
৫৩
জাতীয়
অধ্যাপক কবীর চৌধুরী প্রায়শ সভা-সমিতিতে একটি কথা বলেন, “বাঙালি মুসলমান
সমাজের প্রায় হাজার বছরের ইতিহাসে দু’জন মাত্র প্রতিভাবান বাঙালি জন্মগ্রহণ
করেছেন একজন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, অপরজন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান। শওকত ওসমানের ঐ বক্তব্য বেশ কয়েক বছর আগে একটি সভায় প্রথম শুনে আমি
চমকে উঠেছিলাম, কারণ ঐ দু’টি মানুষের জীবন ও কর্মকাণ্ডের মধ্যেই শুধু মিল
বা সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায় না, সঙ্গে সঙ্গে একটা কথা স্পষ্ট হয়ে ওঠে
বিদ্রোহী কবি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর পূর্বসূরী আর বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিদ্রোহী কবির
যথার্থ উত্তরসূরী। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ অপরাহ্নে রমনা রেসকোর্স ময়দানের
জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ বক্তৃতা মঞ্চের সামনে খুব কাছাকাছি
থেকে শোনার ও ভাষণরত বঙ্গবন্ধুকে দেখার সুযোগ আমার হয়েছিল। সেদিন এবং তারপর
যতবার বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ শুনেছি বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে দেখেছি, ততবার
আকাশের দিকে বঙ্গবন্ধুর উন্নত শির ও তর্জনীসহ উত্থিত হাতটি আমাকে বারবার
বিদ্রোহী কবির বিখ্যাত কবিতার সেই চিরন্তন পঙক্তিগুলিকে স্মরণ করিয়ে
দিয়েছে, বল বীর চির উন্নত মম শির, শির নেহারি আমারি নত শির ঐ শিখর
হিমাদ্রির”। বিদ্রোহী কবির চির উন্নত শির-এর জীবন্ত চিত্রকল্প ৭ মার্চের
জনসভায় বঙ্গবন্ধুর উন্নত শর, উদ্যত হস্ত ও তর্জনী এবং বিদ্রোহীর জীবন্ত
প্রতিকল্প সেই সিংহ গর্জন ‘এবারের সংগ্রাম.....। ৭ মার্চ জনসভায় বঙ্গবন্ধু
নজরুলের কবিতার মহাবিদ্রোহীর প্রতিমূর্তি। বঙ্গবন্ধুর একাত্তরের সাতই মার্চ
অপরাহ্নের উন্নত শির ও বলিষ্ঠ জাগরণ আর কোনো বাঙালি নেতার মধ্যে আগে দেখা
গেছে কি? সেদিন বঙ্গবন্ধু নিজেকে বহুদূর ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন।
নজরুলের
কবিতা তার নির্যাতিত পূর্বপুরুষের গল্পকথা। ঔপনিবেশিক সম্পর্কের ভিতর তার
গল্পগুলো যুদ্ধের স্বরূপ, সাধারণ মানুষের শক্তি উন্মোচিত করেছে, এখান থেকে
একটা বিকল্প জাতির উত্থানের সম্ভাবনা তিনি ভেবেছেন। বিদ্যমান বাঙালি জাতি
ইংরেজি শিক্ষিত ও পাশ্চাত্য প্রভাবিত, বিদ্রোহ করতে ভুলে গেছে। বিপরীতে
তিনি কবিতা লিখেছেন ইতিহাসকে সঙ্গী করে, এই বিকল্প জাতি বিদ্রোহপ্রবণ,
বিকল্প অর্থ উদ্ভাবনে ক্ষমতাবহ। বিদ্রোহ থেকে প্রেমে, ধর্মজ সঙ্গীত থেকে
লোকজপালায় এই বিকল্প প্রবহমান। নজরুল এই বিকল্পের মধ্যে মগ্ন থেকেছেন,
বরাবর।
লোকজ বাঙালি বিদ্যমান শিক্ষিত বাঙালি থেকে ভিন্ন, তেমনি ইংরেজ
শাসক থেকে ভিন্ন। এই ভিন্নতা ইতিহাসের দিক থেকে, রাজনীতির দিক থেকে,
সংস্কৃতির দিক থেকে নির্মিত। এই নির্মিতির ধারণা থেকে তৈরি একটা নতুন
সাংস্কৃতিক রাজনীতি। এই রাজনীতি ভিন্নতা অবদমিত করে না, যেমন ভেবেছেন
ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালিরা; এই ভিন্নতা শাসকদের সঙ্গে এবং শিক্ষিত বাঙালিদের
সঙ্গে নিজেদের স্বাতন্ত্র তৈরি করে রাখে। এই স্বাতন্ত্র্য নজরুলের মধ্যে
দীপ্যমান। ভিন্নতার প্রয়োজন থেকেই অটোমাস ব্যক্তিদের উদ্ভব ঘটে, যাদের আছে
সমালোচনা মনস্কতা এবং সমাজের ক্ষেত্রে ইতিহাসের দিক থেকে ভূমিকা। অ-ইউরোপীয়
সংস্কৃতির ক্ষেত্রে, উপনিবেশের পরিসরে, নজরুল এই অটোমাস ভূমিকা পালন
করেছেন। সেজন্য সাহিত্য ক্ষেত্রে তাঁর সঙ্গে কারও মেলে না, তাঁর সাংস্কৃতিক
রাজনীতি অন্যদের চেয়ে স্বতন্ত্র। তার প্রস্তাবিত সাংস্কৃতিক স্বরূপ একই
সঙ্গে প্রয়োজন ও কল্পকথা, যেমন হিন্দু-মুসলিম যুদ্ধ : যে লাঠিতে আজ টুটে
গম্বুজ, পড়ে মন্দির চূড়া,/সেই লাঠি কালি প্রভাতে করিবে শত্রু-দুর্গ
গুড়া।/প্রভাতে হবে না ভায়ে-ভায়ে রণ, চিনিবে শত্রু, চিনিবে স্বজন।/করুক কলহ
জেগেছে তো তবু বিজয়-কেতন উড়া।/ল্যাজে তোর যদি লেগেছে আগুন, স্বর্ণলঙ্কা
পুড়া।
নজরুল সংস্কৃতি ও জাতি নিয়ে কাজ করেছেন এবং দেখেছেন দুইয়ের মধ্যে
অভ্যন্তরীণ বৈপরীত্য। তিনি দেখেছেন বিদ্রোহী আইডেনটিটি নির্মাণ করা সম্ভব,
কিন্তু এই আইডেনটিটি ঘিরে আছে সমাজের বদলে সাম্প্রদায়িকতা, শ্রেণীর বদলে
শিক্ষিত দ্রলোকদের আস্ফালন। তার ফলে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী
ঔপনিবেশিকতাবাদবিরোধী বিদ্রোহী সত্তা সাম্প্রদায়িকতার আবর্তে এবং
ভদ্রলোকদের আবর্তে ঘুরপাক খেতে থাকে। বিদ্রোহের রাজনৈতিক অবস্থান কেবল
প্রগতিশীল কিংবা প্রতিক্রিয়াশীল, কেবল বুর্জোয়া কিংবা রেডিক্যাল নয়, এই
অবস্থানটি ইতিহাসের অংশ, বৈপরীত্য দীর্ণ, সেজন্য নজরুল সমাজের মধ্যে
ভণ্ডামি, হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের মধ্যে শাণিত ছুরি লুকানো দেখতে পান,
ব্রিটিশ আইনকানুনের মধ্যে হিংস্র কদর্যতা দেখতে পান। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে
প্রতিরোধের ভাব, মুহূর্ত, অবস্থানকে তিনি বড়ো করে তোলেন। তাঁর এই
সমালোচনমনস্কতা বায়বীয় আদর্শবাদের বিপরীতে কঠিন বাস্তবতা, এই বাস্তবতা
তাঁকে তিক্ত করেছে তেমনি করেছে দূরসন্ধানী। এই সমালোচনমনস্কতা শিক্ষিত
ভদ্রলোক হিন্দু ও মুসলিম মধ্যশ্রেণী সহ্য করতে পারেনি। না-পারার দরুন তাঁর
সাহিত্যকর্মের নান্দনিকতা জ্বশ্রেণীর নান্দনিকতা থেকে সহস্র মাইল দূর।
উপনিবেশবিরোধী ডিসকোর্স থেকে এবং উপনিবেশবিরোধী লড়াই থেকে তিনি কলোনিয়াল
বিপ্লবের পোয়েটিক্স ও পলিটিক্স তৈরি করেছেন। এখানেই তাঁর নান্দনিকতার
ভিত্তি ও তাঁর সঙ্গে সমসাময়িক অন্যদের তফাৎ। তাঁর সাহিত্যকর্ম থেকে নজরুলের
যে-ইমেজ উদ্ভাসিত, সেখানে তিনি এক ট্র্যাজিক ফিগার। তিনি হয়ে ওঠেন
বিপ্লবহীন বিপ্লবের কবি। তাঁর কবিতায় উচ্চকিত অন্যায়ের বিরুদ্ধে পবিত্র
ক্রোধ। এভাবে তাঁর কবিতা হয়ে ওঠে কলোনিয়ালিজমের ওপর পলিটিক্যাল ও এথিক্যাল
এক টেস্টামেন্ট। নির্যাতন নামক এক ভুবনের বাসিন্দা, বঞ্চনা নামক এক
ধরিত্রীর মানুষজন, অপমানিত হতে হতে লাঞ্ছিত হতে হতে জাতীয় চেতনায় পৌঁছে
গিয়ে দেখে সেখানে জাতীয় চেতনার বদলে সাম্প্রদায়িক চেতনা প্রবল, জাতীয়
