সরকার
যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভূত উন্নয়ন করেছে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারও
ক্ষমতায় আসতে পারলে আর কোন গ্রামে কোন রাস্তা যেগুলো কাঁচা রয়েছে আর কাঁচা
থাকবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, টানা তিন
মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশের উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে। দীর্ঘদিনের কষ্টের
ফসল দেশের এই উন্নয়নটা যেন আর কেউ নষ্ট করতে না পারে সেজন্য সারাদেশের
জনপ্রতিনিধিসহ দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। আমরাও এটা চাই যে, আজকে
যে উন্নয়নটা তা দীর্ঘদিনের কষ্টের ফসল। এট যেন আর নষ্ট করতে না পারে। ২০০৯
থেকে ২০২৩ বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা এটা যেন অব্যাহত থাকে। লাখো শহীদের
রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ব্যর্থ হয় নাই,আমরা ব্যর্থ হতে দেব না।
আমাদের বাংলাদেশ, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি এগিয়ে যাবে। আমরা সাধারণ মানুষের
কল্যাণে কাজ করি, ইনশাআল্লাহ দেশের কোনো মানুষ দরিদ্র থাকবে না।
বৃহস্পতিবার
(১৪ সেপ্টেম্বর) গণভবনে প্রথমবারের মত আয়োজিত ‘জাতীয় স্থানীয় সরকার
দিবন-২০২৩’ উপলক্ষে সারাদেশের স্থানীয় সরকারের পাঁচটি স্তরের আট সহস্রাধিক
জনপ্রতিনিধিদের বিশাল মিলনমেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে
প্রধানমন্ত্রী মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জনপ্রতিনিধিদের সোচ্চার
হওয়ার পাশাপাশি তৃণমূলের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে এবং তা ধরে
রেখে তাদেরকে এগিয়ে যাবার আহ্বান জানান।
সারাদেশ থেকে আগত
জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা তৃণমূলের মানুষ
জনগণের ভোটে নির্বাচিত, জনগণের সেবক। জনগণের কল্যাণে কাজ করা এটা আপনার
আমার সকলেরই দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে মানুষের সেবা করে
এবং মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে আপনারা এগিয়ে যাবেন। মানুষ একবার
যখন আপনাদের ভোট দিয়েছে তারা আবারও যেন আপনাকে ভোট দিতে পারে আপনাদের
জনগণের সেই আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের
অঙ্গীকারের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন ঘোষণা দিয়েছি আমরা স্মার্ট
বাংলাদেশ করব। আমাদের যেটুকু সম্পদ আছে, এই সম্পদ নিয়েই আমাদের দেশকে এগিয়ে
নিয়ে যেতে হবে। সেইভাবেই সকলকে কাজ করার জন্য অনুরোধ জানাই। আমরা একটানা
তিনবারে সরকারে এসেছি। ২০০৯’র নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে একটা
স্থিতিশীল পরিবেশ রেখে আমাদের উন্নয়নের কাজ করতে পেরেছি। গণতান্ত্রিক
ধারাটা বজায় রাখতে পেরেছি। যার জন্য আমরা একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত
উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনো আমি জানি অনেক
গ্রামে কাঁচা রাস্তা আছে। সেগুলো আল্লাহর রহমতে থাকবে না। ইনশাআল্লাহ আবার
যদি জনগণের সেবার সুযোগ পাই, নিশ্চয়ই আমরা সেগুলোও করে (পাকা) দেব। কারণ
প্রত্যেকটা গ্রাম শহরের মতো গড়ে উঠবে। আমার গ্রাম আমার শহর আপনারা জানেন
সেই পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি। সেইভাবে গড়ে তুলবো।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়
আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়
মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যও
বক্তৃতা করেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইবরাহিম স্বাগত বক্তৃতা
করেন। আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিষ্টার
শেখ ফজলে নূর তাপস, রাজশাহী সিটি কর্পোারেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান
লিটন, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, খুলনা
সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের
মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ স্থানীয় সরকারের পাঁচটি স্তর তথা উপজেলা,
জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, ভাইস
চেয়ারম্যানরা বক্তব্য রাখেন।
সারাদেশের তৃণমূল থেকে আসা নির্বাচিত
জনপ্রতিধিদের বক্তব্যে দীর্ঘ সময় ধরে মনোযোগ ধরে শোনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা। তৃণমূলের অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিরাই দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা
অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে নৌকার বিজয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার দৃঢ়
অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি নির্বাচনের পর আবারও এমন মিলনমেলায় ডাকার
জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আরেকবার দাওয়াত দিন, আমরা
আমাদের অনেক সমস্যার কথা আপনাকে প্রাণখুলে জানাতে চাই। অনুষ্ঠান শেষে
সারাদেশ থেকে আসা আট হাজারেরও বেশি জনপ্রতিনিধিদের মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়িত
করেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকার প্রতিবছর ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় স্থানীয়
সরকার দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ‘সেবা ও উন্নতির দক্ষ রূপকার,
উন্নয়নে-উদ্ভাবনে স্থানীয় সরকার’- এই স্লোগান নিয়ে দিবসটি উদযাপন করা
হচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা, কর্মতৎপরতা, গুরুত্ব ও
সর্বোপরি জনসচেতনতা তৈরি এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে জনগণের
সম্পৃক্ততা বাড়াতে দিবসটি উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ বছর প্রথম
বর্ষ হিসেবে এ কর্মসূচি ১৪ সেপ্টেম্বর পালিত হচ্ছে।
প্রধান অতিথির
বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের
হত্যাকান্ডের ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ২১ বছর পর জনগণের শক্তি নিয়ে দেশে ফিরে
আসার কথা তুলে ধরে বলেন, পিতা-মাতা-ভাই সব হারিয়েছিলাম। বিদেশের ছোট বোন
এবং আমি রিফিউজি হিসাবে থাকতে হয়েছিল। আমার ছোট বোন রেহানার পাসপোর্টটাও
জিয়াউর রহমান দেয়নি। সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল রিনিউ করে দেয়নি। আমরা নিজেদের
নামটাও ব্যবহার করতে পারতাম না নিরাপত্তার জন্য, যে দেশ আশ্রয় দিয়েছিল,
তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। একাত্তরে যেমন আমাদের দেশের মানুষকে
আশ্রয় দিয়েছে,পরবর্তীতেও দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত করার জন্য
দলের নেতাকর্মীসহ জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন,
হারিয়েছিলাম বাবা-মা-ভাই। সব হারিয়ে বাংলাদেশে ফিরে পেয়েছি বিশাল জনগোষ্ঠী
যারাই আমার পরিবার। বাংলাদেশে মানুষই আমার আপনজন। তারাই আমার পরিবার।
সেখানেই আমি খুঁজে পেয়েছি আমার সমস্ত শক্তি। আপনারা ফিরে গিয়ে দেশবাসীকে
আমার শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দেবেন।
গণভবনে আগত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের
উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি মনে করি সমগ্র বাংলাদেশ থেকে তৃণমূল
পর্যায়ের আপনারা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি, আপনাদের গণভবনে উপস্থিতি
গণভবনের মাটি ধন্য হয়েছে। গনভবনের মাটি গণমানুষের মাটি হিসাবেই আজকে
প্রতীয়মান হচ্ছে। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গন্ধু শেখ মুজিব দেশ স্বাধীন
করেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। গণমানুষের কল্যাণের
জন্য। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য। সেই তৃণমূল মানুষের
প্রতিনিধি হিসাবে আজকে আপনারা এখানে এসে বক্তব্য দিয়েছেন। তাই তাদের প্রতি
আন্তরিক ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
মাদক সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে
স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী
বলেন, কেউ যেন এই মাদক-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয় সেদিকে
বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। সারাদেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ করার পাশাপাশি
মন্দির মসজিদ প্যাগোডা গীর্জা সংস্কার করে দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে সরকার
প্রধান বলেন, এই দেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ।
তিনি বলেন, শুধু আমরা
মসজিদ করে দিচ্ছি সেটা না। আমরা কিন্তু মন্দির বা গীর্জা প্যাগোডা যেটা যখন
প্রয়োজন আমরা তাদেরকেও সহযোগিতা করছি। ঢাকেশ্বরী মন্দির সেটাও আমরা তৈরি
করে দিয়েছি। কারণ বিএনপির আমলে অনেক মন্দির ভেঙ্গে ও পুড়িয়ে দিয়েছিল। কাজেই
আমাদের যারা অন্যান্য সম্প্রদায় তাদের সঙ্গে আমরা এক হয়ে চলি। কারণ একই
সঙ্গে যুদ্ধ করে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। তাই এই বিষয়গুলোর দিকেও স্থানীয়
জনপ্রতিনিধিদের ভালভাবে দেখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
টানা
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশটাকে আমরা আরও উন্নত করতে চাই,
এগিয়ে নিতে চাই। জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশে ডিজিটাল বাংলাদেশ করে
দিয়েছি। এখন আমাদের লক্ষ্য আমরা বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করব। বাংলাদেশ
আজকে সারা বিশ্বব্যাপী মর্যাদা পেয়েছে। এই মর্যাদা ধরে রাখতে হবে। আর সেই
সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ যেন সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
সারাদেশে
অবকাঠামা উন্নয়নে রাস্তাঘাট, পুল-ব্রীজ করে দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা
বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের উপর অভিযোগ দিয়েছিল। চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম
নিজের অর্থে করবো। সেই চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখেই নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু
করেছি। পদ্মার রেললাইনও করে দিয়েছি। কাজেই এখন আর যোগাযোগের কোন অসুবিধা
নাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা তৃণমূলের মানুষ। জনগণের ভোটে নির্বাচিত
জনগণের সেবক। জনগণের কল্যাণে কাজ করা এটা আপনার-আমার সকলেরই দায়িত্ব। আর
এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে মানুষের সেবা করে, মানুষের আস্থা বিশ্বাস
অর্জন করে আপনারা এগিয়ে যাবেন। কারণ একবার যখন মানুষ আপনাকে ভোট দিয়েছে
মানুষ যেন আবার আপনাকে ভোট দিতে পারে, আপনাদেরও সেই মানুষের আস্থা বিশ্বাস
অর্জন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরাও এটা চাই আজকে যে উন্নয়নটা দীর্ঘদিনের
কষ্টের ফসল। এটা যেন আর নষ্ট করতে না পারে। কারণ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ যতটুকু
এগিয়েছিলাম আবার ওই বিএনপি-জামায়াত জোট পিছিয়ে দিয়েছিল। ২০০৯ থেকে ২০২৩
বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা এটা যেন অব্যাহত থাকে। কাজেই জনগণের কাছে আমার
এটাই আহ্বান থাকবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা স্মার্ট
বাংলাদেশ গড়ে তুলে জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি সেটা বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের
ভাবমূর্তি বিশ্ব দরবারে আরও উচ্চ আসনে নিয়ে যেয়ে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে
নিয়ে যাব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই
স্বাধীনতা ব্যর্থ হয় নাই,ব্যর্থ হবে না। আমরা ব্যর্থ হতে দেব না। আমাদের
বাংলাদেশ, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি এগিয়ে যাবে। আমি জানি অনেক সময় ধরে কষ্ট
করে আপনারা বসে আছেন। আপনাদের কথাও আমি শুনেছি। যদিও সবার কথা শুনতে
পারিনি। আগামীতে এবার যাদের শুনলাম তাদের শুনব না। আগামীতে আবার যখন সুযোগ
আসবে যারা বলতে পারেনি, সেখান থেকেই শুনব বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
পাশাপাশি স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের নিরাপদে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে
জনগণকে তাঁর শুভেচ্ছা পৌঁছে দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপি’র
অগ্নিসন্ত্রাস এবং উপাসনালয়ে আগুন দেওয়ার মত ঘটনার উল্লেখ করে
জনপ্রতিনিধিদের প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়গুলো ভালভাবে দেখার আহবান জানান এবং
বলেন, এই দেশ সকলে মিলে স্বাধীন করেছি। এই দেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ
এবং সেভাবেই এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি প্রবাসগামীরা তার সরকারের করে দেয়া
