সাঈদ ইবনে
মুসাইয়্যাব (রহ.) তার বাবা মুসাইয়্যাব (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, আবু
তালিবের মৃত্যু ঘনিয়ে এলে নবি (সা.) তার কাছে গেলেন। এ সময় আবু জাহল ও
আবদুল্লাহ ইবনে আবু উমাইয়াও সেখানে বসে ছিলেন। নবিজি (সা.) চাচাকে বললেন,
আপনি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়ুন, আমি আপনার মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে
দলিল পেশ করব। এ কথা শুনে আবু জাহল ও আবদুল্লাহ ইবনে উমাইয়া বলল, আবু
তালিব! তুমি কি আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম ত্যাগ করবে? নবিজি (সা.) বললেন,
চাচা! আমি আপনার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে যতক্ষণ আমাকে নিষেধ না করা হবে
ততক্ষণ ক্ষমা চাইতে থাকব। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়,
নবি ও মুমিনদের পক্ষে
উচিত নয় যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে মুশরিকদের জন্য যদি তারা
নিকটাত্মীয়ও হয় যখন তাদের কাছে এ কথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামি।
(সুরা বারাআত: ১১৩) (সহিহ বুখারি: ৪৬৭৫)
এ হাদিস থেকে যে শিক্ষাগুলো আমরা পাই:
১.
কালিমায়ে তাওহিদ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অত্যন্ত মহিমান্বিত কালিমা। এটি
ইসলামে প্রবেশ করার চাবি। এ কালিমা মানুষকে দুনিয়াতে নিরাপত্তা দেয় ও
আখেরাতে মুক্তি দেয়। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অর্থা হলো, কোনো সত্যিকার মাবুদ
নাই শুধু এক ইলাহ ছাড়া এবং তিনি হলেন আল্লাহ। ‘লা ইলাহা’ বলে আল্লাহ ছাড়া
যতো কিছুর ইবাদত করা হয় সব কিছু অস্বীকার করা হয়। ‘ইল্লাল্লাহ’ বলে শুধু এক
আল্লাহর দাসত্বের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তার রাজত্বের যেমন কোনো শরিক নাই,
তার দাসত্ব বা ইবাদতেরও কোনো শরিক নাই।
২. এই হাদিসটি থেকে বোঝা যায় মানুষের পরিণাম নির্ধারিত হয় শেষ সময়ের আমল অনুযায়ী। রাসুল সা. বলেছেন,
মানুষের পরিণাম নির্ভর করে শেষ সময়ের আমলের ওপর। (সহিহ বুখারি)
তাই
কেউ মৃত্যুর সময় কালিমা পড়লে তা তার উপকারে আসবে। তা না হলে নবিজি শেষ
সময়ে চাচাকে কালিমা পড়তে বলতেন না। নবিজি তার চাচাকে বলেছিলেন, ‘লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ’ বলুন আমি আল্লাহর কাছে দলিল পেশ করবো অর্থাৎ আপনার জন্য শাফাআত
বা সুপারিশ করবো। কেয়ামতের দিন নবিজি শুধু ঈমানদারদের জন্যই সুপারিশ
করবেন। তাই এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, ওই সময় কালিমা পড়লে আবু তালিব মুমিন হয়ে
যেতেন।
৩. কাফেরদের জন্য ক্ষমা বা রহমত প্রার্থনা করা বৈধ নয়। যারা
মুশরিক অবস্থায় মারা যায়, তারা চিরজাহান্নামি। তাদের জন্য দোয়া করা জায়েজ
নয়। যেমন আল্লাহ বলেছেন,
নবি ও মুমিনদের পক্ষে উচিত নয় যে, তারা ক্ষমা
প্রার্থনা করবে মুশরিকদের জন্য যদি তারা নিকটাত্মীয়ও হয় যখন তাদের কাছে এ
কথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামি। (সুরা বারাআত: ১১৩)
আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের ক্ষমা না করার ঘোষণা দিয়ে বলেন,
নিশ্চয়
আল্লাহ ক্ষমা করেন না তাঁর সাথে শরীক করাকে এবং এ ছাড়া যাকে চান ক্ষমা
করেন। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে তো ঘোর পথভ্রষ্টতায় পথভ্রষ্ট হল।
(সুরা নিসা: ১১৬)