শক্তি বা এনার্জি মানবজাতির অগ্রযাত্রা এবং সমৃদ্ধির চাবিকাঠি। প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির সাথে সমান তালে পৃথিবীব্যাপী এনার্জির ব্যবহারও বেড়ে চলেছে। মানব সভ্যতার বর্তমান উন্নয়ন ধারা টেকসই এবং অব্যাহত রাখার স্বার্থে প্রচুর পরিমানে এনার্জি খরচ প্রত্যাশিত। ২০২২ সাল নাগাদ পৃথিবীব্যাপী এনার্জির গড় ব্যবহার ২১ টেরাওয়াট (21TW) এবং এই এনার্জির ৭৪% ভাগ জীবাশ্ম জ¦ালানী থেকে প্রাপ্ত। এনার্জির চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও পৃথিবীর অনুন্নত এলাকার ক্রম উন্নয়নের সাথে সাথে এর ব্যবহার (ঈড়হংঁসঢ়ঃরড়হ) ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধারনা করা হচ্ছে ২০৩০ সাল নাগাদ পৃথিবীর এনার্জি খরচের পরিমান হবে ৩০ টেরাওয়াট (৩০ঞড)। বড় প্রশ্ন হচ্ছে এই বিশাল এনার্জির উৎস কি হবে? অধিক পরিমানে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার এবং পরমানু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন -এর গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হতে পারে। কিন্তু পৃথিবীব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানীর মজুদ সীমিত এবং এর মুল্য প্রতিনিয়ত বর্ধনশীল। অত্যধিক জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহার গ্রীণ-হাউজ গ্যাস, বৈশি^ক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য দ্বায়ী। পরমানু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় বর্জ্যরে নিরাপদ ব্যবস্থাপনা কিছু অমিমাংসিত প্রশ্ন এবং সমস্যা সৃষ্টি করবে।
জীবাশ্ম জ্বালানী পরিবেশ দূষণ করে এবং সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, এসিড বৃষ্টি ও স্মগ (Smog) এর জন্যদায়ী। আমাদের বর্তমান জীবনযাত্রার কারনে বায়ুমন্ডলে প্রতিদিন ১১০ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাইঅক্সাইড (ঈঙ২) নিঃসরণ হয়। বিপুল পরিমান ঈঙ২ নিঃসরণ বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রাথমিক এবং প্রধান কারন। এনার্জির ক্রমবর্ধমান চাহিদা জীববৈচিত্র এবং পরিবেশ সচেতনতার উপর প্রতিনিয়ত প্রভাব বিস্তার করে, যা সময়ের বড়ো সমস্যা। তেলের বিষয়ে অমিমাংসিত সমস্যা- এটি নবায়নযোগ্য নয়। এটির সরবরাহ একটি একক জীবনের সল্প সময়ে শেষ হয়ে যেতে পারে, অথচ তৈরী হতে হাজার বছর লেগে যায়। ১০ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে তেলের মজুদ নিঃশেষ হবার নানান হিসাবের ভবির্ষৎ বাণী পৃথিবীব্যাপী প্রচলিত। তেল যে গতিতে উৎপন্ন হয়, তার হাজারগুন বেশি গতিতে ব্যয়িত হয় এবং ইহা অবশ্যই স্বীকার্য যে এটির নিঃশেষ হওয়াটা অনির্বায্য। তেলের অসম মজুদের কারনে পৃথিবীব্যাপী রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক টানাপোড়ন বিদ্যমান, মজুদ কমে আসার সাথে সাথে সেটি আরো বৃদ্ধি পাবে। জ¦ীবাশ্ম জ¦ালানীর কারণে পরিবেশে যে ধ্বংস বয়ে আনে সেটির সঠিক পরিমান নির্নয় করা কঠিন। পরিবেশের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব স্থায়ী এবং এই কারণেই বিকল্প জ¦ালানীর উৎসের সন্ধান অপরিহার্য্য। জ্্্্্¦ীবাশ্ম জ¦ালানীর ব্যবহার কমানোর জন্য এটিকে বিকল্প উৎস দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে হবে। স্বচ্ছ এবং নবায়নযোগ্য জ¦ালানীর উৎস এই সংকটের নিরাপদ এবং একমাত্র বিকল্প হতে পারে।
