিনি উঠে যান পঞ্চাশের উচ্চতায়। নিজের উচ্ছ্বাসটুকু জানিয়ে দেন লাফিয়ে উঠে উদযাপন করে। জীবনসঙ্গিনী আনুশকা শার্মার জন্য উড়ন্ত চুম্বন। আর নিজের নায়ক, যার কীর্তি ছাড়িয়ে গেলেন, সেই টেন্ডুলকারের জন্য মাথা নত করে কুর্নিশ।
রেকর্ডময় ইনিংস থামে ১১৩ বলে ১১৭ রান করে। শ্রেয়াসের সঙ্গে তার জুটিতে আসে ১২৮ বলে ১৬৩ রান!
শ্রেয়াস ততক্ষণে তাণ্ডব চালাচ্ছেন। টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন তিনি ৬৭ বলে। তাতে ছক্কা ৮টি!
শেষ দিকে তার সঙ্গে ধ্বংসলীলায় যোগ দেন লোকেশ রাহুলে (২০ বলে ৩৯*)। শেষ ১০ ওভারে ১১০ রান তুলে ভারত পৌঁছে যায় চারশর কাছে।
মিচেল স্যান্টনার ছাড়া নিউ জিল্যান্ডের কোনো বোলারই রানের স্রোতে বাঁধ দিতে পারেননি। সাউদি তো রান দেওয়ার সেঞ্চুরিই করে বসেন।
ওয়াংখেড়ের উৎসব রাঙিয়ে স্বপ্নের ফাইনালে ভারত
এই রান তাড়ায় প্রয়োজন ছিল উড়ন্ত শুরু। নিউ জিল্যান্ডের হয় উল্টো। ৫ ওভারে ৩০ রান তুলতে পারেন রাচিন রবীন্দ্র ও ডেভন কনওয়ে। এরপর আক্রমণে এসে দুজনকেই ফেরান মোহাম্মদ শামি।
সেই ধাক্কা সামাল দিয়ে নিউ জিল্যান্ডকে একটু একটু করে এগিয়ে নেন উইলিয়ামসন ও মিচেল। সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে রানের গতি। মিচেলের চাবুক ব্যাটের একেকটি শটে কমে আসে গ্যালারির কোলাহল। কখনও কখনও তো একদমই নীরব!
জুটি ভাঙতে বুমরাহকে ফেরান ভারতীয় অধিনায়ক। মিড অনে ক্যাচ তুলে দেন উইলিয়ামসন। কিন্তু তা ফসকে যায় শামির হাত থেকে! বুমরাহর তখন মাথায় হাত, রোহিতের মাথা নিচু, আর গ্যালারিতে দীর্ঘশ্বাস।
শেষ ২০ ওভারে নিউ জিল্যান্ডে লাগে ১৯৯ রান, উইকেট বাকি ৮টি। টি-টোয়েন্টি ম্যাচ তখন, খুবই সম্ভব!
শেষ পর্যন্ত প্রায়শ্চিত্ত করেন শামিই। ভারতের মাথাব্যথা হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙেন তিনিই। নতুন স্পেলে ফিরে বিদায় করে দেন সেই উইলিয়ামসনকেই (৬৯)। অসাধারণ জুটি থামে ১৪৯ বলে ১৮১ রানে।
এক বল পরই তার দারুণ ডেলিভারিতে বিদায় নেন টম ল্যাথাম। ম্যাচের রঙ বদলে যায় মুহূর্তেই।
এরপরই কমে আসে নিউ জিল্যান্ডের রানের গতি। বাড়তে থাকে রান-বলের টানাপোড়েন। এরপর আর তারা সেভাবে সম্ভাবনা জাগাতে পারেনি।
মিচেল অবশ্য চেষ্টা চালিয়ে যান। অস্বস্তিময় শুরুর পর মারকাটারি ব্যাটিংয়ে পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন গ্লেন ফিলিপস। তবে ওভারপ্রতি তখনও লাগত তাদের প্রায় ১৫ রান। ভারতের শঙ্কা তাই সেই অর্থে জাগেনি।
ফিলিপস ফেরেন ৩৩ বলে ৪১ রান করে। কিছু করতে পারেননি মার্ক চাপম্যানও।
তখন মিচেলের প্রয়োজন ছিল গ্লেন ম্যাক্সওয়েল হয়ে ওঠা। অতিমানবীয় কিছু করা। কিন্তু সেরকম কিছু করবেন বলে ঠিক করে রেখেছেন তো শামি!
মিচেলের লড়াই থামিয়েই পঞ্চম শিকার ধরেন তিনি। এরপর লোয়ার অর্ডারেও ছোবল দিয়ে গড়ে ফেলেন রেকর্ড। ৭২৪ রানের ম্যাচে ম্যান অব দা ম্যাচ একজন বোলার।
মুম্বাই শহরে উৎসব শুরু হয়ে গেছে ম্যাচ শেষের আগেই। সেই উচ্ছ্বাসের স্রোত এখন আহমেদাবাদের পথে বয়ে যাওয়ার পালা। ক্রিকেট পাগল দেশটির অপেক্ষা স্বপ্নের বিশ্বকাপ শিরোপার।
ভারত: ৫০ ওভারে ৩৯৭/৪ (রোহিত ৪৭, গিল ৮০*, কোহলি ১১৭, শ্রেয়াস ১০৫, রাহুল ৩৯, সুরিয়াকুমার ১; বোল্ট ১০-০-৮৬-১, সাউদি ১০-০-১০০-৩, স্যান্টনার ১০-১-৫১-০, ফার্গুসন ৮-০-৬৫-০, রবীন্দ্র ৭-০-৬০-০, ফিলিপস ৫-০-৩৩-০)
নিউ জিল্যান্ড: ৪৮.৫ ওভারে ৩২৭ (কনওয়ে ১৩, রবীন্দ্র ১৩, উইলিয়ামসন ৬৯, মিচেল ১৩৪, ল্যাথাম ০, ফিলিপস ৪১, চাপম্যান ২, স্যান্টনার ৯, সাউদি ৯, বোল্ট ২*, ফার্গুসন ৬; বুমরাহ ১০-১-৬৪-১, সিরাজ ৯-০-৭৮-১, শামি ৯.৫-০-৫৭-৭, জাদেজা ১০-০-৬৩-০, কুলদিপ ১০-০-৫৫-১)
ফল: ভারত ৭০ রানে জয়ী
ম্যাচ অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ শামি












সর্বশেষ সংবাদ
নৌকার মাঝি রাজী ফখরুলের সমর্থনে মোটরসাইকেল শোডাউন
এবারও আমরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন পাচ্ছি না: টিআইবি
নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন, সাকিবকে তলব
মীরসরাইয়ে ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা
স্বতন্ত্র প্রার্থী না হওয়ার কারণ জানালেন শাকিল খান
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লায় দাঁড়িয়ে থাকা তিন বাসে আগুন
মালয়েশিয়ায় ভবন ধসে কুমিল্লার এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন, সাকিবকে তলব
কুমিল্লায় উৎসবের আমেজে মনোনয়ন ফরম জমা দিচ্ছে আ’লীগ প্রার্থীরা
কুমিল্লায় আরো ২৪ প্রার্থীর মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft