
শান্তিরঞ্জন ভৌমিক ||
তর্কটা যেখান বা যেদিন থেকে শুরু।....
১৯৭৫খ্রি: ১৫ আগস্ট ভোরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। দেশবাসি বাংলাদেশ বেতারের ঘোষণায় জানতে পারে, শুনতে পায়। হত্যাকাণ্ডের খবর পরিবেশন করেছিল মেজর (অব:) ডালিম।
এদিকে কর্নেল (অব:) খন্দকার আবদুর রশীদ দু-গাড়ি সৈনিকসহ খন্দকার মোস্তাক আহমদের আগমসিলেনের (ঢাকা) বাড়িতে সকালে পৌঁছে সরাসরি দোতলায় চলে যান। খন্দকার মোস্তাক ফজরের নামাজের পর একটু ঘুমান, সেদিন কেন জানি অজানা অস্থিরতায় বিছানায় গেলেন না। পায়চারি করার মতো বারান্দায় তেমন ফাঁকা জায়গা নেই, ঘরের মধ্যে একটি দোলনা টাঙিয়ে রেখেছেন, তাতে বসে দোল খান। ঠিক সেসময় কর্নেল খন্দকার আবদুর রশীদ ঘরে ঢুকলেন। সামরিক লোকদের দেখে খন্দকার মোস্তাক কাঁপতে কাঁপতে দোলনা থেকে মাটিতে পড়ে গেলেন। সামরিক বাহিনীর লোকেরা তাঁকে গান-স্যালুট দিল। কর্নেল রশীদ কাছে গিয়ে হাতে ধরে দাঁড় করিয়ে বললেন, ‘স্যার, শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে। আপনি এখন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট।’ কথাগুলো খন্দকার মোস্তাক শুনতে পেলো কীনা বুঝা গেল না। কর্নেল রশীদ বলল, ‘এখনই রেডিও স্টেশনে যেতে হবে, জাতির উদ্দেশ্যে আপনার ভাষণ দিতে হবে। আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছি।’
খন্দকার মোস্তাক কাঁপা গলায় বলল, ‘আমি বিশ্বাস করি না।’ ‘কি বিশ্বাস করেন না ?’ ‘শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে, তা আমি বিশ্বাস করি না, আমি নিজ চোখে না দেখে তোমাদের কথা বিশ্বাস করিনা’। বলে রাখি- কর্নেল রশীদ খন্দকার মোস্তাকের আত্মীয়। খন্দকার মোস্তাক সাফারী পরিধান করলেন, মাথায় তাঁর ঐতিহাসিক টুপি। রেডিও স্টেশনে যাওয়ার পথে বঙ্গবন্ধুর মৃতদেহ দেখিয়ে তাকে যথাস্থানে নিয়ে যাওয়া হলো।
খন্দকার মোস্তাক রেডিও স্টেশনে পৌঁছার আগেই তাহের উদ্দিন ঠাকুর প্রেসিডেন্টের ভাষণের খসড়া লিখে অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করছেন। অন্যদিকে তিনবাহিনীর প্রধানদের নিয়ে আসা হয়েছে, তাদের আত্মসমর্পণের খসড়াও প্রস্তুত।
খন্দকার মোস্তাক রেডিও স্টেশনে পৌঁছার পর তর্কটা শুরু হয়। প্রেসিডেন্ট তাঁর ভাষণে বাংলাদেশকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ না বলে ঘোষণা দিবেন এই বলে- ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ অথবা ‘মুসলিম বাংলা’। কিন্তু মেজর ডালিমসহ কতিপয় তরুণ সৈনিক তীব্র আপত্তি জানিয়ে বলল- একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, তার নাম পরিবর্তন করা যাবে না। শেষ পর্যন্ত কতিপয় সিদ্ধান্ত হয়- এখন থেকে ‘বাংলাদেশ বেতার নামের পরিবর্তনে ‘রেডিও বাংলাদেশ’, ‘জয় বাংলা’র পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ প্রেসিডেন্টের ভাষণে থাকতে হবে।
এখানে পেছনের একটি ঘটনার কথা উল্লেখের প্রাসঙ্গিক মনে করি। ব্রিগেডিয়ার (অব:) খুরশিদ উদ্দিন ছিলেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার একজন আসামী। তিনি তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন- ‘১৯৬৬ সালের দিকে জিয়াউর রহমান (পরবর্তী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি) ছিলেন যশোরে। আমাদের আন্দোলনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে তাঁর কাছে গিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন খন্দকার নাজমুল হুদা। তাঁকে (পরবর্তীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্নেল ১৯৭৫ এর ৯ নভেম্বর নিহত) পাঠিয়ে ছিলেন মোয়াজ্জেম। জিয়া তখন যশোর রেজিমেন্টের সেকেন্ড ইন কমান্ড। ক্যাপ্টেন হুদা জিয়াকে আমাদের চিন্তাভাবনার বিষয়টি জানিয়ে বলেছিলেন, ‘স্যার আপনি যদি আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন তাহলে খুবই খুশি হবো আমরা।’ জিয়াউর রহমান নাকি অত্যন্ত রেগে গিয়ে ক্যাপ্টেন হুদাকে বলেছিলেন, ‘তোমরা বড়ই গাদ্দার।’ তাতেই বুঝা যায় তৎকালীন মেজর জিয়া কতটা পাকিস্তানপন্থী ছিলেন। এ ধারাবাহিকতায় তিনি যখন ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রাক্কালে পাকিস্তানের সেনাধ্যক্ষের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে তাঁর সহযোগিতা চেয়েছিলেন এবং আশ্বাস পেয়েছিলেন।
১৯৭১ খ্রি: মুক্তিযুদ্ধকালীন কাজী জাফর আহমদের সঙ্গে একান্ত আলোচনায় জিয়াউর রহমান তাঁকে বলেছিলেন- যুদ্ধ তো (নভেম্বর ১৯৭১) শেষ হয়ে আসছে। ভারতের সহযোগতিায় হয়ত আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ করব। কিন্তু সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতা নয়। কারণ, ভারত সবসময় আমাদের উপর কর্তৃত্ব করতে চাইবে। তাই পরবর্তীতে আমাদের আবার ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে এবং তখন জয়লাভ করলেই প্রকৃত স্বাধীনতা লাভ ঘটবে। এমর্মে জিয়াউর রহমান রাজনীতি করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন। কাজী জাফর আহমদ তাঁর আত্মজীবনীতে বিস্তৃতভাবে এসব কথা লিখে গেছেন।
এসব ঘটনা পর্যালোচনা করলে স্পষ্টই বুঝা যায় জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে জড়িত। হাইকোর্টের রায়ে ফারুক, রশীদ ও মহিউদ্দিনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রয়েছে- ‘মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৫ আগস্টের আগেই মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ও খোন্দকার মোশতাক আহমদের সঙ্গে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে কর্নেল (অব:) সৈয়দ ফারুক রহমান, কর্নেল (অব:) খন্দকার আবদুর রশীদ ও মেজর (অব:) ডালিমের একাধিবার বৈঠক হয়েছে।’ কাজেই বিএনপি-র প্রতিষ্ঠাতার যদি পাকিস্তান-প্রীতি নির্মোহভাবে এরূপ থাকে, তার অনুসারীরা তো সেখান থেকে সরে আসতে পারবে না। তাদের দ্বারা সরে আসা সম্ভবও নয়। সুতরাং বিএনপির মহাসচিব যখন বলেন- ‘পাকিস্তান আমলই ভালো ছিল’ তাতে অবাক হওয়ার কোনো কারণ নেই। তারা মনেপ্রাণে পাকিস্তানপন্থী। গণতান্ত্রিকভাবে’তো ক্ষমতায় আসেনি। রাতের অন্ধকারে জাতির পিতাকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে পরে রাজনীতির ফতোয়াটা গায়ে দিয়েছে মাত্র। স্পষ্টই বুঝা যায়- বিএনপি একটি পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক দল, তারা মুক্তিযেুদ্ধের চেতনাবাহী দল নয় এবং যারা নামধারী মুক্তিযোদ্ধা এই দলে রয়েছেন, তারা মননে-আদর্শে বিশ্বাসে সে জায়গায় আর নেই। এখন যেন ভুলের মাশুল গুনছেন।
এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বাপর কিছুকথা সংক্ষেপে বলা প্রয়োজন মনে করছি। ১৯৪৭খ্রি: ১৪ আগস্ট ভারত ভাগ হলো এবং শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলো। এটা হলো নির্জলা সত্যকথা। যেহেতু পাকিস্তানের দুটি অংশ, সেজন্য পশ্চিম পাকিস্তান যত বড়ই হোক এবং কয়েকটি প্রদেশ নিয়ে গঠিত হলেও একমাত্র পূর্বপাকিস্তান (বাংলা) একটি প্রদেশ হয়েও লোকসংখ্যা, ধনসম্পত্তি, প্রাকৃতিক সুযোগ-সুবিধা ইত্যাতি অগ্রগণ্য ছিল। তাই পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানকে কলোনি বানিয়ে রাখতে চেয়েছিল। দেশভাগের পর পরই পূর্ববাংলার অধিকাংশ সচেতননাগরিক তা বুঝতে পারেন। পাকিস্তান হওয়ার পর মওলানা ভাসানী আসাম থেকে পাকিস্তানে চলে আসেন, তখন সেখানকার লোকজন আসামের মুখ্যমন্ত্রী (প্রধানমন্ত্রী) স্যার সাদুল্লাকে জিজ্ঞাসা করলেন- ‘আপনি পাকিস্তানে যাবেন না ?’ উত্তরে তিনি বলেছিলেন ‘ঙহব গড়ঁষধহধ ইযধংযধহর রং বহড়ঁময ঁহফড় চধশরংঃধহ. ও হববফ হড়ঃ মড়.’ (পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য এক মওলানা ভাসানীই যথেষ্ট, আমার যাওয়ার দরকার হবে না।) এই মওলানা ভাসানী দিল্লি গেলেন এবং নেহেরুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। প্রসঙ্গক্রমে পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতার কথা বললেন। নেহেরু বললেন- ‘ওভ রঃ পড়সবং ধং ধ চৎবংবহঃধঃরড়হ ও ডরষষ হড়ঃ ধপববঢ়ঃ রঃ. ঙহব বিংঃ ইবহমধষ রং ংঁভভরপরবহঃ ঐবধফধপযব ভড়ৎ সব.’ (পূর্ববঙ্গ উপহার হিসেবেও আসে আমি গ্রহণ করতে পারব না। কারণ, এক পশ্চিমবঙ্গই আমার জন্য যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ।) নেহেরুর বাঙালি ভীতি ছিল। তিনি সুভাষ বসু, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রমুখকে ভয় করতেন।
কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস পর্যালোচনায় নেহেরুর ইতিবাচক সমর্থন ছিল, তাও জানা যায়।
ভারতীয় কূটনৈতিক শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি ‘ভারত, মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং পাকিস্তান (অজানা তথ্য), শীর্ষক গ্রন্থে লিখেছেন-
‘১৯৬২ সালের ক্রিসমাসের দিন থেকে আমি বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের সাথে জড়িত। যখন শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে ভারতের সমর্থনের জন্য প্রথম অনুরোধ জানান।’
শশাঙ্ক এস ব্যানার্জির সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর প্রথম সাক্ষাৎ হয় দৈনিক ইত্তেফাক অফিসে। দিনটি ছিল ২৫ ডিসেম্বর ১৯৬২। ইত্তেফাক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিঞা তাঁকে একটি ছেলের মাধ্যমে গোপনে ডেকে নেন। সেখানেই তাঁদের প্রথম দেখা। এই মিটিং দু’ঘন্টা স্থায়ী হয়েছিল। সারবস্তু হলো-
‘এই মিটিং তলবের উদ্দেশ্য আমার হাতে একটি অতি গোপনীয় চিঠি দেয়া যা কূটনৈতিক ব্যাগে পুরে আমাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুর অতি গোপনীয় চিঠিটি ব্যক্তিগতভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর নামে লেখা ছিল। যেখানে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম শুরুর কথা লেখা ছিল। এভাবেই আসে পূর্বপাকিস্তানের তথা বাংলাদেশের বাংলা-ভাষী মানুষগুলোর জন্য একটি স্বাধীন-সার্বভৌমত্য রাষ্ট্র তৈরির কথা। এ ইতিহাস কিছুটা দীর্ঘ।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী চিঠির উত্তর দিয়েছিলেন। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী সচীন্দ্রলাল সিংহের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে জানিয়ে দেয়া হয়- ‘মুজিবের জন্য একটিমাত্র চ্যানেল ব্যবহার করে কাজ করাটা ভালো হবে আর তা হলো ঢাকাস্থ-ভারতীয় মিশন, আগরতলা নয়।’ জানিয়ে দেয়া হয়, সেমুহূর্তে ভারত সরাসরিভাবে বাংলাদেশকে সাহায্য করা সম্ভব নয়। কারণ, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ঠিক ঐ সময়ে স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য অনুকূল নয়। তবে নেহেরু বুঝতে পেরেছিলেন যে শেখ মুজিবুর রহমান একজন জাদুকরী গণনেতা। তাই নেহেরু চিঠিতে কিছু পরামর্শ প্রদান করেন-
১. বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন সময়-সাপেক্ষ।
২. তিনি গণতন্ত্রের কথা বলছেন তখন তার কয়েক বছর গণমানুষের মধ্যে গণতন্ত্রের ধারণা সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
৩. মুক্তির পথে অসংখ্য চড়াইউতরাই থাকবে। সে সব বাধা অতিক্রম করে রাজনৈতিক পদেক্ষেপের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারলেই নিজেকে মুক্তির যোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করতে পারবেন।
৪. সমাবেশে যদি লক্ষ লক্ষ মানুষ জমায়েত হয়ে তাঁর কথা শুনতে আসে তখনই বিশ্ব তাঁকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সত্যিকারের জননেতা বলে মেনে নেবে,
৫. তাঁর বাক্য বিন্যাসের ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিজ দলের আদর্শ ও নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতির জনপ্রিয়তা নিশ্চিতে করতে হবে।
৬. বিপুল সংখ্যক গণসমর্থন তৈরি হবার পর ভারত কৌশলগত পূর্ণাঙ্গ সমর্থন দেবার জন্য তৈরি থাকবে।
আমরা দেখেছি- বঙ্গবন্ধু ভারত প্রণীত পরামর্শগুলো মানতে রাজি হয়েছিলেন এবং লক্ষ্য অর্জনে ১৯৬৩-১৯৭১-এ সাত বছরের একটু বেশি সময় পরেই মুক্তির আন্দোলন প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছিল।
আমরা যদি অকৃতজ্ঞ না হই, আমরা যদি বেইমান না হই, আমরা যদি দেশপ্রেমিক হই, তবে মানতে হবে-স্বীকার করতে হবে- বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘদিনের অসামান্য ত্যাগ তিতিক্ষা ও সশস্ত্র লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের সুকঠিন কাজটি সম্পন্ন করেছে। এই লড়াইকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত দু:সাধ্য-কঠিন কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন করেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ‘বাংলাদেশ’ নামক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
আজ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে রাজনীতি করতে গিয়ে যখন অর্বাচীনের মতো কোনো রাজনৈতিক নেতা মনন যাপনে অকৃত্রিম সত্যকথাটি বলেন যে, পাকিস্তান আমলই ভালো ছিল, তাঁর নামের আগে কোন বিশেষণগুলো বসাতে হবে, তা ভুলে গেছি।
ছোটবেলায় বাপ-দাদারা বলত- ব্রিটিশ আমলই ভালো ছিল। তাঁরা হয়ত স্বাধীনতা ব্যাপারটি তেমনভাবে উপলব্ধি করতেননা। তবে একথা ঠিক, ব্রিটিশ নিয়েছে অনেক, দিয়েছে কম নয়। তারা শিক্ষা-নারী শিক্ষা-যোগাযোগ ব্যবস্থায় রেল-নৌবন্দর-শহর-নগর ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেছে। এগুলো তাদের স্বার্থে হলেও শেষ পর্যন্ত আমাদের সম্পদ হয়েই থেকে গেছে। পাকিস্তানীরা আমাদের কী দিয়েছে-বিএনপির মহাসচিবকে বলছি-ষাটের দশকে একটি লিপলেট বিলি করা হয়েছিল- ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন’? মনে পড়ে কি ? দেশপ্রেমিক না হোন, বেইমান হবেন না। সত্যকে আড়াল করবেন না। তাহলে আত্মপরিচয় থাকবে না।
লেখক: সাহিত্যিক, গবেষক ও সাবেক অধ্যাপক
মোবাইল: ০১৭১১-৩৪১৭৩৫