আরব অধ্যুষিত মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলের দখলীকৃত ফিলিস্তিনের বিভিন্ন অবরুদ্ধ অঞ্চলে প্রায় নিত্যদিনই এখন গুলি করে নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত নেই, আর বিচারের তো প্রশ্নই ওঠে না। কারণ ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রশ্নে তার সেনাবাহিনী সব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিম ইউরোপীয়দের বিভিন্ন সামরিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থনে বহাল তবিয়তে টিকে রয়েছে ইহুদিবাদী ইসরায়েল। সাবেক ফিলিস্তিন অর্থাৎ ১৯৪৮-পূর্ববর্তী এই আরব ভূখণ্ডে দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন নিয়ে জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত থাকলেও ৫৭ সদস্যবিশিষ্ট অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনভুক্ত (ওআইসি) আরব দেশগুলোর মধ্যে অনৈক্য ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অভাবে এই বিষয়টি কোনোভাবেই সামনে এগোতে পারছে না। ফিলিস্তিনের মুক্তি কিংবা স্বাধীনতার ব্যাপারে ২২ সদস্যবিশিষ্ট আরব লীগও তেমন কোনো অর্থবহ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সেই সুযোগে ইহুদিবাদী ইসরায়েল ক্রমে ক্রমে তাদের দখলকৃত ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর এবং এমনকি পূর্ব জেরুজালেমেও বেআইনি বসতি নির্মাণের মাধ্যমে গ্রাস করে নিচ্ছে সব কিছু। পূর্বপুরুষদের ভিটামাটি থেকে উচ্ছেদ করছে ফিলিস্তিনিদের। এ ক্ষেত্রে যেমন কোনো বলিষ্ঠ ভূমিকা নিচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র, তেমনি নিরুপায় হয়ে বসে রয়েছে জাতিসংঘও। ইসরায়েলের লেবার পার্টির ইহুদিবাদী নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সাময়িক বিরতির পর সম্প্রতি আবার ক্ষমতায় ফিরে এলে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতন, নিষ্পেষণ ও হত্যাকাণ্ডের পরিমাণ আরো বেড়ে গেছে। কারণ কট্টর ইহুদিবাদীদের সমর্থনে ইসরায়েলের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার জন্য এটিই নেতানিয়াহুর অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। এ অবস্থায় যথারীতি আগের মতোই মুসলিম বিশ্ব যেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হচ্ছে, তেমনি জাতিসংঘও দু-একটি বিবৃতির মাধ্যমেই নিজের দায়দায়িত্ব সীমিত রাখছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের আরব ও অনারবদের বর্তমানে সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হলেও ফিলিস্তিনের মুক্তির প্রশ্নে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে পারছে না। বরং তারা গোপনে ও প্রকাশ্যে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের সামরিক ও ব্যাবসায়িক সম্পর্ক জোরদার করার ব্যাপারে আরো সক্রিয় হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ইতিহাসের শিক্ষার আলোকে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের ওপর কতটুকু নির্ভর করতে পারে তারা? এই প্রশ্ন মধ্যপ্রাচ্যসহ সর্বত্রই এখন এক নতুন আলোচনার সূত্রপাত করেছে।
অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখলদার সৈন্য-সামন্ত ও ইহুদিবাদী নেতাদের দৌরাত্ম্য এখন বাড়াবাড়ির সব সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। গত বছরের ১১ মে পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে এলাকাবাসীর অবরোধ-বিক্ষোভের সময় প্রেসভেস্ট পরিহিত অবস্থায় আলজাজিরা টিভির কর্তব্যরত সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে গুলি করে হত্যা করেছে দখলদার বাহিনী। সেই ঘটনায় সমগ্র বিশ্ব কেঁপে উঠলেও বিচার পায়নি সাংবাদিক শিরিনের পরিবার। শেষ পর্যন্ত তারা পর পর দুটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ নিয়ে হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে গেলেও এখন পর্যন্ত কিছুই হয়নি ইহুদিবাদীদের। গণতন্ত্রের প্রহরী ও মুক্তবিশ্বের অভিভাবক যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে মুখ খুলতেও নারাজ। সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমও ইহুদিবাদীদের জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে তেমন কোনো প্রতিবাদবাক্যও উচ্চারণ করেনি, অথচ মৃত্যুর আগে দীর্ঘ ২৫ বছর শিরিন আলজাজিরা টিভির সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন এবং তিনি ছিলেন একজন মার্কিন নাগরিক ও ধর্মীয় দিক থেকে খ্রিস্টান। শিরিন হত্যা নিয়ে বিশ্বব্যাপী তোলপাড় হলে অনেকে ভেবেছিলেন এবার বুঝি ইহুদিবাদী নরপিশাচদের কিছুটা হুঁশ ফিরে আসবে, কিন্তু তা হয়নি। রাজনৈতিক ক্ষমতায় ইহুদিবাদী নেতানিয়াহু ফিরে আসার পর ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসন ও হত্যাকাণ্ডের পরিমাণ আরো উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে গেছে। জেরুজালেমে নিযুক্ত জাতিসংঘের দূত ওয়েনেসল্যান্ড বিশ্বকে সতর্ক করে দিয়ে সম্প্রতি বলেছেন, ইসরায়েল এবং অধিকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চলগুলোর মধ্যে বাড়তে থাকা সহিংসতা পরিস্থিতিকে এখন ‘খাদের কিনারায়’ নিয়ে গেছে। তিনি বলেছেন, গত এক মাসে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে সহিংসতায় ৩৫ জনের বেশি স্থানীয় আরব বাসিন্দা নিহত হয়েছে। এবং এই সংকট দিন দিনই আরো বেড়ে চলেছে। ওয়েনেসল্যান্ড হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলে যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক, আর রামাল্লায় যে কর্তৃপক্ষই অধিষ্ঠিত থাকুক, এখন এই দুঃসহ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য বলিষ্ঠ কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন। নতুবা এই অঞ্চল এক চরমতম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। কারণ ইহুদিবাদী রাজনীতিকরা ইসরায়েলে যতই খড়্গহস্ত হচ্ছে, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ততই জনসমর্থন হারিয়ে দুর্বল হচ্ছে।
এই দীর্ঘদিনের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ইরান, সৌদি আরব ও তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করার নিমিত্তে যতটা প্রতিযোগিতামূলক হচ্ছে, সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি ততটাই সহনশীল ও কৌশলী ভূমিকা পালন করছে। এই অবস্থায় একমাত্র সোচ্চার হচ্ছে তুলনামূলকভাবে ছোট দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সম্প্রতি ইহুদিবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবাদ করে যাচ্ছে এবং এই অবস্থার একটি আশু সমাধান দাবি করে যাচ্ছে, যা হতে হবে টেকসই এবং ন্যায়সংগত। গত ৩১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নিযুক্ত ইসলামী সংযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্যভুক্ত সাতটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাৎকারে মিলিত হয়েছিলেন। তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সাক্ষাৎকারের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিলিস্তিন সমস্যার আশু সমাধানের জন্য আরব দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি বলিষ্ঠ উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। সেখানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আলজেরিয়া, ফিলিস্তিন ও মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূতরা। ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনকারী বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের শোষিত, বঞ্চিত ও নিষ্পেষিত জনগণের মুক্তিসংগ্রামে সমর্থনদানকারী একটি সংগ্রামী দেশ। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব, ইরান কিংবা তুরস্কের প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিংবা প্রভাব বিস্তারের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মানুষের মুক্তি কিংবা স্বাধীনতা অর্জন নিশ্চিত করা। সেই কারণে ফিলিস্তিনের সার্বিক মুক্তির প্রশ্নে বিশ্বের মুক্তিকামী সংগ্রামী মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চায় একটি অত্যন্ত সময়োচিত ভূমিকা কিংবা উদ্যোগ, যা ফলপ্রসূ হতে পারে।
ফিলিস্তিনের মুক্তির প্রশ্নে আরববিশ্ব এবং সর্বোপরি বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ বাংলাদেশের কাছে এই মুহূর্তে একটি বলিষ্ঠ উদ্যোগ দেখতে চায়, যা সব ধরনের কায়েমি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে ফিলিস্তিনবাসীর দীর্ঘদিনের শোষণ-শাসনের অবসান ঘটাতে সক্ষম হবে। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইহুদিবাদী ইসরায়েল একতরফাভাবে তাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ফিলিস্তিনের আরব ভূখণ্ডে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ১৯১৭ সালে বেলফোর ঘোষণা নামে যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে, তা থেকে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণা পর্যন্ত তিন দশকে রাশিয়া, পূর্ব ইউরোপ ও জার্মানি থেকে অগণিত ইহুদি ফিলিস্তিনে স্থানান্তরিত হয়েছিল অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে। ইসরায়েলের একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা ফিলিস্তিনের আরব ভূখণ্ড রক্ষার নিমিত্তে মধ্যপ্রাচ্যে ডেকে আনে অসংখ্য সংঘর্ষ, সংঘাত এবং সশস্ত্র যুদ্ধবিগ্রহ। ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের এক অঘোষিত একতরফা যুদ্ধে ইসরায়েল দখল করে নেয় গাজা উপত্যকাসহ ফিলিস্তিনের সমগ্র ভূখণ্ড। তখন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন হামলায় প্রাণ হারায় লক্ষাধিক ফিলিস্তিনিসহ আরব বাসিন্দারা। নিজেদের বাস্তুভিটা হারিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনি আরব বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।
