দফায় দফায়
জটিলতায় চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির ২৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগ আটকে রয়েছে। প্রাথমিক
সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা চূড়ান্ত সুপারিশ নিয়ে চাকরিতে যোগদানের অপেক্ষায়
দিন গুনছেন। সর্বশেষ এক প্রার্থীর রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট নিয়োগ
প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ দেন। জটিলতা নিরসনে চেম্বার আদালতে আবেদন করে
বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ ও প্রত্যায়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
অবশেষে
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) চেম্বার আদালতে এনটিআরসিএ’র আবেদনের শুনানি হয়।
সেখান থেকে যে নির্দেশনা এসেছে, তাতে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাতে কোনো বাধা নেই
সংস্থাটির। এখন আদালতের নির্দেশে কিছু পদ বাদ রেখে সুপারিশ করতে পারবে
এনটিআরসিএ।
এনটিআরসিএ সূত্র বলছে, আইনি জটিলতা কেটে গেছে। এখন শিক্ষা
মন্ত্রণালয়ের অনুমতির অপেক্ষা। অনুমতি পেলেই যেকোনো দিন ২৮ হাজার শিক্ষক
নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিআরসিএর
একজন উপ-পরিচালক জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনেক তো হলো। এবার আমরাও মনপ্রাণ থেকে
চাই যে প্রার্থীরা চূড়ান্ত সুপারিশটা পেয়ে যাক। আদালতের দিক থেকে কোনো
জটিলতা আর নেই। এখন মন্ত্রণালয়ের দিকে চেয়ে আছি আমরা।’
তিনি বলেন, ‘চলতি
সপ্তাহে আর একটা কর্মদিবস আছে। সেটা হলো বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর)।
মন্ত্রণালয় যদি কাল (বৃহস্পতিবার) অনুমতিটা দিয়ে দেয়, আমরা যতরাতই হোক ফল
প্রকাশ করতে সমস্যা হবে না। সব তো গোছানো। টেলিটকের সঙ্গে সব আলাপ করে রেডি
রাখা হয়েছে। তারপরও যদি বৃহস্পতিবার সম্ভব না হয়, হয়তো আগামী সপ্তাহে
অর্থাৎ রবি বা সোমবার চূড়ান্ত সুপারিশটা হয়ে যাবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা
গেছে, আগস্টের শেষ সপ্তাহে ২৮ হাজার শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করতে
চেয়েছিল এনটিআরসিএ। ৩১ আগস্ট আদালত থেকে স্থগিতাদেশের কাগজপত্র এনটিআরসিএ
সচিবের দপ্তরে পৌঁছেছে। ফলে আটকে যায় সুপারিশ প্রক্রিয়া।
কাগজপত্র
ঘেঁটে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জের সাকিকুন নাহার নামে একজন নিবন্ধনধারীর নম্বর
ছিল ৬৩। তার আবেদন করা পদে ৬১ নম্বর পাওয়া নিবন্ধনধারীকে প্রাথমিক সুপারিশ
করে এনটিআরসিএ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই প্রার্থী হাইকোর্টে রিট করেন। আদালত
রিটের শুনানি নিয়ে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির নিয়োগ কার্যক্রমের ওপর ছয়মাসের
স্থগিতাদেশ দিয়েছেন, যার নথিপত্র ৩১ আগস্ট এনটিআরসিএ সচিব দপ্তরে পৌঁছে।
এর
আগে সহকারী মৌলভী পদে প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্তদের চূড়ান্ত সুপারিশ নিয়ে
জটিলতা দেখা দেয়। এ পদে প্রাথমিক সুপারিশ পাওয়া যেসব প্রার্থী ফাজিল
পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাদের চূড়ান্ত সুপারিশ না করার কথা
জানায় এনটিআরসিএ।
তবে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর প্রাথমিক সুপারিশ পাওয়া
সবাইকে সহকারী মৌলভী পদে চূড়ান্ত সুপারিশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদরাসা ও
কারিগরি শিক্ষা বিভাগে চিঠি দেয়। এ নিয়ে বৈঠকও হয়েছে। তবে, সেই জটিলতা
কাটেনি। এনটিআরসিএ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সহকারী মৌলভী পদ বাকি রেখে চূড়ান্ত
সুপারিশ করবে।
তারও আগে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নিয়োগে আরও এক দফা
আইনি জটিলতার সৃষ্টি হয়। তখন বরিশালের একজন প্রার্থী প্রাথমিক সুপারিশ না
পেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেছিলেন। সেবারও আদালত শুনানি নিয়ে স্থগিতাদেশ
দিয়েছিল। আইনি প্রক্রিয়ায়ই তা নিষ্পত্তি করে এনটিআরসিএ।
২০২২ সালের ২১
ডিসেম্বর চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। গত ১২ মার্চ প্রাথমিক সুপারিশের
ফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেশের স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য ৩২ হাজারের বেশি প্রার্থীকে
নির্বাচন করা হয়।
এর প্রায় দেড় মাস পর তাদের চূড়ান্ত সুপারিশের জন্য
প্রথমবারের মতো অনলাইনে ভি-রোল ফরম পূরণের নির্দেশ দেয় এনটিআরসিএ। এরপর আরও
দুই দফায় ফরম পূরণের সময় বাড়ানো হয়। এ পর্যন্ত ২৮ হাজারের মতো প্রার্থী
ভি-রোল ফরম পূরণ করে নিয়োগের অপেক্ষায় রয়েছেন।