সারা দেশেই ডেঙ্গু ক্রমে ভয়াবহ
রূপ নিচ্ছে। গত শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ২১ জন রোগীর মৃত্যু
হয়েছে। এটি এ বছরে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এর ফলে এ বছর ডেঙ্গু
রোগে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬১৮ জনে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ক্রমাগত
বৃষ্টিপাতের কারণে সামনের দিনগুলোতে এডিস মশা বাড়বে এবং ডেঙ্গুর
প্রাদুর্ভাবও বেশি হবে। অন্যদিকে সারা দেশেই ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা
ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক ঘাটতি লক্ষ করা যাচ্ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে
দেখা যায়, কিশোরগঞ্জে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। জেলার মধ্যে
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই সবচেয়ে বেশি রোগী আসছে।
বর্তমানে
২৯ শয্যার ডেঙ্গু ওয়ার্ডে অর্ধশতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। রোগীদের
অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে না। প্যারাসিটামল ছাড়া আর কোনো
ওষুধও দেওয়া হচ্ছে না। পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করাতে হয় বাইরের বেসরকারি
ক্লিনিক থেকে অনেক বেশি দামে।
তাই স্যালাইন, ওষুধ, পথ্য, পরীক্ষা মিলিয়ে যে ব্যয় হচ্ছে দরিদ্র রোগীরা তা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।
ডেঙ্গু
চিকিৎসায় এমন অব্যবস্থাপনার চিত্র কমবেশি সারা দেশেই। গণমাধ্যমে এরই মধ্যে
এমন অনেক খবর প্রকাশিত হয়েছে। এসব খবরে বলা হয়, সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর
আলী মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল এবং সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যার বঙ্গমাতা
শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের কোনোটিতেই রোগীদের স্যালাইন
সরবরাহ করা হচ্ছে না। আরেক খবরে বলা হয়, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল
কলেজসহ বরিশালের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নেওয়া রোগীরা জানিয়েছে,
চিকিৎসায় একেকজনের খরচ হয়েছে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
সেখানেও
বাইরে থেকে ওষুধ ও স্যালাইন কেনার পাশাপাশি বিভিন্ন পরীক্ষাও করাতে হয়েছে।
অন্যদিকে সুযোগ বুঝে ফার্মেসিগুলো স্যালাইনের দাম কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
এমনকি ডেঙ্গু রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় ডাবের দামও অনেক বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রকাশিত
খবরে দেখা যায়, কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ ও
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন রোগী জানিয়েছেন, ১০ দিনে তাঁকে ১০ বার সিবিসি
(কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) পরীক্ষা করাতে হয়েছে বাইরে থেকে। হাসপাতালের
পরিচালকও জানান, হাসপাতালের সিবিসি মেশিনটি কয়েক দিন ধরে নষ্ট। দেশের
অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরাও জানান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা তাঁদের
বাইরে থেকেই করাতে হয়। কেন এমন হবে? অতীতে গণমাধ্যমে দেখেছি, বাইরের
ক্লিনিকগুলো তাদের ব্যবসা জমজমাট রাখতে সংশ্লিষ্টদের ঘুষ দিয়ে সরকারি
হাসপাতালের যন্ত্রপাতি অকেজো করে রাখে। তেমন কোনো ঘটনা আছে কি না তা
অনুসন্ধান করে দেখতে হবে।
আমরা চাই, রাজধানীসহ সারা দেশে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হোক।