উম্মতে মুহাম্মদি বা শেষ
নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতকে এমন কিছু
সম্মাননা আল্লাহ দিয়েছেন, যা অন্য কোনো উম্মতকে দেননি। আল্লাহ তায়ালা এই
উম্মতকে শ্রেষ্ঠ উম্মত ঘোষণা দিয়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে যত জাতির আবির্ভাব
হয়েছে, এর মধ্যে উম্মতে মুহাম্মদিই শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী।
আল্লাহ তায়ালা
বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানব জাতির জন্য যাদের বের করা হয়েছে; তোমরা
সৎকাজের নির্দেশ দিবে, অসৎকাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনবে।’
(সূরা আল ইমরান, আয়াত, ১১০)
হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ... তোমরাই হলে আল্লাহর কাছে সব থেকে উত্তম এবং
সব থেকে বেশি সম্মানিত। (তিরমিজি, হাদিস, ৩০০১, ৪২৮৭)
অপর এক হাদিসে
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জান্নাতীদের কাতার হবে
১২০টি। এরমধ্যে আশিটি কাতার হবে এই উম্মতের।’ (তিরমিজি, হাদিস, ২৫৪৬, ইবনে
মাজাহ, হাদিস, ৪২৮৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস, ৫/৩৫৫)
হজরত মুহাম্মদ
সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মতো তার উম্মতের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। আল্লাহ
তায়াল এই উম্মতকে এমন পাঁচটি বিষয় দান করেছেন যা আগের কোনো নবীর উম্মতকে
দান করা হয়নি।
বিশেষ এই পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জাবির ইবনে আবদুল্লাহ
রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন, আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় দান করা হয়েছে, যা আমার আগে কোনো
নবীকে দান করা হয়নি।
বিষয়গুলো হলো-
পুরো পৃথিবী নামাজের স্থান হিসেবে স্বীকৃতি
আগের
উম্মতদের জন্য যেখানে-সেখানে নামাজ পড়ার অনুমতি ছিল না; নির্দিষ্ট
উপাসনালয়েই নামাজ আদায় করতে হতো। তা ছাড়া মাটি থেকে পবিত্রতা অর্জনের কোনো
বিধান সেকালে ছিল না। বিপরীতে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য পুরো পৃথিবীকে
নামাজের স্থান বানিয়ে দিয়েছেন এবং যেকোনো মাটিজাতীয় বস্তু থেকে তায়াম্মুম
করে পবিত্রতা অর্জন করার অনুমোদন দিয়েছেন।
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন,
‘গোটা জমিন আমার জন্য নামাজ আদায় ও পবিত্রতা অর্জনের উপায় করা হয়েছে। কাজেই
আমার উম্মতের যে কেউ যেখানেই নামাজের সময় হয় সেখানেই যেন নামাজ আদায় করে
নেয়।
যুদ্ধলব্ধ সম্পদের বৈধতা
আগেকার নবী-রাসুলদের যুগে যুদ্ধলব্ধ
সম্পদ ভোগ করা মুসলমানদের জন্য বৈধ ছিল না। যুদ্ধে যেসব সম্পদ অর্জিত হতো,
তা একত্রিত করা হতো এবং আসমান থেকে আগুন এসে তা ভস্ম করে দিত। এটিই ছিল
যুদ্ধ কবুল হওয়ার নিদর্শন। আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহ করে উম্মতে মুহাম্মদীর
জন্য যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বৈধ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা যে
যুদ্ধলব্ধ সম্পদ লাভ করেছ, তা হালাল ও উত্তমভাবে ভোগ-ব্যবহার করো এবং
আল্লাহকে ভয় করো।’ (সুরা আনফাল, আয়াত, ৬৯)
বিধানাবলি সহজকরণ
অন্যান্য
উম্মতের ওপর হারাম ছিল এমন অনেক বিষয় আমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে।
কিসাসের বিকল্প দিয়তের আইন আগে ছিল না। বনি ইসরাইলের সময় কারো গায়ে পেশাবের
ছিটা লাগলে তা কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলতে হতো। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা উম্মতে
মুহাম্মদীর জন্য এসব বিষয় সহজ করেছেন। অসাধ্য কোনো বিধান ইসলামে নেই।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনিই তোমাদের মনোনীত করেছেন। দ্বিনের ব্যাপারে তোমাদের ওপর কোনো কঠোরতা আরোপ করেননি।’
মুআজ
ইবনে জাবাল ও আবু মুসা আশআরী (রা.)-কে ইয়েমেন পাঠানোর সময় রাসুল (সা.)
নসিহত করে বলেন, ‘তোমরা উভয়ে মানুষের সঙ্গে সহজ আচরণ করবে। কঠোর হবে না।
সুসংবাদ শোনাবে। ঘৃণা ছড়াবে না।’ (মুসলিম, হাদিস, ১৭৩৩)
মহিমান্বিত জুমার দিনের সন্ধান লাভ
সপ্তাহের দিনগুলোর মধ্যে জুমাবার হলো শ্রেষ্ঠতম দিন। আগেকার উম্মত এই দিনের ফজিলত থেকে বঞ্চিত হয়।
এ
বিষয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমরা শেষ উম্মত। তবে কিয়ামতের দিন আমরা সবার
অগ্রগামী হব। কারণ আগের লোকদের কিতাব দেওয়া হয় এবং এক পবিত্র দিনে ইবাদত
করা তাদের ওপর ফরজ করা হয়। কিন্তু তারা তাতে মতভেদ করে। অবশেষে আল্লাহ
তাআলা আমাদের এ দিনটির সন্ধান দেন। এ ব্যাপারে সব উম্মত আমাদের অনুগামী।
ইহুদিরা পরের দিন তথা শনিবার এবং খ্রিস্টানরা এর পরের দিন তথা রবিবারকে
মর্যাদার দিন হিসেবে সাব্যস্ত করে।’ (মুসলিম, হাদিস, ৮৫৫)
সমূলে ধ্বংস হওয়া থেকে সুরক্ষা
রাসুল
(সা.) বলেন, ‘আমার পালনকর্তা বলেছেন, হে মুহাম্মদ, কোনো বিষয়ে আমার
সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তা আর বাতিল হয় না। আপনার উম্মতের ব্যাপারে আমি এই
প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে তাদের আমি দুর্ভিক্ষ দিয়ে ধ্বংস করব না এবং তাদের
দুনিয়া থেকে ধ্বংস করে দেয় এমন কোনো বহিরাগত শত্রু চাপিয়ে দেব না।’
(মুসলিম, হাদিস, ২৮৮৯)