অবরোধের নামে যে নিষ্ঠুর সহিংসতা চলছে, তাতে দেশের
মানুষ উদ্বিগ্ন। হরতাল-অবরোধ শুরুর পর থেকে ১৬ দিনে অন্তত ১২ জন কমবেশি
দগ্ধ হয়ে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, ঢাকা
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা
নিচ্ছে। পোড়া মানুষের দুঃসহ যন্ত্রণার যে করুণ দৃশ্য, তা চোখে দেখার মতো
নয়। কেউ কেউ হাসপাতাল থেকে ছাড়ার পেলেও ক্ষত শুকায়নি।
প্রতিদিন রাস্তায়
যানবাহনে আগুন দেওয়া হচ্ছে। দগ্ধ হচ্ছে মানুষ। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে
মানবতা কেঁদে ফিরছে। বিএনপির ডাকা অবরোধে এ পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে
অসংখ্য যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
অবরোধের বলি হচ্ছে
নি¤œবিত্তরাও। শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। যোগাযোগব্যবস্থা প্রায়
ভেঙে পড়ায় বিঘিœত হচ্ছে পণ্য সরবরাহ। এখন সবজির মৌসুম।
শীতের সবজির এই ভরা মৌসুমে বাজারে পাইকারি ক্রেতা নেই। ক্রেতাশূন্য বাজারে সবজি বিক্রি হচ্ছে না।
প্রাকৃতিক
দুর্যোগ নয়, মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ে সংকটে দেশের অর্থনীতি। অবরোধ-হরতালের মতো
রাজনৈতিক কর্মসূচি কার্যকারিতা হারিয়েছে অনেক আগেই। রাজনীতি এখন ভীতিকর
একটি ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।
রাজনৈতিক কর্মসূচি এখন জনমনে ত্রাস সৃষ্টি
করছে। মানুষের মনে এর স্থায়ী প্রতিক্রিয়া পড়ছে। সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব
পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। যানবাহনে হামলা, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া, পণ্য
পরিবহনে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা দেশের অভ্যন্তরে স্বাভাবিক অবস্থার চিত্র
তুলে ধরে না। রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
সন্ত্রাস-সহিংসতায় প্রাণহানি, বার্ন ইউনিটে মানুষের আহাজারি আমাদের
রাজনৈতিক দলগুলোকে বিন্দুমাত্র নাড়া দিতে পেরেছে বলে মনে হয় না।
রাস্তায়
যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে যাত্রীবাহী বাসও।
স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ও যোগাযোগ বিঘিœত হওয়ায় সর্বনাশের খাঁড়া নেমে এসেছে
সাধারণ মানুষের ওপর। রাজনৈতিক কর্মসূচির বলি হয়েছে দেশের নি¤œ আয়ের শ্রমিক
শ্রেণি। দৈনন্দিন জীবনে ছন্দঃপতন ঘটেছে। অনিশ্চয়তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে
অঘটনের ভয়।
এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। কেবলই
বিরোধিতার স্বার্থে বিরোধিতা না করে সব রাজনৈতিক দলকে দেশের মৌলিক প্রশ্নে
মতৈক্যে পৌঁছতে হবে। রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দেশে সংকট দেখা দিতে পারে-
এমন কোনো কর্মসূচি ঘোষণার আগে ভেবে দেখতে হবে।
আমাদের রাজনৈতিক সমস্যা
রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই সে জন্য খোলামনে এগিয়ে
আসতে হবে। দেশের মানুষ অপরাজনীতির বলি হতে পারে না। দলীয় দাবি আদায়ের জন্য
মানুষকে জিম্মি করা যায় না। সন্ত্রাস করে যে রাজনীতির মাঠে টিকে থাকা যায়
না, তারও অনেক ইতিহাস আছে। কাজেই রাজনীতিকে ইতিবাচক পথে আসতে হবে।
সাধারণ
মানুষ অবরোধের বলি হচ্ছে। মানুষকে কর্মহীন করে দেয়, মানুষের মনে ভীতির
সঞ্চার করে, অভ্যন্তরীণ জননিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়- এমন রাজনৈতিক
কর্মসূচি জনগণের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না।