বুধবার ২ জুলাই ২০২৫
১৮ আষাঢ় ১৪৩২
দেশের নারী ও প্রযুক্তি অধ্যাপক
ডাঃ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ
প্রকাশ: বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১২:৫৭ এএম |

 দেশের নারী ও প্রযুক্তি অধ্যাপক


এখন মেয়েরা কাজে অত্যন্ত মনযোগী। এর প্রধান কারণ হচ্ছে সন্ধ্যার পূর্বেই তাকে ঘরে ফিরতে হবে। তাই তাঁরা নয়টা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত শতভাগ মানসিক শক্তি কাজে লাগিয়ে কাজ করে। মধ্যবিত্ত গোষ্ঠীই বৈষম্য বেশি করছে। পোষাক খাতে যে ২২ লাখ মহিলা কাজ করে তারা প্রমাণ করেছে কাউকে না চিনে না জেনে শহরে এসে টিকে থাকা যায়। মধ্যবিত্তের মানসিকতা পরিবর্তনের প্রয়োজন। এজন্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। অনেকেই এখন বুঝেছে, ভবিষ্যতের মঙ্গলের জন্য একজন মেয়ের পিছনে ব্যয় করা ছেলের চেয়ে বেহেতের। তাই মেয়েদের শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। প্রযুক্তি নিয়ে ভীতি থাকতে পারে। পুরুষ নারীর ভেদাভেদ অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। নারীরা ইতিমধ্যেই বলছে প্রযুক্তির সঙ্গে নারীকে সম্পৃক্ত করতে সাংস্কৃতিক জগতে পরিবর্তন আনতে হবে। তারা নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থানের কথাই বলছে। ২০২০ সালে মাত্র ১২ শতাংশ নারী আইসিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাঁরা শুরু ও মধ্যম পর্য্যায়ের কাজের সঙ্গে সংযুক্ত। তাঁরা আইসিটি খাতে নীতিনির্ধারকের ভূমিকায় পৌঁছতে হবে। আমাদের সমাজ, পরিবার ও রাষ্ট্র তিন ধরনের পিতৃতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। এমনকি মা নিজেও অনেকসময় পিতৃতান্ত্রিক হয়ে যায়। কারণ এটা একটা সিস্টেমে রূপান্তরিত হয়ে পড়েছে। পিতামাতা হয় গর্ব করে বলে আমার মেয়ে বুয়েটে পড়ে বা আইসিটি পড়ে কিন্তু বিয়ের পর অনেকেই আর কাজ করতে পারছে না। জিজিটাল বাংলাদেশ বা স্মার্ট বাংলাদেশ এজেন্ডাটি কেবলই পুরুষের জন্য নয়। ২০২০ সনের পরিসংখ্যান বলছে দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশ নারী। এ নারীরা কিন্তু বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্তি। কেউ সমতলের বাসিন্দা, কেউ পাহাড়ী, কেউ দলিত, কেউ হরিজন, কেউ বা যৌনকর্মী। সবাইকে কিভাবে প্রযুক্তির সুফল ভোগে একই দাতার নীচে আনা যাবে এটিই নারী সমাজের মূল চ্যালেঞ্জের বিষয়। এ বিষয়ে অনেক গোষ্ঠীই কাজ করছে তবে তার একটি সমন্বিত রূপ এখনই প্রয়োজন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের হেনস্তা সংক্রান্ত একটি কমিটি হওয়ার কথা। কয়েকটি হয়েছে অধিকাংশই হয় নাই। মহামান্য আদালতের নির্দেশনা আছে এটি হওয়া উচিত। আমাদের সবার মাথায় আছে নারী দূর্বল। সবচেয়ে কষ্টের কাজ হচ্ছে সন্তান জন্মদান। নারী এ কষ্ট সহ্য করেন। তারপরও আমরা নারীকে এত দূর্বল ভাবী কেন। সারাদেশে শেখ রাসেলের নামে ১০ হাজার কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে বা হচ্ছে। কিন্তু প্রশিক্ষিত শিক্ষক নাই বেশির ভাগ জায়গায়। শ্রেনির চালিকাশক্তি শিক্ষকেরই যদি সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ না থাকে তাহলে ল্যাব করে কি লাভ। মনে রাখতে হবে, ঢাকায় বসে ইন্টারনেটের যে স্পীড পাওয়া যায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বা সুন্দরবন এলাকাতেও সে স্পীড নিশ্চিত করা দরকার। তেতুলিয়া, সুনামগঞ্জ, হাওরে, চারাগানে বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা। এ স্থানে রাষ্ট্রের বড় দায়িত্ব হচ্ছে ইন্টারনেটের গতি বাড়ানো। মুঠোফোনের দাম হয়ত কমেছে কিন্তু উচ্চমূল্যের ইন্টারনেট খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। মাসে ৫০০ টাকার ডাটা কেনা সত্যিই ব্যয়বহুল। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের পাশাপাশি ইন্টারনেটও মৌলিক অধিকারের মধ্যে চলে এসেছে। দেশের সবাই যেন সমভাবে ইন্টারনেট সুবিধা পেতে পারে এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই যেন এ সুবিধা ভোগ করতে পারেন সেদিকে লক্ষ্য রাখা বাঞ্চনীয়।
শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয়, সমগ্র বিশে^রই প্রকৌশল ও প্রযুক্তিখাতে নারীদের অংশগ্রহন কম। আমাদের পাবলিক পরীক্ষায় ফলাফলের দিক থেকে অধিক সংখ্যায় নারীরা কৃতিত্বের দাবীদার। নারী শিক্ষার্থীদেরই অধিপত্য দেখা যায়। তবে কেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে নারীরা পিছিয়ে। মেধাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে না পারার কারণেই সফলতা পাওয়া যাচ্ছে না। জিএসএমএ, লন্ডন কর্তৃক প্রকাশিত দ্য মোবাইল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২০ অনুযায়ী বাংলাদেশের ৮৬ শতাংশ পুরুষের কাছে মুঠোফোন আছে। অন্যদিকে মুঠোফোন ব্যবহারকারী নারীর সংখ্যা ৬১ শতাংশ। এর অর্থ এক্ষেত্রে নারী পুরুষ বৈষম্য। মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য আরও প্রকট। দেখা যায়, মা-বাবা তাঁর পুত্র সন্তানের প্রয়োজনে মুঠোফোন বা ল্যাপটপ কিনে দিতে দ্বিধাবোধ করেন না কিন্তু কন্যাসন্তান একটি ডিভাইস পেতে সচ্ছল পরিবারেও অনেক বেগ পেতে হয়। যেসব পরিবারে একটি মুঠোফোন অনেক ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে ডিভাইসের মালিকানা থাকে পুরুষ সদস্যের কাছে। করোনার সময় অনেক নারী শিক্ষার্থী এ কারণে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হতে পারেননি। ভাইবোন দুজন শিক্ষার্থী থাকলে ভাইটি অনলাইন ক্লাসে যুক্ত থাকতে প্রাধান্য পেয়েছে। সঞ্চয়ের ক্ষেত্রেও দেখা যায় ছেলেদের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য হয় সঞ্চয় আর মেয়েদের বিয়ে দেয়ার জন্য।
প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করতে আমরা যে চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হচ্ছি, তার জন্য আমরা এখনো তৈরি হতে পারিনি। পরিবারে ছেলেবেলা থেকে যদি নারীদের সম্মান করতে না শেখাতে পারি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাইবার সচেতনতা তৈরি না করতে পারি, তাহলে পরিচয় লুকিয়ে মিথ্যা একাউন্ট খুলে তাকে বিরক্ত, অবমাননা, সম্মানহানী ও বিব্রত করার প্রক্রিয়া চলতে থাকবে। নারীদের জন্য নিরাপদ সাইবার স্পেস নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের যথাযথভাবে প্রশিক্ষণ প্রদান ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। সাইবার নিরাপত্তার জন্য বিনিয়োগকে প্রায়োরিটি দিতে হবে। ইন্টারনেট ব্যবহারে কিভাবে সতর্কতা অবলম্বন করা যায়, সে বিষয়ে নারীদের সচেতন করে তোলা জরুরী। সবধরনের সরকারি সেবা ও বেসরকারি খাতের অনেক সেবা এখন