
সাম্প্রতিক সময়ে ভূ-রাজনীতি এক
জটিল রূপ ধারণ করেছে। বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বৃহৎ শক্তিগুলো নানামুখী
প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে যাচ্ছে। পৃথিবী ক্রমেই স্নায়ুযুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
বড় শক্তিগুলো নিজেদের প্রভাব বাড়াতে চেষ্টা করছে।
পৃথিবীর নানা
প্রান্তে সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে চাইছে। এর ফলে ছোট ও উন্নয়নশীল দেশগুলো
ক্রমেই বেশি করে চাপের মুখে পড়ছে। এক পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে আরেক পক্ষ
ক্ষুব্ধ হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নিরাপদ ও বিকল্প শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের
পাশে থাকতে চায় ফ্রান্স।
বাংলাদেশে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ফরাসি
প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ গত রবিবার ঢাকায় পৌঁছান। সোমবার তিনি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। শেষ দিন আনুষ্ঠানিক
বক্তব্যে এই আগ্রহের কথা জানানো হয়। সফরকালে ঢাকা ও প্যারিসের মধ্যে
বাংলাদেশের নগর অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট বিষয়ে দুটি
চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
পাশাপাশি ফরাসি প্রেসিডেন্ট স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশের পাশে থাকার ও সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।
ফ্রান্স
বাংলাদেশের অত্যন্ত পরীক্ষিত ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন
সহযোগী। মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীকালে দেশ পুনর্গঠনে
ফ্রান্স নানাভাবে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছে। বলতে দ্বিধা নেই, দুই দেশের
মধ্যে শুধু অর্থনৈতিক নয়, দীর্ঘ সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ও সম্প্রীতির বন্ধনও
রয়েছে। এই দুটি দেশ নতুন করে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তাতে
আমাদের বিশ্বাস, উভয় দেশের সরকারের পাশাপাশি জনগণও আনন্দিত হবে।
দুই
নেতার বৈঠকের পর দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, শান্তি, সমৃদ্ধি ও জনগণের
জন্য অংশীদারিকে ‘কৌশলগত’ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করতে সম্মত
হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ। উভয়
দেশ যেকোনো দেশে অসাংবিধানিকভাবে সরকার পরিবর্তন এবং বেআইনি সামরিক
অভ্যুত্থানকে নিন্দনীয় মনে করে। দুই দেশ সংঘাত, সহিংসতা ও নৃশংস অপরাধের
কারণে বাস্তুচ্যুতদের জন্য জরুরি ও নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তার আহ্বান
জানায়। বৈঠক শেষে আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বলেন, ফ্রান্স
ও বাংলাদেশ-দুই দেশই নিজেদের স্বাধীনতার সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়
এবং বাইরের কোনো চাপকে সমর্থন করে না। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের
আগে তাঁর দপ্তর এলিসির এক ব্রিফিং নোটেও এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছিল, এই অঞ্চলের
অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা রাশিয়ার পক্ষে যাওয়ার প্রবল চাপে আছে। এ
ক্ষেত্রে তাদের জন্য নিরাপদ হতে পারে পশ্চিমা দেশ ফ্রান্স। আনুষ্ঠানিক
বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে দেড় দশক ধরে চলমান
সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা, উন্নয়ন ও সুশাসন ফ্রান্সের সঙ্গে
আমাদের নতুন সম্পর্কের মূলভিত্তি।’
বাংলাদেশ বিশ্বাস করে যে সবার সঙ্গে
বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়। একই সঙ্গে বাংলাদেশ কারো সঙ্গে
সামরিকভাবে জোটবদ্ধ হতেও আগ্রহী নয়। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বাংলাদেশ এই যে নীতি
অনুসরণ করে আসছে তাকেই গুরুত্ব দিতে হবে। সেই বিবেচনায় ফ্রান্স হতে পারে
বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু। আমরা চাই বাংলাদেশ-ফ্রান্স সম্পর্ক উত্তরোত্তর
আরো ঘনিষ্ঠ হোক।