সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমে-কিছু সচেতন ব্যতিক্রমী ছাড়া-কমবেশি আমরা সবাই ভালো সময়
কাটাই। এটি মানুষকে একদিকে যেমন অনেক স্বাধীনতা দিয়েছে তেমনি
সীমাবদ্ধতাগুলোকেও অনেকটাই উন্মোচিত-প্রকাশিত করেছে। তার একটি হচ্ছে
‘সহানুভূতি আদায়ের অসুখ’ যা আজকের কলাম লিখার সংক্ষিপ্ত প্রসঙ্গ।
আপনাদের
অনেকেরই মনে আছে আমাদের সমাজের হাঁটে মাঠে ঘাটে একসময় একধরণের ভিক্ষুক
পাওয়া যেতো যারা মূলত তাদের ক্ষতচিহ্ন দেখিয়ে ভিক্ষা করতো। এই দগদগে
ক্ষতচিহ্ন দেখে ভিক্ষা দেবার মানুষেরও অভাব ছিলোনা আমাদের সমাজে। সমাজ
অনুযায়ী ভিক্ষুকও তৈরী হয়। এই ভিক্ষুকরা কিন্তু কোন চিকিৎসা-সেবা নিতোনা বা
ক্ষত সাড়াবার অন্যের প্রচেষ্টাকেও প্রত্যাখ্যান করতো। কারণ এই ক্ষত তাদের
সম্পদ এবং উপার্জনের মাধ্যম। বরং এরা ক্ষত আরো দগদগে করতে বা বাড়াতে চাইতো।
এই ভিক্ষুকদের বাস্তব রূপ কমলেও এরা ভিন্নরূপে আবার আমাদের কাছে এসেছে।
এখন
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই মূলত এই ভিক্ষুকসম মানুষ দেখা যায়। দুঃখ-অভিযোগ
প্রচার হচ্ছে এদের ক্ষত। আর উপার্জন হচ্ছে মানুষের সহানুভূতি-সমর্থন আদায়।
এরা আবার দুই গোত্রীয়। বাস্তব ও কাল্পনিক। পুরুষ ও মহিলা। বাস্তবরা সেই
ভিক্ষুকদের মতন দিবে দুর্ঘটনার ছবি, রক্তাক্ত ক্ষত-ইমেজ, কারো পায়ে
ব্যান্ডেজ বাঁধা এবং তা ঝোলানো, খাটে কারো নিরীহ স্যালাইন ঝুলছে বা
হসপিটালের বেডে শুয়ে থাকা করুন এক দৃশ্য। আর যাদের এইসব নেই তারা হলেন
দুঃখ-অভিযোগ-হতাশার প্রচারক। ওদের দুঃখের শেষ নেই-এটি অনিশেষ। এদের সকল
অভিযোগ অন্যের বিরুদ্ধে। নিজে ভালো মানুষ ফেরেশতা কিন্তু অন্য কেউ-কারা
হয়তোবা শয়তান যে কিনা তার জীবনকে শেষ করে দিয়েছে। এবং ভবিষ্যতেও দিবে। আমি
এমন মানুষও পেয়েছি যিনি বলেছেন তিনি যে গাছে ফুল ফুটিয়ে এতদিন পূঁজা দিতে
পারেনি তার জন্যেও নাকি এক ভয়ঙ্কর মানুষ দায়ী। মানে এই দেউলিয়ারা তাদের
জীবনের সকল ব্যর্থতা এবং না-পারাগুলোকে অন্যের উপর কোন না কোনভাবে চাপিয়ে
দিবে এবং নিজেরা একইরকম অযোগ্য থেকে যাওয়াকে বৈধ রাখবে। কি ভয়ংকর আত্মঘাতী
কৌশলরে বাবা! এবং এই দুঃখের প্রচারক মহিলা হলেতো কথাই নেই, একঝাঁক রাতজাগা
পুরুষ এদের শান্তনা দিতে (পড়ুন শিকার করতে) এগিয়ে আসবে।
সম্প্রতি এই
মানুষদের আমার এক অনুজ বন্ধু শখ করে নাম দিয়েছেন ‘দুঃখের কান্ডারি’ বা
‘দুঃখের ফেরিওয়ালা’! এটি স্যাটায়ারধর্মী অভিধা বটেই। আমার কিন্তু ভিন্ন এক
পর্যবেক্ষণ আছে। এই কান্ডারীদের কাছে গেলে কিন্তু আপনি ভিন্ন দৃশ্য দেখবেন।
দেখবেন দুঃখবাদী-অভিযোগবর্ষী একটা স্ট্যাটাস দেয়ার পরই এরা কেউ পান
চিবুচ্ছে বা ইলিশ মাছ দিয়ে তৃপ্তিনিয়ে খাবার খাচ্ছে। তারপর ডেজার্ট খেয়ে
উঁকি দিয়ে দেখছে তাঁর দুঃখ-পোস্টে কতজন অংশ নিলো। এরা বাস্তবে দুঃখিত নয়
মোটেই। দুঃখের অভিনয়শিল্পী। এরা মূলত অন্যকে দুঃখ দিয়ে নিজে সুখী থাকে। এটি
সম্পূর্ণত এক বিকারগ্রস্থতা এবং ভয়াবহ একটি মানসিক রোগ।
সমস্যা হলো
এইসব মানসিক বিকারগ্রস্থরা আমাদেরই মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমকে এরা ক্লান্ত করছে। অন্যকে বিভ্রান্ত রাখছে। পান চিবুতে চিবুতে বা
ভুরি ভোজন করে বা অফিসে কাজের ফাঁকে দৈনন্দিন একটু দুঃখ-অভিযোগ চর্চাও
করছে। এরা অচিহ্নিত মানসিক রোগী যারা চিকিৎসাহীন হয়ে বিপদজনিকভাবে আপনার
আমার বাস্তব ও প্লাটুনিক বন্ধু হয়ে আছে। এদের মানসিক স্বাস্থ্য খুবই নাজুক
এবং সবার চিকিৎসা প্রয়োজন।
সাবধান থাকুন। প্লাটুনিক (মানসিক রোগী) এক সামাজিক বন্ধুকে জীবনের বাস্তব বন্ধু বানাবার আগে সহস্রবার ভাবুন...