পারমানবিক শক্তির বাহিরে হাইড্রো, বাইয়োমাস, বায়ু, জিওথার্মাল এবং সোলার পাওয়ারের সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এই সকল উৎসের কার্যকর সরবরাহ সীমিত। এই মুহূর্তে পৃথিবীতে সম্ভাব্য প্রায় সকল হাইড্রো-ইলেকট্রিক শক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। যদিও ত্বাত্তিক ভাবে অনেক বাইয়োমাস উৎপাদনের কথা বলা হয়, কিন্তু এই জাতীয় ফসলাদির পরিমান পৃথীবির ৩১% ভূমি দখলে রাখবে-যা এক কথায় অসম্ভব। বায়ু শক্তি অনিয়মিত এবং অপেক্ষাকৃত দুর্লভ, বাস্তবে যার পরিমান পৃথিবীব্যাপী মাত্র ২ টেরা ওয়াট (২ঞড) এর বেশী নয়। জিওথার্মাল (এবড়ঃযবৎসধষ) শক্তির সম্ভাবনা এখনো অনেক কম, এটির জন্য কার্যকর এবং উন্নত কোন খনন প্রযুক্তি এখনো আবিস্কৃত হয়নি। অন্যদিকে সূর্য থেকে প্রতিনিয়ত প্রচুর পরিমানে ফোটন (চযড়ঃড়হ) পৃথিবীতে বর্ষিত হচ্ছে। ফোটন শক্তির সম্ভাবনাময় বিকল্প উৎস, যা সংগ্রহ করা অবশ্য বাঞ্চনীয়। সোলার এনার্জি বা সৌরশক্তি তার বিশাল প্রাপ্যতার কারনে প্রচুর গুরুত্ব পাচ্ছে। উল্লেখযোগ্য হারে প্রচলিত জীবাশ্ম জ¦ালানী ব্যবহার হ্রাস করার জন্য এর গুরুত্ব দিন দিন বেড়ে চলেছে। পৃথিবীর উপরিভাগে সূর্যরশ্মির ক্ষমতা প্রায় ১২৫০০০ টেরাওয়াট (১২৫০০০ঞড) যা পৃথিবীর বর্তমান এনার্জি চাহিদার ১০ হাজার গুন বেশি। সূর্য দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের কাছে শক্তির সহজলভ্য বিকল্প উৎস; সূর্যই পারে আগামির পৃথিবীতে মানুষের জীবনযাত্রাকে আরো সহজ করে দিতে।
সূর্যের শক্তিকে ব্যবহারের সহজ উপায় হচ্ছে এটিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রুপান্তর করা। সোলার সেল ফটোভল্টিক (চঠ) প্রক্রিয়ায় এটি সম্পাদন করে। সূর্য থেকে সরাসরি শক্তি সঞ্চয় করার কারনে সোলার চঠ প্রযুক্তি পৃথিবীর এনার্জি চাহিদা মিটানোর সম্ভাবনাময় বিকল্প উৎস হতে পারে। মানব সভ্যতার সমস্ত এনার্জি চাহিদা পূরণের জন্য সৌরশক্তির অতিসামান্য অংশ সংগ্রহ করতে পারলেই যথেষ্ট। সৌরশক্তির প্রাপ্যতা স্থান এবং আবাওয়ার উপর নির্ভর করলেও এটি পৃথিবীর সর্বত্র ব্যবহার করা যায়। সোলার সেল সূর্যালোক থেকে বিদ্যুৎ শক্তি উপন্ন করে, যা পৃথিবীর সবখানে বিনামূল্যে পাওয়া যায়। সোলার (চঠ) সেল শব্দহীন, দূষণমুক্ত এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যতিত ২৫-৩০ বছর অবিরাম ব্যবহার করা যায়। প্রারম্ভিক ক্রয় ও স্থাপন খরচ এটির প্রধান সীমাবদ্ধতা।