প্রবাসি কল্যাণ ব্যাংক প্রদত্ত সুবিধা নিয়ে যেন বিদেশে যেতে পারেন এবং
দালালের খপ্পড়ে পড়ে স্বর্বশান্ত না হন সেদিকেও লক্ষ্য রাখার আহবান জানান।
তিনি সরকারের প্রতিষ্ঠিত সারাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর চিকিৎসা
ব্যবস্থা সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখার জন্য জনপ্রতিনিধিদের আহবান জানিয়ে স্মরণ
করিয়ে দেন, বিএনপি জামাত জোট ২০০১ সালে সরকারে এসে এগুলো বন্ধ করে
দিয়েছিল। তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন, তাঁর সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার
প্রভ’ত উন্নয়ন করেছে আর আগামীবার ক্ষমতায় আসতে পারলে আর কোন গ্রামে কোন
রাস্তা যেগুলো কাঁচা রয়েছে আর কাঁচা থাকবে না।
প্রধানমন্ত্রী ডেঙ্গু
প্রতিরোধে সকলের সচেতনতার ওপরও গুরুত্বারোপ করে বলেন, এখন মশার উপদ্রব,
ডেঙ্গুর উপদ্রব। এই ক্ষেত্রে আমি মনে করি, সকলেরই কিছু করণীয় আছে। আপনারা
নিশ্চয়ই যার যার নিজের ঘর-বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখবেন এবং মশার হাত
থেকে বাঁচতে হলে মশারীর ব্যবস্থা করতে হবে। নিজেদের সচেতন হতে হবে, শুধু
মশা মেরেই শেষ করা যাবে না। নিজেদেরও সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য আমি
আন্তরিকভাবে আহ্বান জানাচ্ছি।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং এর প্রেক্ষপটে
সৃষ্ট বিশ্বমন্দার প্রসংগ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মানুষের
যাতে কোনো কষ্ট না হয় সেজন্য আমাদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু আছে। যার ৫১
লাখ জন উপকারভোগী। বর্গাচাষিদের আমরা কৃষি ঋণ দিচ্ছি বিনা জামানতে। বিনা
জামানতে বর্গাচাষিরা কখনো কৃষি ঋণ পেত না। মহাজনের কাছ থেকে উচ্চ সুদে আর
ঋণ নিতে হোত।
তিনি বলেন, এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। সব যায়গায়
ফসল ফলাবেন। তাতে আপনারাই লাভবান হবেন। নিজেরা ফসল ফলাবো, নিজেরা খাবো।
কারো কাছে হাত পাততে হবে না। আমি অনুরোধ করবো, আপনারা নিজেদের জমি চাষ
করেন, গাছ লাগান। এ সময় নিজস্ব সকল জমি চাষের আওতায় এনে ব্যক্তিগতভাবে তিনি
নিজেও লাভবান হয়েছেন বলেও জানান।
দেশে ১৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য
মজুদ রয়েছে বলে জানিয়ে বিদ্যুত ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহবান পুণর্ব্যক্ত
করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যে টাকা খরচ হয় বিদ্যুত উৎপাদনে তার অল্প
টাকা ধরা হয়, ভর্তুকি দেওয়া হয়। এখানে বড়লোকরাই সুবিধা ভোগ করে। সেই কারণে
তিনি সাধারণ মানুষের বিদ্যুত ব্যবহারে একটি সুরক্ষা দেওয়ার নির্দেশ
দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি, আমাদের সাধারণ মানুষ
যেভাবে ব্যবহার করে তাদের জন্য একটা সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। আর যারা
অতিরিক্ত বিদ্যুত ব্যবহার করে একটা লেভেলে উঠে গেলে তার দামও বাড়বে। সেই
ব্যাপারটা আমরা আস্তে আস্তে করে ফেলব। তাহলে যারা অল্প খরচ করে তাদের
সুরক্ষা দিতে পারব। যারা বেশি ব্যবহার করে তারা বেশি টাকা দেবে।
প্রধানমন্ত্রী
বলেন, ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছে খালেদা জিয়া। আজ কৃষকের ঘরে সার
পৌঁছে যায়। তাদের কৃষি উপকরণ কার্ড দিয়েছি। এটা দিয়ে কৃষি উপকরণ কিনতে
পারে। ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। এর মাধ্যমে ভর্তুকির টাকা
সরাসরি কৃষকের কাছে পৌঁছে যায়। তৃতীয় লিঙ্গ সহ সকল শ্রেনী পেশার মানুষকে
সামাজিক সুরক্ষাবলয়ের আওতায় আনা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী
বলেন, স্বাধীনতার সুফল বাংলাদেশের প্রতি ঘরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে
তার সরকার ইতোমধ্যে সর্বজনিন পেনশন স্কিম চালু করেছে। যেটা সরকারের
নির্বাচনী ওয়াদাও ছিল। জাতির জনক আদর্শ নিয়ে সংবিধানে বর্ণিত পন্থায় আমরা
এগিয়ে যাচ্ছি। ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, পৌর ও সিটি করপোরেশন আইন করে সরকার
স্থানীয় সরকারকে যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ দিয়ে একদম তৃণমুল পর্যন্ত যেন উন্নয়ন
হয় সেই ব্যবস্থা নিয়েছে।