বাড়ছে অবৈধ অস্ত্র
|
সীমান্তের চোরাপথে অবৈধ অস্ত্র ঢুকছে
দেশে। বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে নিরাপদ রুট। চোরাপথে আসা অবৈধ অস্ত্র চলে
যাচ্ছে অপরাধীদের হাতে। দেশে খুনখারাবি, ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাইসহ নানা
অপরাধে অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। অবৈধ অস্ত্রের লাভজনক বাণিজ্যকে কেন্দ্র
করে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। রাজনৈতিক কিংবা ব্যাবসায়িক পরিচয়ের
আড়ালে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসাই প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রতিফলনও আমরা
দেখতে পাচ্ছি। সব ধরনের অপরাধ ছাপিয়ে এখন অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে বাড়ছে
আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা অপরাধের সংখ্যা।খুনের ঘটনা ঘটছে। সন্ত্রাসীরা প্রায় প্রকাশ্যেই অস্ত্রবাজি করছে; এমনকি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গেও সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। এসব থেকে এটাই স্পষ্ট হয় যে দেশে অবৈধ অস্ত্রের ব্যাপক সমাবেশ ঘটেছে। শহর ছাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলেও পৌঁছে গেছে এসব অস্ত্র। সন্ত্রাসীদের হাতে এখন অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি। প্রায় প্রকাশ্যেই ঘটছে অস্ত্রবাজি। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। এতে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গড়ে প্রায় এক হাজার অস্ত্র বেশি উদ্ধার করা হয়েছে। র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির তথ্য মতে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় আট হাজার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। সীমান্তপথে অবৈধ অস্ত্রের অনুপ্রবেশ বাড়ছে। স্থলপথে ও নৌপথে ভারত বা মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধ অস্ত্রের চালান আসে। সীমান্ত এলাকার প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি অস্ত্রের চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত। রাজনৈতিক খুঁটির জোরও আছে তাদের। ফলে কখনো চালানসহ বাহক ধরা পড়লেও মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে কিছু সিন্ডিকেট। অস্ত্রের সরবরাহ হয় এসব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের অস্ত্রও আসছে। সীমান্তের চিহ্নিত রুটগুলো বন্ধ করতে না পারায় দেশে অবৈধ অস্ত্রের মজুদ বাড়ছে। অপরাধ বিশ্লেষকদের মতে, বছরে এক হাজারের বেশি অবৈধ অস্ত্র দেশে ঢুকছে। সম্প্রতি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দেশে গুলির ঘটনা ১৫০টি ছাড়িয়ে গেছে। ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত আরো শতাধিক গুলির ঘটনা ঘটে। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে সাতজনের বেশি। মাঝেমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে। তবে বেশির ভাগই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, কারা অবৈধ অস্ত্র দেশে আনছে, কারা কিনছে, কারা ব্যবহার করছে-সার্বিকভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাহলেই পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব। দেশ এখনো জঙ্গিবাদী প্রবণতা থেকে মুক্ত হয়নি। সামনে জাতীয় নির্বাচন। অবৈধ অস্ত্র জঙ্গি-সন্ত্রাসী বা রাজনৈতিক ক্যাডারদের হাতে থেকে গেলে বড় বিপত্তির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। এসব উদ্ধার করা জরুরি। সীমান্ত রুটগুলো অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। যারাই বেআইনি অস্ত্র আমদানি ও ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত, তাদের ছাড় দেওয়া উচিত হবে না। রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদিচ্ছা খুব দরকার। তারা সদিচ্ছা পোষণ না করলে গডফাদারদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। সব অবৈধ অস্ত্র যদি উদ্ধার করা না যায়, চোরাচালান যদি নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়, তাহলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক করা যাবে না। |