মঙ্গলবার ২১ মার্চ ২০২৩
৭ চৈত্র ১৪২৯
চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা
তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি
শাহীন আলম, দেবিদ্বার
প্রকাশ: সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:৪৫ এএম |

 চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা

কখনো টোকেনে মাসিক চাঁদা আদায়, কখনো বা চুক্তিভিত্তিক নিযুক্ত দালালের মাধ্যমে নির্ধারিত চাঁদা আদায়, এমনই বেপরোয়া চাঁদা আদায়ের অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন দেবিদ্বার উপজেলা সদর অতিক্রম করে মহাসড়ক দিয়ে চলমান যানবাহনের মালিক, চালক ও শ্রমিকরা। চাঁদা আদায়ে অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছেন দেবিদ্বার এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা। এছাড়া গাড়ি আটকের পর রেকার বিলের নাম করে প্রতি গাড়ি থেকে ৮/১০ হাজার টাকা নেন তিনি।
কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে চলাচল করা পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা হয়রানিমূলক মামলা থেকে রেহাই পেতে ১০/১৫ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে মাসোহারা দিয়ে সড়কে গাড়ি চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। গাড়ি প্রতি মাসিক মাসোহারা, টোকেন বাণিজ্য, টাকা না পেলে মামলার ভয় দেখিয়ে দ্বিগুণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে কুমিল্লার পুলিশ সুপারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। এসব অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. আবদুল মান্নান।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে চালকদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছেন ট্রাফিক পুলিশের টিআই সুমন জাহিদ লোভেল। এ সড়কে চলাচল করা অন্তত ৫০ ধরণের বাস, মিনিবাস, আন্ত:জেলা পরিবহন, সিএনজি স্টেশন, লরি, গাছ ও গরু পরিবহণের ট্রাক, নৈশ কোচ থেকে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৬ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন টিআই সুমন জাহিদ লোভেল। তিনি সুগন্ধা পরিবহন, নিউ জনতা, প্রান্তিক, তিশা গোল্ডেন, সাগরিকা, বিভিন্ন আন্ত: জেলা ট্রান্সপোর্ট পরিবহন, লেগুনা, সিএনজি স্টেশন, সাব ড্রাম ট্রাক্টর, পিকআপ, লরি, দুরপাল্লার নৈশ কোচসহ পরিবহন মালিক-শ্রমিক থেকে প্রতি মাসে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ পরিবহনগুলোর আলাদা আলাদা সমন্বয়কের মাধ্যমে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে নিদিষ্ট হারের টাকা পৌছে দেওয়া হয় তার হাতে। কেউ সময়মত টাকা পৌছাতে ব্যর্থ হলে সড়কে গাড়ি আটক রেখে মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দ্বিগুণ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়াও টিআই লোভেল রেকার বিলের নামে সিএনজি, পিকআপসহ অন্যান্য যানবাহন থেকে ৮ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়াও কাগজপত্রহীন প্রতি ড্রাম ট্রাক্টর থেকে ১৫০০০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে টিআই লোভেল।  