বানিজ্যিক পণ্য হিসাবে সোলার সেল মডিউল আকারে সাধারণত ২০ বছর বা তার বেশি সময়ের নিরাপত্তাসহ তৈরী হয়। অন্যান্য নবায়নযোগ্য জ¦ালানী যেমন বায়ু, হাইড্রো এর তুলনায় নষ্ট হবার সম্ভাবনা কম, শব্দহীন, সহজলভ্য এবং কম খরচে দীর্ঘদিন উৎপাদনের উচ্চ সম্ভাবনা বিদ্যমান। ফটোভোল্টিক পদ্ধতি সরাসরি রুপান্তর যন্ত্র সোলার সেল, যেটি বিকিরিণকৃত সৌরশক্তি ফোটনকে (চযড়ঃড়হ) কোন ঘুর্নায়মান অংশ ছাড়া স্বচ্ছ এবং নবায়নযোগ্য প্রক্রিয়ায় একমূখী বিদ্যুৎ প্রবাহে (উঈ) রুপান্তর করে। চঠ সেল বা সোলার সেল ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ও কম্পিউটারে ব্যবহৃত ছিপসের মতো আধাপরিবাহী (ঝৎসরপড়হফঁপড়ৎ) বস্তু দ্বারা তৈরী করা হয়। ফটোভোল্টিক বস্তুর বৈচিত্র, বিভিন্ন কার্যকর বৈশিষ্ট এবং কম খরচে বহুমুখী উদ্ভাবনী প্রযুক্তি এই রুপান্ত প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব বিস্তার করে।
বিগত ১০ বিলিয়ন বছর ধরে সূর্য শক্তির একটি বিরাট উৎস এবং সূর্যের জীবনকাল স্থীর। সূর্য থেকে নির্গত শক্তির প্রধান উৎস পারমানবিক বিক্রিয়া (আমাদের থেকে ১.৫ মিলিয়ন কিমি এবং ৮মিনিট দুরে)। পৃথিবী পৃষ্ঠে আঘাত করা এই শক্তি (১২৫০০০ঞড) ২০৫০ সাল নাগার পৃথিবীর অভিক্ষিত এনার্জি চাহিদার (৩৫ঞড) হাজার গুন বেশী। অধিকন্ত এটি নবায়ন যোগ্য এবং অদূষণীয়। সূর্য বিরামহীন ভাবে এনার্জি উৎপাদন করে যাচ্ছে এবং উল্লেখযোগ্য পরিমান সোলার বিকিরণ পৃথিবীপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ে। যদি এই বিকিরণের অতিসামান্য অংশ (০.০০০১%) বিদ্যুৎ শক্তিতে রুপান্ত করা যায় তবে ইহা পৃথিবীর মোট বিদ্যুৎ চাহিদার জন্য যথেষ্ট। অন্য কথায় যদি এই বিকিরণকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রুপান্ত করা যায়, তবে ভুপৃষ্ঠে সূর্যের এক ঘন্টার বিকিরণ পৃথিবীর এক বছরের এনার্জি চাহিদার জন্য যথেষ্ট।
একটি সৌর কোষের সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ঢ়-হ জাংশন এবং এর কার্যকারিতা ফটোভোল্টিক প্রভাবের সাথে জড়িত। যেহেতু জীবাশ্ম জ্বালানীর মজুদ হ্রাস পাচ্ছে, সেহেতু চঠ কোষগুলি শক্তির একটি সাশ্রয়ী উৎসে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত তাদের খরচ বৃদ্ধি পাবে। চঠ কোষ, সাধারণত সৌর কোষ হিসাবে পরিচিত, অর্ধপরিবাহী পদার্থ দিয়ে তৈরী ডিভাইস, যা সূর্যের আলোকে সরাসরি বিদ্যুতে রূপান্তর করে। সৌর কোষগুলি প্রথমে মহাকাশযান এবং স্যাটেলাইটে বিশেষায়িত ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল; কিন্তু এখন সেগুলি কব্জি ঘড়ি থেকে কেন্দ্রীয় পাওয়ার স্টেশন পর্যন্ত প্রতিদিন ব্যবহৃত ডিভাইসগুলিতে পাওয়া যায়। আলোক শক্তিকে দরকারী বিদ্যুতে রূপান্তর করার ধারণাটি ১৯ শতকের প্রথম দিকে শুরু হয়েছিল যখন সৌর কোষ উদ্ভাবিত হয়েছিল এবং আধুনিক সৌর কোষের যুগ শুরু হয়েছিল ১৯৫৪ সালে বেল ল্যাবগুলিতে যেখানে প্রথম ৬%-দক্ষ সিলিকন সোলার সেল তৈরি হয়েছিল চ্যাপিন (ঈযধঢ়রহ) ইত্যাদি দ্বারা। চঠ কোষগুলির বিকাশের প্রাথমিক প্রচেষ্টাগুলি মহাকাশ উপযোজনের দিকে পরিচালিত হয়েছিল এবং চঠ কোষগুলি এখনও মহাকাশে শক্তির প্রধান উৎস। চঠ ব্যবহার ১৯৭০ থেকে স্থলজ স্থাপনাগুলিতে প্রসারিত হয়েছিল এবং এটি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই বৃদ্ধি সৌর কোষের অনেক সুবিধার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়, প্রথমটি হল পরিবেশের উপর এর কম প্রভাব। আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হল পৃথিবীপৃষ্ঠে সৌর শক্তির কমবেশি সমান বন্টন এটিকে যে কোন জায়গায় সবার কাছে গ্রহনযোগ্য করে তোলে। সোলার মডিউলগুলির বহনযোগ্যতা বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জন্য বাণিজ্যিকভাবে আকর্ষণীয় করে তোলে।
বিশ্বে বৈদ্যুতিক গ্রিডের সাথে সংযুক্ত নয় এমন গ্রামের সংখ্যা আনুমানিক দুই মিলিয়ন। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ এই সকল গ্রামে বাস করে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, সাধারণতঃ যাদের চাহিদা শহর অঞ্চলের তুলনায় অনেক কম তাদের জন্য বানিজ্যিক ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ সম্প্রসারন করা বিদ্যুৎ বিপননকারী কোম্পানী সমুহের জন্য অলাভজনক এবং অনাকর্ষনীয়। এই সকল অঞ্চলের কৃষি, শিক্ষা, আবাসিক, বানিজ্যিক ইত্যাদি কাজে বিদ্যুতের মুল চাহিদা পুরন করে সাধারণত জীবাশ্ম জ¦ালানী চালিত ক্ষুদ্র জেনারেটর এবং রিচার্জেবল ব্যাটারী, যা প্রায়ই অনির্ভরযোগ্য এবং ব্যয়বহুল। বিদ্যুতের অভাব এই সকল অঞ্চলের উন্নয়ন এবং জীবনযাত্রার উপর কি প্রভাব ফেলে, তা সহজে অনুমেয়। এই সকল প্রত্যন্ত অঞ্চলে সোলার বিদ্যুৎ স্থাপন পরিবেশগত এবং বানিজ্যিকভাবে গ্রহনযোগ্য সমাধান হতে পারে। যদিও প্রচলিত জ¦ালানীর উৎসের তুলনায় সোলার চঠ ব্যবহারে সুস্পষ্ট সুবিধা বিদ্যমান, তথাপি এটির বিস্তৃত ব্যবহারে বাধা আছে। বড় বাধাটি হচ্ছে সোলার সেল এবং মডিউলের উচ্চ উৎপাদন খরচ। মুল্য কমানো এবং ব্যবহার বিস্তৃত করার জন্য উৎপাদন ব্যয় কমানোর পদক্ষেপ নিতে হবে যেমন; ব্যবহৃত কাঁচামালের পরিমান, প্রক্রিয়া করণ ব্যয় এবং এগুলোর উৎপাদনে শক্তির ব্যবহার হ্রাস করে।
সোলার সেলের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এটিকে ভোল্টেজ এবং কারেন্ট এর চাহিদা মোতাবেক মডিউল বা পিভি প্যানেল গঠনের জন্য প্রতিটি পৃথক সেলকে পরস্পরের সাথে সিরিজ বা প্যারালালে সংযুক্ত করা হয়। সোলার সেল পরিবেশ বান্ধব এবং দীর্ঘ অর্থনৈতিক সুবিধাসহ শক্তির একটি উৎকৃষ্ট উৎস। এর বৈজ্ঞানিক এবং কারিগরী ত্রুটি সমুহ মোকাবেলা করে শক্তিশালী করার জন্য বিশ^বিদ্যালয়, গবেষকদল, নেতৃত্বদানকারী সোলার শিল্পসমুহ মুল দ্বায়িত্ব পালন করছে। এই মুহুর্তে প্রধান বাধা হচ্ছে মুল্য হ্রাস করা। একটি সোলার সেলের একটি আদর্শ দিনের সর্বোচ্চ শক্তির রুপান্তরকে পিক ওয়াট (ডঢ়) বলে। এক পিকওয়াট তৈরীতে মোট খরচকে চঠ মেট্রিক বা প্যারামিটার বলে ($/ডঢ়)। দুই প্রক্রিয়ায় উৎপাদন খরচ কমানো যায়- প্রথমত সেল তৈরীর খরচ ($/স২) হ্রাস এবং দ্বিতীয়ত দক্ষতা (ডঢ়/স২) বৃদ্ধির মাধ্যমে। সল্প কাঁচা মাল, কম সময়ে সংযোজন, কম ইনপুট এনার্জি এবং সাশ্রয়ী প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদন ব্যয় কমানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যেতে পারে। রুপান্তর-দক্ষতা বৃিদ্ধর মাধ্যমেও সেলের আউটপুট বৃদ্ধি করা যায়।
