
কুমিল্লা
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে ২১৯টি পদের মধ্যে ১৫৪টিই শূন্য।
বর্তমানে সরকারি ভাবে কর্মরত আছেন ৬৫ জন। ৩৫ জনকে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে
নিয়োগ দিয়েও দৈনন্দিন কার্যক্রম সারিয়ে নিতে বেগ পেতে হচ্ছে বোর্ড
কর্তৃপক্ষকে। বারবার মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করেও কোন ভাবেই নিয়োগ কার্যক্রম
শুরু করা যাচ্ছে বলে জানাচ্ছে বোর্ড । তিন ভাগের এক ভাগ জনবল দিয়ে ৬ জেলা
নিয়ে এই শিক্ষা বোর্ড পরিচালনা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত
কর্মকর্তাদের। এক এক জন অতিরিক্ত সর্বোচ্চ তিনটি দায়িত্বও পালন করতে
হচ্ছে।
জানা গেছে, কুমিল্লা বোর্ডে প্রথম শ্রেণির ২৪টি পদের মধ্যে ৫টি
শূন্য, দ্বিতীয় শ্রেণির ১৯টি পদের মধ্যে ৮টি, তৃতীয় শ্রেণির ১১৫টি পদের
১০২টি ও চতুর্থ শ্রেণির ৬১টি পদের মধ্যে ৩৯টি শূন্য। তৃতীয় ও চতুর্থ
শ্রেণির বেশির ভাগ পদ শূন্য থাকায় কাজে গতি কমে গেছে। এমনকি প্রথম ও
দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিন যাবত এক সাথে দুই তিনটি বিভাগের
কাজের দায়িত্ব একসাথে পালন করতে হচ্ছে।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪
সালের পর বোর্ডে কোনো নিয়োগ হয়নি। ২০১৯ সালের ২৩ মে বোর্ডের পক্ষ থেকে
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে নিয়োগযোগ্য বিভিন্ন শ্রেণির ৬৩টি শূন্য
পদে লোকবল নিয়োগের জন্য অনুমতি/ছাড়পত্র চাওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা
মন্ত্রণালয় ওই বছরের ২৬ নভেম্বর ৪৩টি পদে লোকবল নিয়োগের অনুমতি দেয়। এরপর
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ
থাকে। পরে চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. জামাল নাছের
বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৬৩টি শূন্য পদে নিয়োগের অনুমতিপত্র নরায়নের চিঠি দেন।
এতে তিনি উল্লেখ করেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে যথাসময়ে নিয়োগ প্রদান
করা সম্ভব হয়নি। ইতিমধ্যে নিয়োগসংক্রান্ত প্রাথমিক কার্যাবলি সম্পাদন করা
হয়েছে। এরপর বিষয়টি এগোয়নি।
কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর জামাল
নাছের বলেন, আমরা আশা করছি মন্ত্রনালয় আমাদেরকে খুব শীঘ্রই জনবল নিয়োগের
অনুমোদন ছাড়পত্র দিবেন। জনবল নিয়োগ দিতে যত ধরনের প্রক্রিয়া দরকার আমরা সবই
এগিয়ে রেখেছি। আমরা যে কাজ করি তাতে অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই, তাই সবাই
সর্বোচ্চ চাপ নিয়েই তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু এভাবে আর
কত দিন!
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা উপ-নিয়ন্ত্রক(মাধ্যমিক)
মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম জানান, মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখায় জনবল
প্রয়োজন অন্তত ১৫ জন। কিন্তু এখানে আছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, উপ-নিয়ন্ত্রকসহ
মাত্র তিনজন স্থায়ী জনবল। আমি নিজেও দুইটি শাখার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন
করছি। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি তো নেই বললেই চলে।
১৯৬২ সালে যখন
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয় তখন মাত্র ২৭টি কলেজ এবং ৫৩২টি
মাধ্যমিক স্কুলের দায়িত্ব পালন করে এই প্রতিষ্ঠানটি। আর বর্তমানে ৪২৬টি
কলেজ এবং ১৯৬৫টি মাধ্যমিক স্কুলের দায়িত্ব পালন করছে কুমিল্লা বোর্ড
কুমিল্লা
শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর জামাল নাছের জানান, ১৯৮৪ সালের পর
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে আর আনুষ্ঠানিক নিয়োগ হয় নি। এরপর থেকে জনবল কমতে
কমতে এখন ৬৮ জনে গিয়ে ঠেকেছে। কিছু কিছু কাজ আউট সোর্সিং করে করানো হচ্ছে।
কিন্তু গোপনীয়তা রক্ষার কারণে অনেক কাজ বাহিরের লোকজন দিয়ে করানো ঝুঁকি মনে
হওয়ায় সবাইকে সব কাজ দেয়াও যাচ্ছে না। কর্মকর্তা কর্মচারিরা চাপ নিয়েই সফল
ভাবে বোর্ডের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সংকট থাকলেও আমাদের গতি কমেনি। আমি
তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান প্রফেসর জামাল নাছের
বলেন, আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে পালন করছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা আমরা সুচারু ভাবে পালন
করছি। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা, তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রন এবং
পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বগুলো আমরা পালন করে থাকি। এছাড়া ম্যানেজিং কমিটি,
স্বীকৃতি, ভর্তি ও পরীক্ষা, পাঠদান ও প্রতিষ্ঠান স্থাপন সকল কাজ আমরাই
করি। আশা করছি আমাদের শূন্য পদগুলোতে শীঘ্রই পদায়ন হবে। সে ব্যাপারে
ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।
একসময় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড চট্টগ্রাম এবং
সিলেট বিভাগের সকল জেলার দায়িত্ব পালন করেছে। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বোর্ড
আলাদা হয় এবং আরো পরে সিলেট বোর্ডও স্বতন্ত্র দায়িত্ব পায়। দেশের অন্যতম
প্রাচীন এই শিক্ষা বোর্ডটি জনবল সংকটে ধুঁকতে থাকলে প্রভাব পড়বে এই অঞ্চলের
শিক্ষা ব্যবস্থায়।