দেবিদ্বারের সিএনজি স্টেশনের কেরানি মাসুম বলেন, দৈনিক ২০০ টাকা করে ট্রাফিককে চাঁদা দিতে হয়। এছাড়াও প্রতি মাসে ১২ হাজার টাকা নেন টিআই লোভেল। কোন মাসে টাকা দিতে দেরি হলে গাড়ি ধরে থানায় নিয়ে সাথে সাথে মামলা দেন। সিএনজি চালকরা গরিব মানুষ এদের কাছ থেকে অল্প অল্প করে ১২ হাজার টাকা এক সাথে জমাতে মাঝে মাঝে কয়েকদিন দেরি হয়,  এরপরও তাঁরা দালাল দ্বারা ফোনের ওপর ফোন করে টাকা নিয়ে থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাঠের ট্রাক ও নিউ জনতার একাধিক মালিক ও চালক জানান, ব্যাংক লোন নিয়ে রাস্তায় নতুন গাড়ি নামিয়েও শান্তি নাই, টিআইকে মাসিক মাসোয়ারা না দিলে নানা অজুহাতে গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন নির্ধারিত টোকেনের চলা গাড়ি ছাড়াও অন্য জেলা থেকে আসা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান রাস্তায় দাঁড় করিয়ে কাগজপত্র তল্লাশীর নামে টাকা আদায় করে থাকেন। কাঠের গাড়ি থেকে নেয়া হয় গাড়ি প্রতি দুই/তিন হাজার টাকা।   
কাঠের ট্রাক পরিবহনে সংশ্লিষ্ট কুমিল্লা মুমিন বলেন, কাঠের গাড়ি মূলত রাতে চলাচল করে, তারা রাতেই গাড়িগুলো আটকে রাখে, আমরা দেশে বৈধ ব্যবসা করি, টিআই ও তাঁর লোকেরা অযথা চেক করার নামে টাকা দাবি ও না হয় মামলা দেয়।   
নিউ সুগন্ধার মালিক বিপ্লব বলেন, কয়েকমাস আগে নতুন গাড়ি নামানো হয়েছে, গাড়ির কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও এর পর্যন্ত ৪টা গাড়ির মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা ব্যাংক লোন দিয়ে গাড়ি নামাইছি। এভাবে মামলা দিলে আমাদের পথে বসতে হবে। আতংকে থাকতে হয় কখন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়।    
সিএনজি চালক রাজামেহারের আবদুল কাদের বলেন, কোন কিছু না বলেই জোর করে আমার সিএনজি থানায় আসে। ৫হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে আমি দুই হাজার টাকা দিতে রাজি হই। তিনি রাগে কোন কারণ ছাড়াই ১০ হাজার টাকার মামলা দিয়ে দেয়। আমি দিন আনি দিন খাই, ১০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।   
কাভার্ডভ্যান চালক সিলেটের আ: শুকুর আলী বলেন, রাস্তায় গাড়ি ধরে থানায় নিয়ে যায়। রেকার বিল নামে আমার কাছে ১০ হাজার দাবি করছে টিআই লোভেল। পরে আমি ৭ হাজার টাকা দেওয়ায় আমাকে একটা কাগজ দিয়ে ছেড়ে দেয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বারেরা গ্রামের একজন সিএনজি চালক বলেন, গত সপ্তাহে সিএনজির কাগজ তল্লাশীর নামে হাই স্কুল মাঠের নিকট থেকে ট্রাফিক কনষ্টেবলের মাধ্যমে তার গাড়ি টিআই লোভেলের নিকট নেয়ার পর মামলার হুমকী দেয়া হয়, পরে বিকাশে বাড়ি থেকে তিন হাজার টাকা এনে দিলে গাড়ি ফেরত দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ট্রাফিকের টিআই সুমন জাহিদ লোভেল বলেন, আমি কারও কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেই না, আমি এখন দাউদকান্দিতে আছি, রাতে দেবিদ্বার আসব, আপনার সাথে সরাসরি কথা বলব।    
কুমিল্লা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, কিছু প্রমাণ আমাকে পাঠান, আমি তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।  
 















সর্বশেষ সংবাদ
চৌদ্দগ্রামকে ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী
রমজানে ছুটি মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ, প্রাথমিকে ক্লাস ১৫ দিন
কুবিতে অনুষ্ঠিত হলো ম্যাথ অলিম্পিয়াড
সোনার দাম কমলো
বিমানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হলেন সাকিব
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সীমানা পরিবর্তনের আবেদন সবচেয়ে বেশি কুমিল্লায়
কমলো হজের খরচ
রমজানে ছুটি মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ, প্রাথমিকে ক্লাস ১৫ দিন
বাংলাদেশে ১৪ ঘণ্টা, এবার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় রোজা যে দেশে
একই পদ্ধতি অনুসরণে সব মসজিদে তারাবিহ পড়ার আহ্বান
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২ | Developed By: i2soft