শুক্রবার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
৭ আশ্বিন ১৪৩০
ভোক্তাদের ওপর পণ্যমূল্যের চাপ কমান
ড. শফিকুল ইসলাম
প্রকাশ: রোববার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০২ এএম |




পবিত্র রমজান মাস চলে আসছে। কিন্তু রমজানে অনেক ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এসব পণ্যের বেশিরভাগই আমদানিনির্ভর। সেখানে দেখা দিয়েছে সমস্যা। কারণ ডলার সংকট। যার কারণে ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছে না। সেজন্য কেউ কেউ মনে করছেন রমজানে প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আমরা সবাই উদ্বিগ্ন। যেভাবে প্রতিদিন পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তা সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলে দিচ্ছে। সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে তার পরও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। জীবনযাত্রায় আমাদের নানা জিনিসের প্রয়োজন হয়, এর মধ্যে চাল, তেল, পেঁয়াজ অন্যতম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে তেল, মসুর ডাল, পেঁয়াজ , ছোলা এবং খেজুরের চাহিদা অনেকগুণ বাড়বে। যেমন ভোজ্যতেলের চাহিদা দেড় লাখ টন, যেখানে রমজানে এই চাহিদা গিয়ে দাঁড়ায় তিন লাখ টনে। একইভাবে চিনির মাসিক চাহিদা দেড় লাখ টন থেকে বেড়ে তিন লাখ টনে গিয়ে দাঁড়ায় এবং খেজুরের চাহিদা ৫ হাজার টন থেকে বেড়ে ৫০ হাজার টনে পৌঁছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পণ্যর দাম বৃদ্ধি পাবে। ফলে ক্রেতাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। এজন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যাতে রমজানে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে।
অনেক সময় পর্যাপ্ত উৎপাদনের পরও বেড়েছিল কিছু পণ্যের দাম। যেমন, আলুর দাম। অর্থাৎ আলুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো কারণ ছিল না। এর মানে সিন্ডিকেট করে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে ছিল। তাই বাজার মনিটরিং বাড়াতে হবে। অন্যথায় সাধারণ ভোক্তারা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। ভোক্তার ওপর চাপ কমাতে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যে শুল্ক কমানোর সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। আরও কি উপায় আছে সেই বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে। যেমন সরকার কর্তৃক নির্দেশনা আসা উচিত যাতে কোনো ক্রেতা একসঙ্গে এক মাস বা তার বেশি সময়ের জন্য পণ্য না কিনতে পারে। ডলার সংকটের কারণে আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। বিভিন্ন ব্যাংক শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি খুলতে পারছে না ডলার সংকটের কারণে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রমজানের প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য আমদানি। আমদানির মূল্য ডলারে পরিশোধ করতে না পারায় বন্দরে পণ্য খালাস আটকে যাচ্ছে। সময়মতো পণ্য খালাস করতে না পারায় জাহাজ ভাড়ায় বাড়তি অর্থ গুনতে হয়। যা পণ্যের দামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভোক্তার ঘাড়েই পড়বে বলে অনেকেই মনে করে। তাই কীভাবে ডলারের সরবরাহ বাড়ানো যায় সেই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্নআয়ের মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। কারণ পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রায় হাজার টাকা। যা অতীতে ছিল ৫১০ বা ৫৩০ টাকা। বাজারে এখনো অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকলেও রমজানে পেঁয়াজ ও তেলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে। অস্বীকার করার উপায় নেই, আমাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়েছে। করোনায় নিম্নআয়ের মানুষ যা আয় করছে, তার পুরোটাই জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদির জন্য ব্যয় করার মতো অর্থ তাদের হাতে থাকছে না। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলে থাকে। গরিব মানুষের কথা ভাবার সময় নেই তাদের। যে পণ্যের দাম একবার বাড়ে, তা আর কমে না। এটাই এখন স্বাভাবিক কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা একান্ত কাম্য। অন্যথায়, ভবিষ্যতে আরও খারাপ পরিস্থিতি আসতে পারে। তাই সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বেকায়দায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অত্যধিক দাম ও ক্রয়ক্ষমতার বাইরে হওয়ায় কিছু পরিবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী কিনতে পারছেন না। তবে এ পরিস্থিতির জন্য মনে হচ্ছে নিয়মিত বাজার মনিটরিং না হওয়া এবং ব্যবসায়ীদের অযৌক্তিক মুনাফা নেওয়ার বিষয়টিকে দায়ী করেছেন সাধারণ ভোক্তারা। এ ক্ষেত্রে প্রতি জেলার প্রতিটি বাজারে প্রশাসনিক নজরদারি বাড়ানো উচিত।