ঐক্যের বদলে সাম্প্রদায়িক ধর্মজ ঐক্য প্রবল, উপনিবেশবাদ বিরোধিতার বদলে
পশ্চিমের প্রতি ভক্তি প্রবল। নজরুলের কবিতা এই বৈপরীত্যের সূত্রটাকে আঘাত
করেছে থেকে থেকে। নজরুল রাজনৈতিক নির্যাতনের সমান্তরালে সাংস্কৃতিক
নির্যাতনকে তুলে ধরেছেন এবং ভেবেছেন জাতীয় মুক্তি সংস্কৃতির একটি প্রয়োজনীয়
কাজ।
নজরুল দু’টি সংস্কৃতির মধ্যে কাজ করেছেন। নজরুল হিন্দু সমাজ
উৎসারিত সংস্কৃতি এবং মুসলিম সমাজ উৎসারিত সংস্কৃতির মধ্যে কাজ করে
পৌছেছেন। মানবিকতাবাদে এবং উন্মোচিত করেছেন মানবিকতাবাদের সমস্যাগুলো।
কলোনির বাংলায় মানবিকতাবাদের অভিজ্ঞতা ধরা দিয়েছে বৈদেশী হেজিমনি হিসাবে।
ব্রিটিশরা আমাদের ইতিহাস ছেড়ে দিতে বলেছে এবং যুক্ত হতে বলেছে তাদের
ইতিহাসে কিংবা ইউরোপীয় আধুনিকতায়। জাতীয় মুক্তির অন্য অর্থ হচ্ছে আমাদের
নিজেদের ইতিহাসে ফিরে আসার ইচ্ছাশক্তি। নজরুল এক্ষেত্রেই কাজ করেছেন,
প্রথার বিরুদ্ধে যেতে বলেছেন, পুরনো ঐতিহ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবার সাহসের
কথা বলেছেন এবং ভবিষ্যৎ উদ্ভাবনের সাহসের কথা ভেবেছেন। সাহস না হলে প্রকৃত
ইতিহাসে প্রবেশ করা যায় না। নজরুলের এই প্রজেক্টটি রাজনৈতিক, মতাদর্শিক,
নান্দনিক। তাঁর সাংস্কৃতিক রাজনীতির এই প্রক্রিয়া বাংলা কবিতাকে ঘিরে
ধরেছে। ফণি-মনসা ও সন্ধ্যা বই দুটির এই কাব্য পাঠ বৈধ বলে মনে হয়।
১৯৭১
সালের ৭ মার্চ অপরাহ্নে রমনার মাঠে লক্ষ লক্ষ বাঙালি একটি মানুষের মধ্যে
তাদের হাজার বছরের সংগ্রামী ঐতিহ্যের প্রতিফলনে তা উপলব্ধি করতে পেরেছিল।
তারা বিষ্ময়ের সঙ্গে তাদের চোখের সামনে কীভাবে একটি সাধারণ মানুষ অসাধারণ
হয়ে উঠছিলেন তা প্রত্যক্ষ করেছিল। ৭ মার্চের জনসভায় উপস্থিত
আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা ভাষণ দানরত বঙ্গবন্ধুকে আবেগে অভিব্যক্তিতে মাত্র ২০
মিনিটের মধ্যে অতিমানুষে পরিণত হওয়ার অভাবনীয় ঘটনা অবলোকন করে নিজেরাও অতি
মানবে পরিণত হয়েছিল।
১৯২৯ সালে বাঙালি জাতির দেওয়া জাতীয় সংবর্ধনার
উত্তরে নজরুল বলেছিলেন, ‘বিংশ শতাব্দীর অসম্ভবের সম্ভাবনার যুগে আমি
জন্মগ্রহণ করেছি। এরই অভিযান সেনাদলের তুর্যবাদকের একজন আমি- এই হোক আমার
সবচেয়ে বড় পরিচয়। আমি জানি, এই পথ-যাত্রার পাকে পাকে বাঁকে বাঁকে কুটিল ফণা
ভুজঙ্গ, প্রখর-দর্শন শার্দুল পশুরাজের ভ্রুকুটি! এবং তাদের নখর-দংশনের মত
আজো আমার অঙ্গে অঙ্গে। তবু ওই আমার পথ, ওই আমার গতি, এই আমার ধ্রুব। আমি
শুধু সুন্দরের হাতে বীণা পেয়ে পদ্মফুলই দেখিনি, তাঁর চোখে জলভরা জলও
দেখেছি। শ্মশানের পথে, গোরস্থানের পথে তাঁকে ক্ষুধা-দীন মূর্তিতে, ব্যথিত
পায়ে চলে যেতে দেখেছি। যুদ্ধভূমিতে তাকে দেখেছি, কারাগারের অন্ধকূপে তাঁকে
দেখেছি, ফাঁসির মঞ্চে তাঁকে দেখেছি।” বিংশ শতাব্দীর অসম্ভবের সম্ভাবনার
যুগে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের অভিযান সেনাদলের তূর্যবাদকরূপে বাঙালি
পেয়েছিল নজরুল আর বঙ্গবন্ধুকে। বিদ্রোহী কবির ঐ ভাষণের সঙ্গে তুলনীয়
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, “আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে
