তখন
ম্যাচের শেষ মুহূর্ত। বাংলাদেশও জয়ের কাছাকাছি। কিন্তু জোফরা আর্চারের ১৪৮
কিলোমিটার গতির বলটি আফিফের স্টাম্প ভেঙে দিতে আকস্মিকভাবে মোড় ঘুরে যায়
ম্যাচের। বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে তখন পরাজয়ের শঙ্ক উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছে। তবে
সেই শঙ্কা মুহূর্তেই উড়িয়ে দিয়েছেন পেসার তাসকিন আহমেদ। পরের ওভারে ক্রিস
জর্ডানের পর পর দুই বলে কভার দিয়ে দারুণ বাউন্ডারি মেরে জয়ের আনন্দে মাতেন
তিনি। ক্রিজে থাকা তাসকিন আহমেদ ও নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে তখন আনন্দে
সামিল হতে ক্রিজে চলে আসেন নাসুম আহমেদও। এমন সুযোগ কি আর হেলায় হারানো
যায়। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজে
হারানোর স্বাদ তো আবার আসবে না!
ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে
বাজি ধরার লোকের অভাব না হলেও টি-টোয়েন্টিতে বাজি ধরার লোক খুঁজে পাওয়া
কঠিনই হবে। এই সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব বেশি নয়। বড় দলগুলোর মধ্যে
ঘরের মাঠে কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া ও
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের ইতিহাস থাকলেও সেসব জয়ে উইকেটের সুবিধাই
ছিল খানিকটা বেশি! যদিও রবিবার মিরপুরের ম্যাচটি চিরাচরিত উইকেটেই
অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখানে স্পিনারদের বাড়তি সুবিধা ছিল। শটস খেলা কিছুটা কঠিন
হলেও এতটা ছিল না যে ইংল্যান্ড ১১৭ রানে অলআউট হবে! মূলত বাংলাদেশের
বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং, বিশেষ করে অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের
ঘূর্ণিজাদু ইংলিশদের রানের চাকা আটকে রাখতে ভূমিকা রেখেছে।
ইংল্যান্ড
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। বাংলাদেশের বিপক্ষে
টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুর আগে বিগত ১০ ম্যাচের মধ্যে যাদের জয় ছিল ৯টিতেই।
সেই ইংল্যান্ডকে নাস্তানাবুদ করে স্বাগতিকরা এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ
জিতেছে। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে অন্যতম সেরা সিরিজ
হিসেবে এটি রেকর্ডবুকে জ্বলজ্বল করবে। অথচ যে ফরম্যাটে বাংলাদেশ সবচেয়ে
সফল, সেই ওয়ানডে ফরম্যাটেই তামিম ইকবালের দল জিততে পারেনি। ৩ ম্যাচের
ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হেরেছে স্বাগতিকরা। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী
স্টেডিয়ামে স্পোর্টিং উইকেটে শেষ ওয়ানডে জিতে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া
বাংলাদেশ প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও দুর্দান্ত জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখে।
৬
উইকেটের দারুণ জয়ের সুবাস নিয়েই আজ মিরপুরে খেলতে নামে সাকিব আল হাসানের
দল। অনেকটা ট্রিকি উইকেটেই রবিবারের ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। টস জিতে বোলিং
নিয়ে বাংলাদেশের শুরুটা প্রত্যাশিত হয়নি। ৬ ওভারের মধ্যে ২ উইকেট তুলে
নিলেও সফরকারীরা তুলে ফেলে ৫০ রান। যদিও ইংলিশরা বেশিক্ষণ ম্যাচের
নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রাখতে পারেনি। অষ্টম ওভারের শেষ বলে হাসান মাহমুদের
স্লোয়ারে জস বাটলার বোল্ড হতেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ।
এরপর
শুরু হয় অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের জাদু। সাকিব তাকে ছয় নম্বরে
বোলিংয়ে আনতেই একের পর এক সাফল্যে প্রতিপক্ষকে কাবু করে ছেড়েছেন। অথচ আগের
ম্যাচে একাদশে তার নামই ছিল না। ৪ ওভারে ১২ রান খরচায় ক্যারিয়ার সেরা ৪
উইকেট নিয়ে ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপের মেরুদণ্ডটাই ভেঙে দেন তিনি। সাকিব এই
ম্যাচে ৮ বোলারকে ব্যবহার করেছেন। সবাই কমবেশি প্রভাব ফেলেছেন। যার
পারফরম্যান্স নিয়ে গত কিছুদিন ধরে সমালোচনা, সেই মোস্তাফিজও আগুনে বোলিং
করেছেন। ৪ ওভারে ১৯ রান দিয়ে ১ উইকেট শিকার করেছেন এই বাঁহাতি। সাকিব ৩
ওভারে ১৩ রান দিয়ে এক উইকেট শিকার করেছেন। হাসান মাহমুদ ২ ওভারে ১০ রান
দিয়ে নিয়েছেন এক উইকেট। ২৭ রান খরচায় তাসকিনের শিকার ১ উইকেট। তাতে
বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা নির্ধারিত ২০
ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১১৭ রান করেছে।
মিরপুরের ট্রিকি উইকেটে খুব
একটা সহজ লক্ষ্য নয় ১১৮ রান। সামান্য ভুলেই বাংলাদেশ ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ
হারাতে পারতো। দুই ওপেনারও বেশিক্ষণ টেকেননি। ২৭ রানের ওপেনিং জুটির পর
তৌহিদ হৃদয় ও নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে দারুণ ব্যাটিং করছিলেন। দারুণ খেলতে
থাকা হৃদয় সামান্য ভুলে উইকেট বিলিয়ে দিতেই চাপ বাড়ে বাংলাদেশের।
লেগস্পিনার রেহান আহমেদের অফস্টাম্পের বাইরের বলটি পা বের করে পয়েন্টের ওপর
দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন হৃদয়। কিন্তু বল পয়েন্ট দাঁড়ানো ক্রিস ওকসকে ফাঁকি
দিতে পারেনি। ১৮ বলে ১৭ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এরপর সাকিব (০) ও আফিফও
(৩) দ্রুত সময়ে ফিরলে নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হয় ম্যাচের!
জয় থেকে ১৩ রান
দূরে থাকতে শেষ বিশেষজ্ঞ ব্যাটার হিসেবে আউট হন আফিফ। তবে তখনও ক্রিজে
ছিলেন তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনি মোটেও বাংলাদেশকে দিশা
হারাতে দেননি। তাসকিনকে সঙ্গে নিয়ে ক্রিস জর্ডানের পরের ওভারেই জয় নিশ্চিত
করেছেন। অথচ একটা সময় এই শান্তকেই দুয়ো শুনতে হয়েছে। নানাভাবে ট্রলের শিকার
হতে হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। এখন এই শান্তর ব্যাটেই ইতিহাস রচিত হয়েছে
মিরপুরের ২২ গজে। রবিবার এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যেতে
বড় অবদান ছিল তারই। ৪৭ বলে সর্বোচ্চ ৪৬ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।