সোলার পিভি বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদন প্রচলিত বিদ্যুতের বিকল্প শক্তি হিসাবে গ্রহনযোগ্যতা পাচ্ছে। প্রত্যাশা করা হয় অদুর ভবির্ষ্যতে পাতলা-পর্দা প্রযুক্তির (ঞযরহ-ভরষস ঞবপযহড়ষড়মু) মাধ্যমে পিভি উৎপাদন বর্তমান বানিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের তুলনায় অনেক কম হবে। বর্তমানে প্রতি ইউনিট পিভি’র ০.২৫ ডলার উৎপাদন ব্যয় প্রচলিত বানিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের প্রায় দ্বিগুন। শুধুমাত্র সিলিকন (ঝর) দ্বারা সোলার প্যানেল তৈরী করা এই উচ্চমাত্রার উৎপাদন ব্যয়ের প্রধান কারন। অদ্যাবধি সিলিকন সমৃদ্ধ সোলার পিভি বানিজ্যিকভাবে সোলার সেল নির্মাণে প্রভাব বিস্তার করে আসছে। যেহেতু দীর্ঘ সময় কম খরচে ঞযরহ-ভরষস ঞবপযহড়ষড়মু নির্দ্দিষ্ট উৎপাদনের জন্য বেশি সাশ্রয়ী, সেহেতু ঞযরহ-ভরষস প্রযুক্তিতে রুপান্তর অপরিহার্য্য। ঞযরহ-ভরষস পিভি সেল দ্রুত জনপ্রিয় ও প্রসারিত হচ্ছে; কিন্ত এখনো অনেক পিভি সেল অস্বচ্চ সিলিকন দ্বারা তৈরী হচ্ছে। অদুর ভবির্ষ্যতে ঞযরহ-ভরষস সোলার প্রযুক্তি সোলারের মূল্য এবং ব্যবহৃত মালামালের পরিমান হ্রাসে ব্যপক পরিবর্তন আনবে। কেডমিয়াম টেলুরাইড (ঈফঞব), কপার ইনডিয়াম সেলেডিন (ঈওঝ), কপার গিলিয়াম ডাইসেলেডিন(ঈওএং) এর থিন পলিক্রিস্টাল সোলার সেল বর্তমান সিলিকন সমৃদ্ধ সোলার সেলের তুলনায় কম মূল্যে উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে। মূল্য সাশ্রয়ী দ্বিতীয় প্রজন্মের এই সোলার সেলকে ঞযরহ-ভরষস প্রযুক্তি বলে; যেমন-গিলিয়াম আর্সেনিড (এধঅং), ঈফঞব, ঈফতহঞব, ঈওঝ, ঈওএং, ঈতঞঝ এবং নিরাকার সিলিকন (ধ-ঝর) ইত্যাদি।
ফটোভোল্ট প্রভাবযুক্ত সোলার সেল নির্মানের জন্য বহু উপকরন আছে; কিন্তু উপকারী সোলার সেলকে বহুমাত্রিক প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম হতে হবে। প্রথম-উচ্চ রুপান্তর-দক্ষতা। দ্বিতীয়-উপকরন সমুহ সাশ্রয়ী, সহজ লভ্য এবং অবিষাক্ত। তৃতীয়ত- তৈরীর পদ্ধতি কম মূল্যে দ্রুত, সহজ এবং পরিবেশ বান্ধব হতে হবে। চতুর্থত- কার্যকারিতা ২০ বছরের অধিক সময় ধরে স্থির এবং টেকসই হতে হবে। বর্তমানে পিভি সেলের প্রধান লক্ষ্য গবেষনা ও উন্নয়নের মাধ্যমে কম খরচে উচ্চ রুপান্তর ক্ষমতা, দীর্ঘ এবং স্থির জীবনকাল সহ বানিজ্যিকভাবে টেকসই সেল উৎপাদন করা। সূর্য থেকে সর্বত্র সকলের জন্য স্বচ্ছ এবং সাশ্রয়ী এনার্জি পাবার মানবজাতির স্বপ্ন পূরনে উদীয়মান পিভি সেলই হতে পারে একমাত্র শক্তিশালী কৌশল।
লেখক: উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অবঃ), বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
সহ-সভাপতি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, আইডিইবি ।