হাজির হয়েছি। আপনারা সকলে জানেন এবং বোঝেন, আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা
করেছি কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ ... আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ
বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়...। কিন্তু বাংলার
মানুষ অধিকার চায়, কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলছি, বাংলার ইতিহাস করুণ...
ইতিহাস, বাংলার মানুষের রক্তের ইতিহাস মুমূর্ষ মানুষের করুণ আর্তনাদ-এদেশের
করুণ ইতিহাস এদেশের মানুষের রক্তে রঞ্জিত করার ইতিহাস।...” নজরুল জাতীয়
সংবর্ধনার উত্তরে কবি তার ভাষায় যা বলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু নির্জলা গদ্যে কি
একই কথা বলেননি?
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না।
দেশের অধিকার চাই।... এরপর যদি একটা গুলি চলে, এরপর যদি আমার লোককে হত্যা
করা হয় তোমাদের কাছে আমাদের অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল।
তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে
রাস্তাঘাট যা কিছু আছে সবকিছু আমি হুকুম যদি দেবার নাও পারি তোমরা বন্ধ করে
দেবে...।” বস্তুত বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই বাঙালি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে
ঝাপিয়ে পড়েছিল এবং বিজয়কে ছিনিয়ে এনেছিল। বিদ্রোহী কবি ‘বিদ্রোহী’ কবিতার
উপসংহারে লিখেছিলেন।
মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত,
আমি সেই দিন হব শান্ত।
‘বিদ্রোহী’
কবিতার ঐ স্তবকটি তুলনীয় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের উপসংহারের
সঙ্গে, কিন্তু আর তোমরা গুলি করার চেষ্টা করো না। সাতকোটি মানুষকে দাবায়ে
রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে
না।... আপনাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকুন। রক্ত যখন দিয়েছি,
রক্ত আরো দেবো, এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাআল্লাহ। এবারের
সংগ্রাম আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয়
বাংলা। কবির স্বপ্ন, কবিতা কীভাবে একটি জাতির জীবনের সত্য হয়ে ওঠে নজরুলের
‘বিদ্রোহী; কবিতা আর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ’ তার উদাহরণ। বস্তুত
বিদ্রোহী কবির ‘বিদ্রোহী কবিতায় চিত্রকল্প ৭ মার্চ অপরাহ্নে রমনা জনসমুদ্রে
মহাবিদ্রোহী রণক্লান্ত বঙ্গবন্ধুর মধ্যদিয়ে মূর্ত ও জীবন্ত হয়ে উঠেছিল।
কাজী
নজরুল বাঙালি জাতির সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলমান সম্প্রদায়ের মনের শিকল
গড়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালির হাজার বছরের হাতের শিকল ছিড়েছেন। জাতীয়
অধ্যাপক কবীর চৌধুরী যথার্থই বলেন, “বাঙালি মুসলমান সমাজ হাজার বছরের
ইতিহাসে দু’জন শ্রেষ্ঠ বাঙালি সৃষ্টি করতে পেরেছে- কাজী নজরুল ইসলাম ও
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।”
চলবে...