সরকারের পক্ষ থেকে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কিন্তু বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে নেই। আর নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়িত্বে থাকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের তেমন কোনো তৎপরতাও নেই। মাঝে মাঝে দেখা যায়। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নৈতিক দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। অনেক সময় অভিযান চালিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হলে পণ্যর দাম বৃদ্ধি এবং ভেজাল পণ্যের সংখ্যা কমছে না। সরকারের কার্যক্রম আরও বেশি গতিশীল ও তৎপর হতে হবে।
অতীত সময় রমজানের শুরুতে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কাঁঠালবাগান বাজার ও হাতিরপুল বাজারে গবেষণা করলে দেখা যাবে, কীভাবে রমজানে পণ্যের দামে গরমিল দেখা যায়। রমজানের শুরুর এক সপ্তাহ আগে ও পরে দামের পার্থক্য বেশ।
রমজান শুরু হলেই আমাদের দেশে পণ্যের দাম বাড়ে, এটি নতুন নয়। তবে শুনেছি অন্য দেশে বিভিন্ন উৎসবে দাম কমে। পবিত্র রমজান উপলক্ষে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রমজানের সব পণ্য এবং পবিত্র বড়দিন উপলক্ষে ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে পণ্য বাজারে বিশাল মূল্য হ্রাস করে। কিন্তু আমাদের দেশে পরিস্থিতি পুরোপুরি উল্টো। রমজান উৎসব এলেই আমাদের দেশের খুচরা থেকে মাঝারি ও বড় বড় ব্যবসায়ীরা সাধারণ ভোক্তাদের পকেট কাটার উৎসবে মেতে ওঠে। ফলে জনগণের নাভিশ্বাস ওঠে। এই দাম বৃদ্ধির সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থার তদারকি নিয়মিত করতে হবে।’
কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এই অবস্থায় রমজানকে ঘিরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি বন্ধ থাকবে না। রমজান এলেই জিনিসের দাম বৃদ্ধিতে হতাশ হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। বিক্রেতারা নানা অজুহাত বা সংকট দেখিয়ে থাকে। কিন্তু এই অজুহাত থেকে কীভাবে বের হওয়া যায় তার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। সরকারকে সেই বিষয়ে বেশি উদ্যোগী হতে হবে। রমজান আসার আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনেক বেশি কাজ করতে হবে যাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম না বাড়াতে পারে। রমজানে দেশের সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নির্ধারণ করে একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা প্রদানে সরকার ও ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছাই যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে মনে করছি।
ক্রেতা ও ভোক্তাদের প্রয়োজনীয় সচেতনতা ও যথেষ্ট অভিজ্ঞতা না থাকায় সহজেই অসাধু ব্যবসায়ীরা এভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে অনেক লাভ করে নিয়ে যায়। যা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। অধিকন্তু অধিকাংশ ভোক্তা আসল-নকল চিহ্নিত করে সঠিক পণ্য পছন্দ করতে পারে না। ফলে তারা অনেক সময় বিপাকে পড়ে যায়। তাই ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং অনেক প্রচার করতে হবে যাতে সাধারণ নাগরিক অবগত থাকতে পারে তাদের কীভাবে সঠিক পণ্য কিনতে হবে। কোনো অন্যায় দেখলে সেখানে ক্রেতাদের প্রতিবাদ করতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত যে কোনো নীতিনির্ধারণীমূলক ক্ষেত্রে ভোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে যাতে তারা যেন তাদের অধিকারের কথা তুলে ধরতে পারে।
নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ তাদের আকাশছোঁয়া দামের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে রাজধানীতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকে ভিড় করবে। অতীতে পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুরু করে টিসিবি। এ বছর যেন টিসিবি এই উদ্যোগ গ্রহণ করে। এতে সাধারণ ভোক্তারা অনেক উপকৃত হবে। এটা অবশ্যই প্রশংসনীয় উদ্যোগ হবে। প্রতিটি সিটি করপোরেশনের আওতাধীন প্রতিটি ওয়ার্ডে ডিলার ও ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি দেওয়া পণ্য বিক্রি করতে হবে। এভাবে সরকারের এগিয়ে আসতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্রেতাদের স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলের উচিত সরকারকে সঠিক পরামর্শ দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়া।
ড. শফিকুল ইসলাম : সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ












সর্বশেষ সংবাদ
ফয়জুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৫০ বছর পূর্তিতে বর্ণাঢ্য আয়োজন কুমিল্লায়
কুমিল্লা শহরকে জঞ্জালে পরিণত করা হয়েছে
‘ভোগান্তি এড়াতে’ কুমিল্লা শহরে ঢুকবে না বিএনপির রোডমার্চ
কুমিল্লায় আরো দুই ডায়গনস্টিক সেন্টার বন্ধ
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ দেশ উপহার দিতে আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লায় দুই প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ ঘোষণা; সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা
কুমিল্লায় পিস্তলসহ সন্ত্রাসী বুলেট গ্রেফতার
‘ভোগান্তি এড়াতে’ কুমিল্লা শহরে ঢুকবে না বিএনপির রোডমার্চ
কুমিল্লা শহরকে জঞ্জালে পরিণত করা হয়েছে
প্রফেসর মোঃ মতিউর রহমানের ইন্তেকাল
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft