সবুজ মাঠের একপাশে বিশাল ভবন। অপর পাশ ঘেঁষে চলে গেছে বালাসীঘাট সড়ক। তবে পুরো ভবনটিই অদৃশ্য। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে কোনো কৃষি জমি। এই মাঠের ভেতরেই লুকিয়ে আছে অনন্য এক স্থাপনা ‘ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার’। গাইবান্ধা শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গাইবান্ধা-বালাসী সড়ক ঘেঁষে এ স্থাপনার অবস্থান।
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনেরপাড়া গ্রামে অবস্থিত ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটি দেখলে মনে হয়, যেন প্রকৃতির মাঝে অদৃশ্যমান কোনো জাদুর বস্তু। প্রায় আট বিঘা জমির ওপর নির্মিত এ স্থাপত্যের আয়তন ৩২ হাজার বর্গফুট।
ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের অবস্থান একদম মাটির ভেতর। তবে স্থাপত্যের ছাদটি মাটির সমতলে। দৃষ্টিনন্দন করতে ছাদে লাগানো আছে নানা প্রজাতির গাছ, ফুল ও ঘাস।
তবে শুধু দৃষ্টিনন্দন করাই উদ্দেশ্য নয়; চলে দাপ্তরিক নানা কাজও। পরিবেশবান্ধব ভবনটিতে আছে একসঙ্গে ২০০ জন প্রশিক্ষণ নেওয়ার ব্যবস্থা। থাকার জন্য আবাসিক কক্ষ আছে ২৪টি, খাওয়ার জন্য আলাদা রেস্তোরাঁ, লাইব্রেরি, হেলিকপ্টারে আসার জন্য হেলিপ্যাডসহ নানা সুবিধা। ভেতরের সবকিছুই পরিপাটি ও নয়নাভিরাম।
পানি নিষ্কাশনের জন্য পাঁচটি নর্দমার ব্যবস্থা আছে। আছে ক্যারাম, দাবা ও ব্যাডমিন্টন খেলার ব্যবস্থা। আছে আধুনিক ইন্টারনেট সুবিধা, জেনারেটরের ব্যবস্থাসহ আরও অনেক কিছু। ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটি নির্মাণ করতে প্রায় দুই বছর সময় ব্যয় হয়েছে। নিয়মিত কাজ করেছেন ৬০-৭০ জন শ্রমিক। সে সময় ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় আট কোটি টাকা।
অনবদ্য সৃষ্টি ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে। এর অদ্ভুত নির্মাণশৈলীর কারণে প্রতিদিন শত শত কৌতূহলী পর্যটকরা স্থানটিতে ভিড় করেন। ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটির আছে একাধিক অ্যাওয়ার্ড। ২০১৬ সালে পেয়েছেন ‘আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার’ পুরস্কার।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ও পরিবেশবান্ধব ভবনটির কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে এবং ২০১২ সালের অক্টোবরে এর কাজ শেষ হয়। এরপর ওই বছরের নভেম্বরেই আনুষ্ঠানিকভাবে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটির কার্যক্রম শুরু হয়। তবে যেহেতু এটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের অফিস, তাই ভেতরে প্রবেশের আগে অবশ্যই অনুমতি নিতে হয়।