অনলাইনে দেয়া হচ্ছে। আগে যে নারী পুরুষ বৈষম্য ছিল সেটা অনেক কমে এসেছে। কিন্তু একদল প্রযুক্তি ব্যবহারে অক্ষম আরেকদল প্রযুক্তি কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে জানেন তাহলে এ বিভেদটা ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে। সাধারণত নারীদের টার্গেট করে সংগঠিত প্রযুক্তি কেন্দ্রিক অপরাধগুলো এক ক্লিকের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে লাখ লাখ অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। এ কারণে অনেক নারীই ক্যারিয়ার বা জীবন নিয়ে সামনে এগোতে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছেন। সামগ্রীকভাবে অবমাননাকর পরিস্থিতিতে পড়ে একজন নারী বা কিশোরী তার ভবিষ্যৎ গড়তে বাঁধা পাচ্ছেন। এটি একটি অপূরণীয় ক্ষতি। এ ক্ষতি থেকে একজন নারী নিজেকে এবং আরো ১০ জনকে সুরক্ষিত রাখতে নিরাপদ প্রযুক্তি ব্যবহারের উপায় জানতে হবে। ভুক্তভোগীদের বিদ্যমান আইনি সহায়তা নিতে এ ধরনের ক্রাইম রিপোর্ট করতে হবে। এর মাধ্যমে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীরা দেখে যে, কিছুতে কিছুই হচ্ছে না তখন তাদের সাহস আরও বৃদ্ধি পায়। আরও দশজন নারীকে তারা শিকারে পরিণত করতে পারেন। প্রযুক্তি নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ ব্যাপক হারে কেন্দ্র থেকে সুদূর প্রান্তে পৌঁছে দিতে হবে।
ডিজিটাল প্রযুক্তিতে কাজ করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে অফিসের ধরাবাঁধা সময়ে বাইরে বাড়িতে বসেও অনেক কাজ করা। ই-কমার্স, এফ-কমার্স, এম-কমার্সের আওতায় আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরাও এখন স্বাবলম্বী হচ্ছেন। টেকনিক্যাল বিষয়গুলো ছেলেদের বিষয় হিসাবে ধরে নেয়া হয়। অথচ বিশে^র প্রথম প্রোগ্রামার এডা লাভলেস ছিলেন একজন নারী। আশার কথা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আছে। ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম রিপোর্ট ২০২১ অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ৭১ তম। দক্ষিণ এশিয়ার বাকী দেশগুলোর মধ্যে নেপাল ৭৬ তম, শ্রীলঙ্কা ১১০ তম, ভূটান ১২৬ তম, ভারত ১৩৫ তম, পাকিস্তান ১৪৫ তম ও আফগানিস্তান ১৪৬ তম অবস্থানে। বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগ, কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতার কোন বিকল্প নাই।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ












সর্বশেষ সংবাদ
নতুন বইয়ের বর্ণিল নতুন বছর
নৌকায় ভোট নিতে ভাতার কার্ড আটকে রাখার অভিযোগ
শান্তির নোবেলজয়ী থেকে দণ্ডিত আসামি
শ্রমিক ঠকানোর দায়ে নোবেলজয়ী ইউনূসের ৬ মাসের সাজা
ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা অধ্যক্ষ পদে অধ্যাপক ডাঃ রুহিনী কুমার দাস এর দায়িত্ব গ্রহণ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
গাড়ির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধু নিহত
বরুড়ায় শ্রমিকদল নেতাকে ছুরিকাঘাত
অর্ধেক দামে ফ্রিজ বিক্রি করছেন ফ্রিজ প্রতীকের প্রার্থী
বাড়ির জন্য কেনা জমিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যাওয়া একই পরিবারের ৪ জনের কবর
৫৫ কেজি সোনা চুরি, ফের রিমান্ডে দুই রাজস্ব কর্মকর্তা
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২