
গণমাধ্যমে
প্রায়ই নির্মাণ শ্রমিকদের মৃত্যুর খবর আসে। কেউ ১০ তলার ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে
মারা যান, কেউ বাঁশের মই থেকে পড়ে মারা যান, আবার কেউ কেউ মাথায় রড বা ইট
পড়ে মারা যান। প্রকাশিত খবরে মৃত শ্রমিকদের পরিবারের আহাজারি থাকে। গোটা
পরিবারের অসহায়ত্বের চিত্র থাকে।
কিন্তু ঠিকাদার বা ভবন মালিকদের তা
নিয়ে তেমন কোনো ভাবান্তর দেখা যায় না। তাঁদের কাছে এসব যেন অতি স্বাভাবিক
ঘটনা। কর্মক্ষেত্রে এমন মৃত্যুর জন্য আইনে যে ক্ষতিপূরণের কথা বলা হয়েছে,
সেটিও অনেক ক্ষেত্রেই নিহতের পরিবারকে দেওয়া হয় না। গতকাল কালের কণ্ঠে
প্রকাশিত প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে দরিদ্র নির্মাণ শ্রমিকদের অসহায় জীবনের
তেমনই করুণ কাহিনি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস)
তথ্য বলছে, ২০১৮ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সাড়ে চার বছরে কর্মরত
অবস্থায় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ৫৮৯ জন নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সে
হিসাবে দেশে প্রতিবছর কর্মস্থলে নিরাপত্তার অভাবে মারা যান গড়ে ১৩০ জন
শ্রমিক। বিলসের মতে, কর্মস্থলে নিরাপত্তা বেষ্টনী ও ভালো নিরাপত্তা জাল না
থাকা, দুর্বল মাচার ব্যবহার, এলোমেলোভাবে ইট, রড, বালু, সিমেন্টসহ
নির্মাণসামগ্রী রাখা, ভালো সিঁড়ি, আধুনিক যন্ত্র ও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা
না থাকা, হেলমেট, বেল্ট ও বুট ব্যবহার না করা এবং ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক
লাইনের কারণে দুর্ঘটনার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। অথচ দেশের প্রচলিত
আইনে নির্মাণ খাতের শ্রমিকদের জন্য কর্মস্থলের নিরাপত্তা বিধান, ব্যক্তিগত
সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করার কথা স্পষ্টত উল্লেখ করা
আছে। তার পরও কিছু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বা কিছু ভবন মালিক এসব ছাড়াই
শ্রমিকদের দিয়ে নির্মাণকাজ করান কিভাবে? কেন এমন অনিরাপদ নির্মাণকাজ বন্ধ
করা হয় না? কেন তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয় না? এমন অনেক
প্রশ্নই রয়েছে, যেগুলোর কোনো উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় না। শুধু নির্মাণ
শ্রমিক নয়, অনিরাপদ নির্মাণ কর্মযজ্ঞের কারণে প্রতিনিয়ত পথচারী,
দর্শনার্থীসহ অনেকেরই মৃত্যু হয়। গত ১৫ আগস্ট রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন
উড়াল সড়কের গার্ডার পড়ে গাড়িতে থাকা একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়। ওপর
থেকে ইট পড়ে পথচারীর মৃত্যুর ঘটনা তো প্রায়ই ঘটে।
অর্থনৈতিকভাবে
দেশ এগোচ্ছে। নির্মাণকাজের পরিধি অনেক বেড়েছে এবং ক্রমান্বয়ে তা বাড়তেই
থাকবে। কিন্তু নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিক এবং আশপাশে থাকা ব্যক্তিদের
জীবনের নিরাপত্তা কেন থাকবে না? এসব দেখার জন্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগ
রয়েছে। তারা কী করছে? ঠিকাদার ও নির্মাণকাজ পরিচালনাকারী ভবন মালিকদের কেন
জবাবদিহির আওতায় আনা যাচ্ছে না? আমরা চাই অবিলম্বে নির্মাণকাজের নিরাপত্তা
নিশ্চিত করা হোক এবং ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।