অসংখ্য সংঘাত, সংঘর্ষ ও যুদ্ধবিগ্রহের পর ১৯৯৩ সালের ২০ আগস্ট নরওয়ের অসলোতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত নয়, তবে ফিলিস্তিনের স্বায়ত্তশাসন ও একটি জাতীয় প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ (পিএনএ) গঠনের জন্য একটি অন্তর্র্বতীকালীন নীতি ঘোষণা করে। সেই ঘোষণাই ১৯৯৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত ও ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিনের উপস্থিতিতে স্বাক্ষর করেছিলেন ফিলিস্তিনের পক্ষে মাহমুদ আব্বাস এবং ইসরায়েলের পক্ষে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ। কথা ছিল, ১৯৯৬ সালের মে মাসের মধ্যে বিবদমান সমস্যা এবং ফিলিস্তিনের মুক্তির লক্ষ্যে দুই পক্ষ একটি সমাধানে পৌঁছবে।
১৯৬৭ সালে সংঘটিত যুদ্ধে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর, গাজা ও পূর্ব জেরুজালেম দখল করার আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে জাতিসংঘের সুস্পষ্ট প্রস্তাব রয়েছে। আরব ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ফিরে আসার অধিকার, পূর্ব জেরুজালেমের অবস্থান এবং অধিকৃত এলাকায় ইহুদিবাদীদের বসতি স্থাপনসহ সৃষ্ট বিভিন্ন জটিল সমস্যা নিরসনে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়। অসলো চুক্তির বাইরে এই ইস্যুগুলোকে রাখা হলেও সেগুলো সমাধানের জন্য তিন বছর সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। ২০০৯ সালে ইসরায়েলের ক্ষমতায় আসা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তখন বলেন, ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধান করতে হলে তাঁর সরকারের সঙ্গে নতুন চুক্তি সই করতে হবে। পরে বিভিন্ন অজুহাতে এবং মতলববাজি কায়দায় সেই পথ থেকেও সরে দাঁড়ান নেতানিয়াহু। ২০০৪ সালের নভেম্বরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জার্মানির এক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন অবিসংবাদিত ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত। পরে অভিযোগ ওঠে যে তাঁকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি নেতা কিংবা সংগ্রামীদের এভাবেই বিষ প্রয়োগ কিংবা গুলি করে হত্যা করা হয়েছে গাজা কিংবা পশ্চিম তীরের অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে। ইহুদিবাদী ইসরায়েলিদের ষড়যন্ত্র ও বিভিন্ন নীলনকশার কারণে তাই আজও ঝুলে রয়েছে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের মুক্তির প্রশ্নটি। আর তার পেছনে মদদ জুগিয়ে যাচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপীয়রা।
যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন কিংবা বড়দিন (ক্রিসমাস) উপলক্ষে একদল সাংবাদিকের সঙ্গে আমিও ১৯৭৭ সালে লন্ডন থেকে আম্মান হয়ে ফিলিস্তিনের রামাল্লায় গিয়েছিলাম। সেখানে ভ্রমণের জন্য আমাদের একটি বিশেষ ট্রাভেল ডকুমেন্ট দেওয়া হয়েছিল। আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল যিশুখ্রিস্টের জন্মস্থান বেথেলহেম ও পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত ‘ডোম অব দ্য রক’ ও মসজিদুল আকসা প্রাঙ্গণ সরেজমিন ঘুরেফিরে দেখা। এরই অংশ হিসেবে গিয়েছিলাম বেথেলহেমে। সেখানে তখন প্রভু যিশুর জন্মদিন পালনের উদ্যোগ চলছে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রধান ইয়াসির আরাফাত। সেই অনুষ্ঠানে আরাফাত বলেছিলেন, প্রভু যিশুর জন্ম হয়েছে ফিলিস্তিনে, সে হিসেবে তিনি ছিলেন একজন ফিলিস্তিনি। তিনি একজন নবী ছিলেন। তাঁকে একটি বিশেষ চক্র বা গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করে হত্যা করেছিল, কিন্তু তাঁর মতবাদকে হত্যা করতে পারেনি। তিনি (যিশু) মুসলিমদেরও একজন বিশিষ্ট নবী। সুতরাং তাঁর জন্মভূমিকে কেউ অবরুদ্ধ রাখতে পারবে না। ফিলিস্তিন একদিন মুক্ত হবেই এবং বিনাশ সাধিত হবে ষড়যন্ত্রকারীদের। আজ ষড়যন্ত্রকারীদের সব অশুভ প্রচেষ্টাকে সম্মিলিতভাবে পদদলিত করার সময় ঘনিয়ে এসেছে। এখন প্রয়োজন মুক্তিকামীদের সর্বাঙ্গীণ ঐক্যের। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, সংগ্রামের পথেই ফিলিস্তিনিদের মুক্তি কিংবা স্বাধীনতার মন্ত্রটি নিহিত রয়েছে।
লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
‘প্যালেস্টাইন এক সংগ্রামের ইতিহাস’ গ্রন্থের প্রণেতা
gaziulhkhan@gmail.com