লিমা
থেকে গতকাল খবর এসেছিল, তুকতাক মন্ত্রে নেইমারের ‘পা বেঁধে ফেলা’র সব
প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন পেরুর ওঝারা। ওয়ালতার আলারকোন নামে এক ওঝা বলে
রেখেছিলেন, ‘তন্ত্রের মাধ্যমে নেইমারের মনকে মেঘাচ্ছন্ন করাই আমাদের
উদ্দেশ্য, যাতে সে যা চায়, সেটা করতে না পারে। ওর লক্ষ্য হলো গোল করা।’
লিমার
ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ২০২৬ দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে
পেরু-ব্রাজিল ম্যাচটা দেখে থাকলে দেশটির ওঝাদের সফল বলার কারণটাও নিশ্চয়ই
জানেন! বাংলাদেশ সময় আজ সকাল ৮টায় শুরু হওয়া ম্যাচে নেইমার গোল করতে
পারেননি। শুধু নেইমার কেন, পেরুর ওঝারা সম্ভবত তুকতাক করে ব্রাজিল
আক্রমণভাগে সবার পা-ই অদৃশ্যভাবে বেঁধে ফেলেছিলেন। নইলে গোল করতে ব্রাজিলকে
৯০ মিনিট পর্যন্ত একজন অপেক্ষা করতে হবে কেন! আর সেই গোলটাও কেন একজন
ডিফেন্ডারের কাছ থেকে আসবে!
ব্রাজিল ডিফেন্ডার মারকিনিওস পেরুর ওঝাদের
‘তুকতাকে’র জাল কেটে বেরিয়ে এসেছিলেন বলে রক্ষা! ৯০ মিনিটে নেইমারের ইনসুইং
কর্নার থেকে মারকিনিওসের হেডে করা গোলে পেরুর বিপক্ষে ১-০ গোলে জিতেছে
ব্রাজিল। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এ নিয়ে টানা ৩৬ ম্যাচে অপরাজিত রইল ব্রাজিল।
তবে
পেরুর জালে আরও দুবার বল পাঠিয়েছিল ব্রাজিল। ২৯ মিনিটে ব্রুনো গিমারেজের
ক্রস থেকে হেডে গোল করেছিলেন ব্রাজিল স্ট্রাইকার রিচার্লিসন। কিন্তু
সেখানেও কি তুকতাক মন্ত্রের কোনো ভূমিকা ছিল? নইলে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট
রেফারি (ভিএআর) প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে গোলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কেন রায়
দেবে, রিচার্লিসন ইঞ্চিখানেক ব্যবধানে অফসাইড ছিলেন আর তাই গোলটি হয়নি। সে
যা হোক, ব্রাজিলের সমর্থকেরা চাইলে পেরুর ওঝাদের নিয়ে এমন ভাবতে পারেন।
তাতে অবশ্য হতাশাই বাড়বে। কারণ খেলায় প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি ব্রাজিল। যে
ব্রাজিলের বিপক্ষে এর আগে সর্বশেষ ৮ ম্যাচের ৭টিতেই হেরেছে পেরু, সে দলের
বিপক্ষে ৮৯ মিনিট পর্যন্ত জাল অক্ষত রাখাই তো বড় সাফল্য!
বলিভিয়ার জালে ৫
গোল দিয়ে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাই শুরু করেছে ব্রাজিল। আজ দ্বিতীয় ম্যাচে
পারফরম্যান্সের দিক থেকে তার ধারেকাছেও ছিল না ফার্নান্দো দিনিজের দল।
রিচার্লিসনকে সামনে রেখে পেছনে বাঁ পাশে রদ্রিগো, মাঝে নেইমার ও ডানে
রাফিনিয়াকে রেখে আক্রমণভাগ সাজিয়েছিলেন ব্রাজিল কোচ দিনিজ। কিন্তু এই
আক্রমণভাগ পেরুর রক্ষণ ভেঙে গোল আদায় করতে পারেনি। প্রথমার্ধে বল দখল ও
পাসিংয়ে এগিয়ে থেকেও পেরুর গোলমুখ খুলতে পারেননি নেইমার-রিচার্লিসনরা।
মাঝমাঠ থেকে দ্রুতলয়ের পাসে বল প্রতিপক্ষের বক্সে নিয়ে যাওয়ার সেই ধারাল
ফুটবলও দেখা যায়নি দিনিজের দলের খেলায়। বরং অফসাইডের জ্বালায় পুড়তে হয়েছে।
১৭ মিনিটে যেমন রাফিনিয়া ফিরতি বলে নেওয়া শটে পেরুর জালে বল পাঠালেও এ
যাত্রায়ও গোল হয়নি। কারণ আর কি, সেই অফসাইড-ই! প্রথমার্ধের শেষ দিকে (৪৪
মিনিট) পেরু গোলরক্ষক পেদ্রো গ্যালাসে নেইমারের জোরাল একটি শট রুখে দেন।
বিরতির
পর গোলের খোঁজে ৬৪ মিনিটে রিচার্লিসনকে তুলে গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে নামান
ব্রাজিল কোচ দিনিজ। তাতেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। রাফিনিয়া ৭২ মিনিটে ২০ গজ
দূর থেকে শট নিয়ে গোলের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু গ্যালাসে এ যাত্রায়ও হতাশ
করেন ব্রাজিলকে। বিরতির পর ম্যাচের ৮৩ মিনিট পর্যন্তও পেরুর বক্সের ভেতর
থেকে মাত্র একটি শট নিতে পেরেছে ব্রাজিল। ৪-৪-২ ফর্মেশনে পেরু কোচ হুয়ান
রেইমোসো ডিফেন্ডারদের দারুণভাবে ব্যবহার করেছেন। বক্সের সামনে থেকে পাসের
কলকাঠি নাড়তে পারেননি নেইমার।
দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইয়ে এ নিয়ে ২
ম্যাচই জিতে মোট ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠল ব্রাজিল। তাদের সমান ম্যাচে সমান
পয়েন্ট পেলেও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে দুইয়ে আর্জেন্টিনা। ২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট
পাওয়া কলম্বিয়া চিলির বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করেছে। ইকুয়েডরের কাছে ২–১ গোলে
হেরেছে উরুগুয়ে। ২ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে চারে উরুগুয়ে।